ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে শনিবারের টক অব দ্য সিটি এখনও সবার মুখে

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১১ এপ্রিল ২০১৬

চট্টগ্রামে শনিবারের টক অব দ্য সিটি এখনও সবার মুখে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ যানজট নিরসনে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ফ্লাইওভার নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে অনুষ্ঠিত একটি গোলটেবিল বৈঠকে মন্ত্রী ও এক এমপির মধ্যে অশালীন আচরণ, অশ্রাব্য গালিগালাজ এমনকি একপর্যায়ে মারমুখী আচরণের ঘটনাটি টক অব দ্য সিটিতে পরিণত হয়েছে। সরকারদলীয় মন্ত্রী ও এমপির মধ্যে এ ধরনের ঘটনা অতীতে না ঘটলেও গ্রুপিংয়ের কারণে বিরুদ্ধচারণের বিষয়টি প্রকাশ্যে ছিল এবং এখনও আছে। কিন্তু একজন এমপি জুনিয়র নেতা হয়ে একজন সিনিয়র নেতা মন্ত্রীকে মারার জন্য তেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি অশ্রাব্য ভাষায় প্রকাশ্যে একটি অনুষ্ঠানে গালমন্দ করার ঘটনাটি বিরল। এ ঘটনা ঘটেছে গৃহায়ণ ও পূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও চট্টগ্রাম-১০ এলাকার সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ডাঃ আফসারুল আমীনের মধ্যে। ঘটনার একদিন পর মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রবিবার বিকেলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, যার যেমন স্বভাব ও চরিত্র তার প্রকাশ তো সেভাবেই ঘটবে। এতে আমি খুব বেশি অবাক হইনি। চট্টগ্রামে উড়াল সেতুর নামে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে তার ব্যাপারে আগে থেকেই যারা নানা দিক বিবেচনা করে দিয়ে আসছেন তারাই শনিবারের গোলটেবিল বৈঠকে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন এবং তারাই মূলত চট্টগ্রামে এ জাতীয় প্রসঙ্গে বক্তব্য দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে আমি তাদের দিয়ে এ ধরনের বক্তব্য লিখিয়ে উপস্থাপন করিয়েছি বলে এমপি আফসারুল আমীন যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ অসত্য। আমি মন্ত্রী হওয়ার পূর্বেও চট্টগ্রামের প্রকৌশলী ও নগরবিদদের একটি অংশ অনুরূপ উড়াল সেতুর বিরোধিতা করে আসছিলেন। তারা তাদের বিরোধিতা এখনও অব্যাহত রেখেছেন। যা শনিবারের গোলটেবিল বৈঠকে পুনরায় তাদের প্রবন্ধে উঠে এসেছে। এক্ষেত্রে আমার কিছু করার নেই এবং ছিলও না। কিন্তু একজন সিনিয়র নেতা ও মন্ত্রীর প্রতি তিনি যেভাবে তেড়ে এসে মারমুখী অবস্থান প্রকাশ করলেন তা উপস্থিত অন্য নেতাকর্মী ও সমর্থকদের রীতিমতো বিস্মিত করেছে। বিষয়টি সম্পূর্ণ অনাকাক্সিক্ষত বলে তিনি মত ব্যক্ত করেন। প্রসঙ্গত, এমপি আফসারুল আমীন নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে মহানগরীতে দলের শীর্ষ নেতা এবং অন্য নেতারাও যাকে মান্য করে চলেন সেই মহিউদ্দিন চৌধুরীকেও প্রকাশ্যে নানা কটূক্তির মাধ্যমে বিষোদ্গার করতে দ্বিধা করেননি। রবিবারও বিষয়টি বেশ আলোচিত হয়। প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়াও দেখা যায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের নির্বাচনী এলাকা মীরসরাইয়ে। মীরসরাইয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কিছুক্ষণের জন্য অবরোধ সৃষ্টি করে ডাঃ আফসারুল আমীনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকরা। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য। অপরদিকে ডাঃ আফসারুল আমীন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি। একজন বর্তমান মন্ত্রী, অপরজন সাবেক মন্ত্রী। এই দুই নেতার মধ্যে অতীতে কোন বিরোধের কথা শোনা যায়নি। কিন্তু শনিবার রাতে ‘টেকসই জনবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় ফ্লাইওভারের পক্ষে-বিপক্ষে মত ব্যক্ত করতে গিয়ে এমন বিরোধে জড়িয়ে যান যে, রীতিমতো তা আক্রমণাত্মক পর্যায়ে চলে যায়। এতে উপস্থিত আলোচকগণ হতভম্ব হয়ে পড়েন। তাদের কয়েকজনকে ব্যস্ত দেখা যায় ডাঃ আফসারুল আমীনকে থামাতে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আলোচনাস্থলে মৃদু সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন দুই নেতার অনুসারী ও সমর্থকরা। গোলটেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া ও নগর পরিকল্পনাবিদ আলী আশরাফ। এরপর বক্তব্য রাখেন স্থপতি তসলিম উদ্দিন চৌধুরী ও সেলিনা হোসেন। মূল প্রবন্ধ এবং আলোচকদের আলোচনায় ফ্লাইওভারের বিরুদ্ধেই বক্তব্য বেরিয়ে আসে। কিন্তু ডাঃ আফসারুল আমীন নগরীতে ফ্লাইওভার নির্মাণের পক্ষে। গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনও ফ্লাইওভার কোন স্থায়ী সমাধান নয় বলে মত ব্যক্ত করে বলেন, অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত বহদ্দারহাট ও কদমতলী ফ্লাইওভারে তেমন গাড়ি ওঠে না। তিনি বলেন, এ ফ্লাইওভারগুলো যখন নির্মিত হয় তখন আমি মন্ত্রী ছিলাম না। যদি মন্ত্রী থামতাম তাহলে নিরুৎসাহিত করতাম বা করলেও নগর পরিকল্পনাবিদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতাম। তিনি আরও বলেন, ফ্লাইওভারে গাড়ি না উঠলে একপর্যায়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ফ্লাইওভারগুলোর মতোই কোন এক সময় এগুলো ভেঙ্গে ফেলতে হবে। মন্ত্রীর বক্তব্যের এ পর্যায়ে কথা বলতে শুরু করেন সংসদ সদস্য ডাঃ আফসারুল আমীন। তিনি মন্ত্রীর প্রতি অভিযোগ এনে বলেন, আপনার আগ্রহে এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে। আপনিই এ ধরনের প্রবন্ধ উপস্থাপন করিয়েছেন। এ সময় মন্ত্রী বলেন, আপনাকেও (আফসারুল আমীন) ভাড়া করে আনা হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ হন আফসারুল আমীন। বাদানুবাদের একপর্যায়ে তিনি আসন ছেড়ে মন্ত্রীর দিকে তেড়ে যান। এ সময় তাকে থামাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম, চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। এর মধ্যে মাহবুবুল আলম আফসারুল আমীনের হাত চেপে ধরেন। বাগ্বিত-ার একপর্যায়ে আফসারুল আমীন নিজেকে চট্টগ্রামের স্থানীয় অধিবাসী উল্লেখ করে আঞ্চলিক ভাষায় মন্ত্রীকে উদ্দেশ করে হুঙ্কার দেন। পরিস্থিতি এপর্যায়ে গড়ালে একপাশে অনেকটাই নীরব থাকেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে নেয়ার চেষ্টায় তিনি বলেন, এটি একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। তিনি বিষয়টি মনে না রাখার অনুরোধ জানান। এ পর্যায়ে তাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায় এবং আলোচনাও প- হয়ে যায়। মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বেরিয়ে যেতে চাইলে সিঁড়িতে মিছিলের মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন ডাঃ আফসারুল আমিনের সমর্থকরা। তখন তিনি পুনরায় অনুষ্ঠানস্থলে ফিরে গিয়ে পরে সকলের সঙ্গে বেরিয়ে আসেন।
×