ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

গুরু গার্ডিওলাকে মেসির গোলের মালা

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ২১ অক্টোবর ২০১৬

গুরু গার্ডিওলাকে মেসির গোলের  মালা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ লিওনেল মেসির বিশ্বসেরা হওয়ার পেছনে বার্সিলোনার অবদান সবচেয়ে বেশি। তবে আর্জেন্টাইন তারকাকে ঘষেমেজে চকচকে করার পূর্ণ কৃতিত্ব কোচ পেপ গার্ডিওলার। তারকা এই কোচের হাত ধরেই সাফল্যের স্বর্ণশিখরে উঠেছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। অথচ সময়ের কি নিষ্ঠুর পরিহাস। সেই মেসির কাছেই এখন নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে গার্ডিওলাকে। যাকে বলে শিষ্যের কাছে গুরুর পরাজয়। বুধবার রাতে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফুটবলে আরেকবার করুণ এ দৃশ্যের মঞ্চায়ন হয়েছে। ন্যুক্যাম্পে মুখোমুখি হয়েছিল বার্সিলোনা ও ম্যানচেস্টার সিটি। বার্সার হয়ে খেলেন সুপারস্টার মেসি। আর কাতালন ক্লাব ছেড়ে যাওয়া গার্ডিওলা দাঁড়ান ম্যানসিটির ডাগআউটে। পুরো ম্যাচেই সাবেক শিষ্য মেসির জাদু দেখেন সময়ের সফল কোচ। ডাগআউটে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া যেন কিছুই করার ছিল না গার্ডিওলার। গোলের মালা উপহার দিয়ে ন্যুক্যাম্পে গার্ডিওলার ফেরাকে বিষাদময় করে দিয়েছেন মেসি। দাপুটে হ্যাটট্রিক করার পাশাপাশি নামের পাশে লিখিয়েছেন বেশ কয়েকটি গৌরবময় রেকর্ড। চার বছর বার্সিলোনার কোচ থাকার সুবাদে মেসিকে খুব ভালমতোই চেনেন গার্ডিওলা। কিন্তু এ সময়ের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়কে আটকানোর কোন কৌশল এখনও বের করতে পারেননি স্প্যানিশ এই কোচ। ২০১৪-১৫ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে জার্মান পরাশক্তি বেয়ার্ন মিউনিখের কোচ থাকার সময়ও মেসির কাছে নাজেহাল হতে হয়েছিল গার্ডিওলাকে। সেবার সেমিফাইনালের দুই লেগ মিলিয়ে বার্সা জিতেছিল ৬-২ ব্যবধানে। দুটি গোল করেছিলেন মেসি। আর এবার ম্যানসিটির বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিকই করে বসেছেন গার্ডিওলার সাবেক শিষ্য। ১৭, ৬১ ও ৬৯ মিনিটে তিনটি গোল করেন মেসি। হ্যাটট্রিক করে রেকর্ড আরও হৃষ্টপুষ্ট করেছেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ইতিহাসে ঘরের মাঠে সর্বোচ্চ ৫০ গোলের রেকর্ড এখন পাঁচবারের ফিফা সেরা তারকার। রেকর্ডটি গড়ার পথে মেসি ছাড়িয়ে গেছেন রিয়াল মাদ্রিদ ও শালকে জিরো ফোরের তারকা রাউল গঞ্জালেসকে। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে নিজেদের মাঠে সাবেক এই স্প্যানিশ ফরোয়ার্ডের গোলসংখ্যা ৪৯টি। ইউরোপ সেরার আসরে সাতটি হ্যাটট্রিকও হয়ে গেল মেসির। অন্য কোন খেলোয়াড়ের আর নেই এ সাফল্য। তারচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিক আছে কেবল দল রিয়াল মাদ্রিদের (৯টি)। ইংলিশ দলগুলোর বিরুদ্ধে সবশেষ তিন ম্যাচে করলেন ৬ গোল। সব মিলিয়ে গোল ১৬টি। অথচ একসময় বলা হতো, ইংলিশ ক্লাব ফুটবলে এত সহজে গোল পেতেন না মেসি। সেখানকার রক্ষণ নাকি ভাঙ্গতেই পারতেন না। পরশু রাতে শুধু সিটির রক্ষণই ভাঙ্গেননি, ভেঙ্গে দিয়েছেন সাবেক গুরুর মনও! এবার চ্যাম্পিয়ন্স লীগে টানা দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করলেন মেসি। ফলে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের একই মৌসুমে দুই হ্যাটট্রিকের কীর্তির সঙ্গী হলেন ভিন্ন দুটি মৌসুমে। ২০১১-১২ মৌসুমেও দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। এখন এক মৌসুমে তিন হ্যাটট্রিক করা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর রেকর্ডে চোখ মেসির। অথচ চোটের কারণে খেলতে পারেনি শুরুর দিকে। ফিরে দুই ম্যাচেই দুটি হ্যাটট্রিক করলেন মেসি। সেল্টিকের পর এবার ম্যানসিটির বিরুদ্ধেও। অথচ একসময় গোলের জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে এই মেসিকে! ২০০৮ সালে বার্সায় গার্ডিওলা যুগ শুরুর আগে মেসির মৌসুম সেরা গোল সংখ্যা ছিল ১৭টি। গার্ডিওলা আসার আগের মৌসুমেও (২০০৭-০৮) ৪০ ম্যাচে মেসির নামের পাশে ছিল ১৬ গোল। অথচ গার্ডিওলা আসার পর থেকেই সবকিছু পাল্টে যায়। মেসিকে বানিয়ে ফেলেন গোলমেশিন। নবজন্ম দেয়া সেই মেসির কাছেই এখন যেন শিখছেন গার্ডিওলা!
×