ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহ-সভাপতি বাদল রায়

তৃণমূল ফুটবলের গুরুত্ব সবাই বোঝে, বাফুফে ছাড়া

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

তৃণমূল ফুটবলের গুরুত্ব সবাই বোঝে, বাফুফে ছাড়া

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘তৃণমূল ফুটবলের গুরুত্ব সবাই বোঝে, তবে বাফুফে ছাড়া।’ পাঠকমাত্রই ধরে নেবেন মন্তব্যটি যিনি করেছেন তিনি নিশ্চয়ই বাফুফে বা কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের কট্টর সমালোচক বা বিরোধিতাকারী। কিন্তু যখন শুনবেন মন্তব্যকারী হচ্ছেন বাফুফেরই সহ-সভাপতি বাদল রায়, তখন নিশ্চয়ই সবার চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। শনিবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সেরা খেলোয়াড়, কোচ, রেফারি, সমর্থক ও সংগঠকদের সম্মাননা দেয় বাংলাদেশ ফুটবল সাপোর্টার্স ফোরাম (বিএফএসএফ)। বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাদল রায়। সেখানেই উপরোক্ত মন্তব্য করেন জাতীয় দলের সাবেক ও প্রখ্যাত এই ফুটবলার। জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পাওয়া বাদল রায় সেই ১৯৯৬ সাল থেকেই বাফুফের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিভিন্ন সময় পালন করেছেন বিভিন্ন পদে দায়িত্ব। দেশের ফুটবলের স্বর্ণযুগ আর পড়ন্ত বেলাÑ দুটোই তার দেখা। কাজেই তিনি বাফুফেকে নিয়ে যে মন্তব্যটি করেছেন, তা মোটেও বিদ্বেষপ্রসূত নয় এবং চরম বাস্তবতার নিরিখেই করেছেন বলে মনে করেন সচেতন ফুটবলবোদ্ধারা। তাদের মতে দেশের ফুটবলের ক্রান্তিলগ্নে বাফুফের একটি অন্যতম শীর্ষপদে থেকেও এমন সত্য ও সাহসী মন্তব্য যথেষ্ট প্রশংসার দাবি রাখে। বাদল তার বক্তব্যে আরও বলেন, ‘সমগ্র ফুটবল বিশ্বের ফেডারেশনগুলো ফুটবল উন্নয়ন খাতেই সবচেয়ে বেশি খরচ করে থাকে। কিন্তু বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন বেশি টাকা খরচ করেছেন জাতীয় ফুটবল দল এবং প্রিমিয়ার লীগের ক্ষেত্রে। এ নিয়ে অনেকবারই তার সঙ্গে আমার মতবিরোধ হয়েছিল।’ বাফুফের গত নির্বাচনে সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে সম্মিলিত পরিষদ বিপুলভাবে জয়লাভ করে। বাদল রায় এই প্যানেলেরই প্রার্থী। সালাউদ্দিনের প্যানেলের লোক হয়েও তিনি ফুটবলের উন্নয়নের স্বার্থে তার সভাপতির অদূরদর্শিতা মেনে না নিয়ে তার সমালোচনা করেছেন; বাফুফেতে যেখানে সালাউদ্দিনের কথাই আইন, সেখানে বাদল রায়ের এমন ভূমিকা সত্যিই বিস্ময়কর ও প্রশংসনীয়। বাদল রায় এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘শুধু জাতীয় দল ও লীগ নিয়ে পড়ে থাকলে দেশের ফুটবলের উন্নয়ন কখনই হবে না। তৃণমূল ফুটবল নিয়ে ব্যাপকভাবে কাজ না করলে পাইপলাইনে ভাল ফুটবলার না থাকলে ফুটবলে ধস নামবেই, যেটা ভুটানের কাছে হেরে নেমেছে। কাজেই এখন আমাদের আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হবে। ইতোমধ্যেই এ নিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। এদের ঠিকমতো পরিচর্যা করলে একসময় স্টেডিয়ামের গ্যালারিগুলো আবারও দশর্ক পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে, দেশের ফুটবলের হারানো জনপ্রিয়তা আবারও ফিরে আসবে।’ বাদল রায় উচ্চ পারিশ্রমিকধারী ফুটবলারদেরও সমালোচনা করেন, ‘দেশের অনেক ফুটবলারই উচ্চ পারিশ্রমিকে ক্লাব ফুটবলে খেলে। কেউ কেউ তো ৬০ লাখ টাকাও পায়। আমার প্রশ্ন, তারা যে মানের খেলোয়াড়, তাতে কি এই টাকা তারা পাওয়ার যোগ্য? এমিলি-মামুনুল-জাহিদের মতো খেলোয়াড়দের খেলায় কি ধারাবাহিকতা, ফিটনেস, দেশাত্মবোধ, দায়িত্ববোধ এবং জীবনযাপনে কোন শৃঙ্খলা আছে? উত্তর হচ্ছেÑ দুঃখের বিষয়, এর কোনটাই নেই। তাহলে কেন তাদের ভাল বা তারকা খেলোয়াড় বলা হয়, তা আমার বোধগম্য নয়।’ সর্বশেষ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সেরা খেলোয়াড়, কোচ, রেফারি, সমর্থক ও সংগঠকদের সম্মাননা দিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল সাপোর্টার্স ফোরাম (বিএফএসএফ)। শনিবার বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের মিলনায়তনে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ-সভাপতি বাদল রায়। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিওএ’র সদস্য খন্দকার হাসান মুনীর। উল্লেখ্য, পুরস্কার দেয়ার ক্ষেত্রে শুধু বাংলাদেশীরাই বিবেচিত হয়েছেন। এ ধরনের পুরস্কার প্রদান বাংলাদেশে এবারই প্রথম।
×