স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ একের পর এক রাঘব-বোয়াল ঘায়েল হতে দেখলে টেনশন কার না হয়? মাস কয়েক আগেও বাংলাদেশ নিয়ে এতটা ভাবনা ছিল না পরাশক্তি দক্ষিণ আফ্রিকার। কিন্তু বদলে গেছে দৃশ্যপট। দুই সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে টাইগারদের অবিশ্বাস্য ক্রিকেটশৈলী প্রোটিয়াদের নতুন করে ভাবাচ্ছে। টি২০ অধিনায়ক ফাক ডু প্লেসিসের কণ্ঠে সমীহ, ঘুরিয়ে হলেও কোচ রাসেল ডমিঙ্গো যা বলছেন, তাতে মনে হবে ভেতরে ভেতরে ‘আতঙ্ক’ বিরাজ করছে আফ্রিকান শিবিরে! পূর্ণাঙ্গ দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে মঙ্গলবার ঢাকায় এসেছে প্রোটিয়ারা।
‘সম্প্রতি অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলছে বাংলাদেশ। এখন তাদের মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে, অনেক আক্রমণাত্মক, নিজেদের ওপর দারুণ একটা বিশ্বাস তৈরি হয়েছে। বিশ্বকাপ ও তৎপরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ আমার ধারণার চেয়ে বেশি আগ্রাসী ক্রিকেট খেলছে। সুতরাং নতুন করে ভাবতেই হচ্ছে। পরিস্থিতি আর আগের মতো নেই। তার ওপর আক্রমণে ডেল, মরকেল ও ভারনারে মতো সেরা পেসারদের তিন ভার্সনের সব পাওয়া যাচ্ছে না। নতুনদের ওপর চাপটা বেশি থাকবে। সত্যি বলতে, সফরটা আমাদের জন্য কঠিন এক চ্যালেঞ্জ।’ জিম্বাবুইয়ে, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিয়ে ছেলেখেলার পর বিশ্বকাপে চমৎকার পারর্ফেন্স। কুলীন ইংল্যান্ডকে বিদায় করে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা। এরপর ওয়ানডে ও টি২০তে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ, সর্বশেষ মোড়ল ভারতের বিপক্ষে ২-১এ ওয়ানডে সিরিজ জয়। ঘরের মাটিতে টাইগারদের এমন পারফর্মেন্সই আসলে প্রোটিয়াদের ভাবিয়ে তুলেছে। দেশ ছাড়ার আগে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের কাছে সেটি গোপন করেননি ডমিঙ্গো। দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে দর্শক, আবহাওয়া, উইকেটের ধরন, সম্প্রতি তাদের ফর্ম বিবেচনায় সফরটা কঠিন হবে। টাইগাররা এখন বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম বিপজ্জনক দল, নিজেদের দিনে তারা যে কোন শক্তিকে রুখে দিতে সক্ষম। আমাদের সেটি মাথায় রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, তাদের হেলায় হারানোর দিন এখন আর নেই।’
ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ স্পিনের চারণভূমি। আর ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দল বরাবরই স্পিনের বিপক্ষে দুর্বল। অন্যদিকে এবার ভারত সিরিজে সাফল্যের রূপকার ছিলেন পেসাররা। চার পেসার নিয়ে ওয়ানডে খেলে অনেকটা ইতিহাস রচনা করে স্বাগতিকরা। তাই প্রোটিয়াদের বিপক্ষে কেমন দল গড়া হয় সেটি নিয়ে আগ্রহ অনেকের। এ প্রসঙ্গে অতিথি কোচ বলেন, ‘আমার মনে হয়, উইকেট উপমহাদেশের গড়পড়তা উইকেটের মতোই হবে। প্রতিপক্ষ জানে আমাদের চার বিশ্বমানের পেসার আছে। এরপরও ভারত সিরিজের সাফল্যের কথা ভেবে যদি বাউন্সি উইকেট বানায়, তবে সেটি আমাদের জন্য ভালই হবে!’ ঢাকায় ৫ জুলাই প্রথম টি২০ দিয়ে শুরু হবে ময়দানী লড়াই। দুই ম্যাচের সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের নেতৃত্বে থাকছেন ফাফ ডু প্লেসিস। স্টেইন-মরকেলদের কথা তিনিও বিশেষভাবে বলেছেন, ‘টি২০তে পেস আক্রমণে স্টেইন-মরকেলের পাশাপশি সেরা স্পিনার তাহিরকেও পাওয়া যাবে না। আশা করছি কাইল এ্যাবট, ওয়াইন পারনেল, বোরেন হেনড্রিকস, ডেভিড ওয়াইজ, ক্রিস মরিসরা ভাল করবে। তরুণ ক্যাগিসো রাবাদার জন্য এটা দারুণ সুযোগ। ওকে নিয়ে আমাদের আশা অনেক।’ ক্যারিয়ারের বাকি বলগুলো অপচয় না করে বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত হতে চাইÑ বাংলাদেশ সফর নিয়ে এমন মন্তব্য করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন আধুনিক সময়ের অন্যতমসেরা পেসার স্টেইন।
ব্যাপক সমালোচনার মুখে অবশ্য পরে বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। টি২০ অধিনায়ক, প্রধান কোচের মুখে বার বার তার কথা শুনে পরিষ্কার ধারণা করা যায়, বাংলাদেশ নিয়ে আসলেই কতটা ‘টেনশনে’ তারা! ডেল স্টেইন, মরনে মরকেল, ভারনন ফিল্যান্ডার অবশ্য টেস্ট সিরিজে দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। তবে টেস্টে দেখা যাবে না ওয়ানডে অধিনায়ক ডেল স্টেইনকে। টি২০তে না থাকলেও ইমরান তাহির-মরনে মরকেল আবার আছেন ওয়ানডে স্কোয়াডে। এক ঝাঁক নবীনদের নিয়ে গড়া টি২০কেই বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে করছেন সফরকারীরা।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: