স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে খেলবেন কিনা মাশরাফি বিন মর্তুজা এ নিয়ে সবার ভেতরই দ্বিধা ছিল। সেই দ্বিধা দূর হয়ে গেছে। এখন ওয়ানডে অধিনায়ক নির্বাচন নয়, খেলা নিয়েই পুরো মনোযোগে আছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শেষ হবে ১৪ ডিসেম্বর। এ পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে ভাবতেই চান না আওয়ামী লীগ থেকে নড়াইল-২ আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হওয়া মাশরাফি। তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ নিয়ে ভাবছেন এবং বলেছেনও, ‘অবশ্যই সিরিজটা জিততে চাই।’
আর চারদিন পর ৯ ডিসেম্বর শুরু হবে ওয়ানডে সিরিজ। ৯, ১১ ও ১৪ ডিসেম্বর যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে। এ সিরিজ নিয়ে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন অধিনায়ক মাশরাফি। নির্বাচন আর সিরিজ নিয়েই বারবার ঘুরপাক খেতে হলো মাশরাফিকে। তিনি বলেন, ‘খেলার আগে এই (নির্বাচন) নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আর কোন প্রশ্ন না হোক, এই জন্য যেটা করার এখনই করে ফেলা আর কি। আমার পুরোপুরি অনুশীলনে মন আছে। অবশ্যই ১৪ তারিখের পর আমি ওইখানে (নির্বাচন নিয়ে) মনোযোগ করব। ওইখানে যা করার ১৪ তারিখের পর। এর আগে পুরোপুরি কনসোনট্রেশন খেলার মধ্যে রাখব।’
কেন নির্বাচন? ক্রিকেটের প্রতি আওয়ামী লীগের অবদানই কী আপনাকে অনুপ্রাণিত করেছে? মাশরাফি বলেন, ‘প্রথমত ধরেন, আমি যদি ওয়ার্ল্ডকাপ পর্যন্ত ধরেন, আমি যেটা চিন্তা করেছি, আর সাত থেকে আট মাস বাকি আছে। বিশ্বকাপের পর আমার ক্যারিয়ার যদি শেষ হয় নেক্সট সাড়ে চার বছরে কি হবে আমি জানি না। আর আমার একটা সুযোগ আসছে, যেটা আমি উপভোগ করি সবসময়, মানুষের সেবা করার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটা সুযোগ দিয়েছেন, আপনারা জানেন যে আমার একটা ফাউন্ডেশন আছে, আমার এলাকার জন্য কিছু কাজ করার। আমার মনে হয় এটা আমার জন্য গ্রেট অপরচুনিটি তাদের জন্য কাজ করার। স্রেফ এখান থেকেই মনে হয়েছে, হয়তো সাড়ে সাত-আট মাস পর তো আবার জাতীয় নির্বাচন হবে না। ক্রিকেট না, অন্য স্পোর্টসেও, আমাদের জন্য পারফর্মেন্সটা সবার আগে। বাংলাদেশ ক্রিকেট সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কিনা, সেটা অবশ্যই আপনারা জানেন, বাংলাদেশ এখন আগের থেকে অনেক বেটার টিম। সুযোগ-সুবিধাও আগের থেকে অনেক বেশি আছে। আমার বিশ্বাস সামনে আরও এগিয়ে যাবে।’
ঘরের মাঠে শেষ ওয়ানডে সিরিজ নির্বাচনের কারণে আলোচনা থেকে সরে যাচ্ছে, বিষয়টি কিভাবে দেখেন? মাশরাফি জানান, ‘প্রথমত আমি বলেছি, আমার মাইন্ড সেট আপ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ছিল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত মনে হচ্ছিল আমি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর পারব কিনা জানি না। তারপরও আমার ফিটনেস, পারফর্মেন্স ঊনিশ পর্যন্ত চলছিল বলে আমি মোটামুটি এগিয়েছি। সেটাই বলছি আমার বিশ্বকাপ পর্যন্ত মাইন্ড সেট আপ আছে। তারপর রিভিউ করার সুযোগ আছে, আমি যদি সেই অবস্থায় না থাকি তাহলে অবশ্যই আমাকে কুইট করতে হবে। আর যদি থাকি তাহলে অবশ্যই আমি চেষ্টা করব, তার আগেও যে কোন কিছু হতে পারে। ২০১১ বিশ্বকাপের পর আপনাদের এখানেই ৫০% বিশ্বাস করেছিল যে আমার ক্যারিয়ার শেষ। আল্লার রহমতে আরও সাত বছর ক্যারি করতে পেরেছি। ওইখানে আমার ফ্যামিলির সবাই ভেবেছিল আমি পারব কিনা।’
শেষ সিরিজ? মাশরাফি বলেন, ‘আমার কাছে এ নির্বাচনে আসার আগেও যেমন ছিল সেই সিরিজটাও সেরকম। আমার শেষ আর শুরুতে কিছু আসবে না। তবে অবশ্যই সিরিজটা জিততে চাই। আমার চোখে ঠিক আট দশটা সিরিজ যেভাবে খেলছি এটাও তাই।’
ক্রিকেটের বাইরে পলিটিক্যাল মানুষজনের সঙ্গে উঠা বসা নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘না এখনও ঘুরার সুযোগ পাইনি। যাওয়ার সুযোগ হয়নি। সিরিজটা খেলার পর যাব। নড়াইলের মানুষজনের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। আমি যেতে পারিনি, গেলে আমার যে কাজগুলো আছে সেগুলো আমি করব।’
কি ভেবে নির্বাচন? মাশরাফির ভাষ্য, ‘এটা বললাম আগে, আমার ক্যারিয়ার অবশ্যই শেষের দিকে। না আমি শচীন টেন্ডুলকর, না আমি ম্যাকগ্রা যে আমার কথা মানুষ স্মরণ রাখবে। আমি আমার মতো করেই ক্রিকেটটা খেলেছি। আমার স্ট্রাগলিং লাইফে যতটুকু পেরেছি খেলেছি। তবে আমি সবসময় উপভোগ করেছি মানুষের জন্য কাজ করতে পারা। এটা আমার ছোটবেলার শখ ছিল বলতে পারেন। যে সুযোগটা আমি বললাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিয়েছে, বৃহৎ পরিসরে যদি কিছু করা যায়।’
সামনে সিরিজ, সব কথা রাজনীতি নিয়ে, পুরোপুরি ক্রিকেটে আছেন? মাশরাফি জানান, ‘এই জন্যই (রাজনীতি নিয়ে) আমি আজ প্রেস কনফারেন্সে আসছি যাতে পোস্ট ম্যাচে আর কেউ রাজনীতি নিয়ে কথা না বলেন। না হলে ম্যাচের আগেরদিন যদি প্রেস কনফারেন্স করতাম এই প্রশ্নগুলো তখন হতো। আমি ব্যক্তিগভাবে মনে করেছি আপনাদের মনে যদি প্রশ্ন থাকে তাহলে এখনি ফেস করা উচিত।’
বিশ্বকাপের পরও খেলবেন কিনা রিভিউ করবেন, সাংসদ হয়ে গেলে আর খেলাটা চালিয়ে যাওয়া ঠিক হবে কিনা? মাশরাফি জানান, ‘প্রথমত আমার লক্ষ্য বিশ্বকাপ পর্যন্তই থাকবে। বিশ্বকাপ পর্যন্ত আট মাসের ব্যাপার। আট মাস পর্যন্ত যেভাবে খেলে আসছি ওইভাবে খেলার চেষ্টা করব। আমার পারসোনাল গোলও ছিল বিশ্বকাপ। পরে সেটা রিভিউ করব কিনা সেই সময়ই বলে দেব।’
দেশের মাশরাফি থেকে দলের মাশরাফি হওয়া কেমন লাগছে? মাশরাফি জানান, ‘এটা খুবই স্বাভাবিক। উদ্দেশ্য যেটা আমার পরিষ্কার মানুষের জন্য কাজ করতে চাই, যদি সুযোগ পাই কাজ করব। আগেও বললাম বিশ্ব ক্রিকেটে আমি এমন কোন সুপারস্টার না আট মাস পরে আমি যখন খেলা ছেড়ে দিব তখন জনে জনে মানুষ স্মরণ করবে।’
দেশের ক্রিকেটে মাশরাফির চিন্তা কী? মাশরাফি জানান, ‘দেশের ক্রিকেটের কথা যেটা বললাম, আলহামুদুলিল্লাহ ভালই চলছে। এখন যারা আছেন ক্লিয়ারলি বলতে পারেন। আমার অবস্থান থেকে যতটুকু সাপোর্ট দেয়ার ততটুকু দেব।’
দল না জিতলে আপনার ভবিষ্যত? মাশরাফি বলেন, ‘হতে পারে, কালকে আপনার জীবনে কি ঘটবে আপনি জানেন না। আমার জীবনে কি ঘটবে সেটাও আমি জানি না। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আপনি ক্লিয়ার মাইন্ড নিয়ে যাচ্ছি কিনা। আমি শুধু নিজেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। কালকে আমার সঙ্গে কি হবে সেটা জানি না। তাই এতকিছু ভাবার সুযোগ এখনও নাই।’
টেস্ট থেকে অবসর নেবেন? মাশরাফি নিশ্চিত কিছু বলেননি, ‘দেখা যাক, আমি দশটা কাজ তো এক সঙ্গে করব না। আর টেস্ট মনে হয় এমনিই বলে দেব। আর টেস্ট তো আট বছর ধরে খেলছি না।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ নিয়ে চ্যালেঞ্জও আশা করছেন মাশরাফি, ‘ফরর্মেট যত ছোট হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তত ভাল একটা দল। অবশ্যই ভাল একটা কম্পিটিশন হবে আশা করছি। টেস্ট সিরিজ জেতার পর প্লেয়াররা ভাল অবস্থায় আছে, ওটা ইউস করতে পারলে ভাল হবে।’
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: