ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

টি ইসলাম তারিক

চ্যালেঞ্জ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ৮ জুন ২০১৬

চ্যালেঞ্জ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার

বিশ্বকাপ ফুটবলের পর জনপ্রিয়তার বিচারে কোপা আমেরিকা কাপকেই এগিয়ে রাখেন ফুটবল বোদ্ধারা। ফুটবলের সবচেয়ে প্রাচীন এ আসরকে ঘিরে উন্মাদনার মাত্রাটা বিশ্বকাপ ফুটবলের চেয়ে কোন অংশে কম থাকে না। কেননা এখানে অংশগ্রহণ করে বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে সফল ও জনপ্রিয় দুটি দল ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। এ দুটি দলের অংশগ্রহণ যে টুর্নামেন্টে আছে সেই টুর্নামেন্টের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের চেষ্টা করাটা বাতুলতার পর্যায়েই পড়ে! ১৯১৬ সালে প্রথম যাত্রা শুরু হয় দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের এই আসরের। ২০১৫ সালে চিলিতে ৪৪তম আসর বসলেও এক বছরের ব্যবধানে আবারও বসেছে কোপাযজ্ঞ। কারণ ১০০ বছর পূর্তিকে স্মরণীয় করে রাখা। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, শতবর্ষী বিশেষ এই আসরটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার বাইরে। চলমান আসরের স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র। আর এর মধ্য দিয়ে কোপার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাইরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আসরটি। এবারের আসর নানা কারণে আলোচিত। এবার দীর্ঘ প্রায় দুইযুগ অর্থাৎ ২৩ বছরের শিরোপা খরা কাটানোর মিশন শুরু করেছে আর্জেন্টিনা। দলটির অধিনায়ক ও সেরা তারকা লিওনেল মেসি এমন প্রত্যয়ের কথাই জানিয়েছেন। তবে ক্রীড়ামোদিরা বঞ্চিত হচ্ছেন নেইমারের খেলা দেখা থেকে। তার ক্লাব বার্সিলোনার আপত্তির কারণে সেলেসাওরা তাদের সেরা তারকাকে ছাড়াই শিরোপা পুনরুদ্ধারের মিশনে নেমেছে। একেতে নেইমার নেই, তার উপর চোটের কারণে একঝাঁক তারকা ফুটবলার পাচ্ছেন না ব্রাজিল কোচ কার্লোস দুঙ্গা। এ কারণে আসরে রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের সাফল্য নিয়ে সংশয় জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। নিজেদের প্রথম ম্যাচে ইকুয়েডরের সঙ্গে ড্র করে এ আলামতই রেখেছে পেলের দেশ। সেই ১৯৯৩ সালে কোপা আমেরিকা জয়ের আর কোন আন্তর্জাতিক শিরোপা জিততে পারেনি আর্জেন্টিনা। ২০১৪ সালে বিশ্বকাপ ও ২০১৫ সালে কোপা আমেরিকায় তীরে এসে তরী ডোবে দিয়াগো ম্যারাডোনার দেশের। দুইবারই ফাইনালে হারের বেদনায় পুড়তে হয় দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। টানা দুটি বড় আসরের ফাইনালে হারই শুধু নয়, আর্জেন্টিনা গত প্রায় দুইযুগ ধরে কোন ট্রফি জিততে পারেনি। এসব হতাশা ভোলার আরও একটি উপলক্ষ্য পেয়েছে মেসির দল। শতবর্ষী কোপা আমেরিকায় চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে কিছুটা হলেও দুঃখ লাঘব হবে। আর এটি সম্ভব বলে মনে করছেন দলটির অধিনায়ক মেসি। গত বছর চিলিতে অনুষ্ঠিত কোপা আমেরিকার ফাইনালে স্বাগতিকদের কাছে পেনাল্টিতে হেরে শিরোপাবঞ্চিত হয় আর্জেন্টিনা। ফলে ২০১৪ সালে ব্রাজিলের মাটিতে জার্মানির কাছে বিশ্বকাপ ফাইনাল হারের পর ১২ মাসের মধ্যে আরও একটি ট্রফি হাতছাড়া করতে হয় দলটিকে। দক্ষিণ আমেরিকার শক্তিশালী দলটি কোপা আমেরিকার শেষ চারবারের মধ্যে তিনবারই ফাইনাল খেলেছে। তবে প্রতিবারই তাদের রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। সর্বশেষ ১৯৯৩ সালে আসরটিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আলবেসেলিস্তারা। বার বার বেদনায় ভারাক্রান্ত হলেও এবার সম্ভব বলে বিশ্বাস করছেন মেসি। এবারের আসর জিতে তারা গত ২৩ বছরের শিরোপার অপেক্ষা ঘোচাবেন। এ প্রসঙ্গে মেসি বলেন, কোপা জয়ের জন্য আমরা নিজেদের সেরাটাই খেলব। কারণ এটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আসর। আর্জেন্টাইন অধিনায়ক আরও বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে আর্জেন্টিনা কোন শিরোপা জয় করতে পারেনি। আর এই দলটিই গত বিশ্বকাপের ফাইনাল ও কোপা আসরের ফাইনাল খেলেছিল। আমি মনে করি এবারের আসরের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দল আমরা। বর্তমান ফিফা সেরা ফুটবলার বলেন, এটা কোপা আমেরিকার বিশেষ আসর। আর যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশেষ একটি দেশে এবারের আসর বসছে। যেখানে অসাধারণ কিছু স্টেডিয়াম আছে। আর সেখানে ফুটবলের প্রচুর দর্শকও আছে। নিজেদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার এটা দারুণ একটি সুযোগ। সবশেষ ২০০৭ সালে দক্ষিণ আমেরিকার বিশ্বকাপ হিসেবে পরিচিত কোপা আমেরিকা ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল। এরপর গত দুই আসরে সেমিফাইনালেও উঠতে ব্যর্থ হয়েছে পেলের দেশ। এবার তাই বিশেষ আসরে শিরোপা পুনরুদ্ধারের মিশন ৮ বারের কোপা আমেরিকা জয়ীদের। তবে প্রতিবার শিরোপা জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে কোপা আমেরিকা মঞ্চে আসা সেলেসাওরা এবার সমান প্রত্যয় নিয়ে আসতে পারেনি। কারণ দলের সুপারস্টার এবং অন্যতম নির্ভরযোগ্য ফরোয়ার্ড নেইমার নেই দলে। পাশাপাশি য্ক্তু হয়েছে ইনজুরি। তবু নিজেদের যোগ্যতা ও সামর্থ্য প্রমাণের লড়াই এবার সাম্বা ছন্দের দেশটির। ১৯৯৭ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পাঁচটি কোপা ফুটবল আসরে চারবারই শিরোপা জিতেছে ব্রাজিল। সেলেসাওদের সেই স্বর্ণসাফল্য ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ। বিশ্বকাপ ফুটবলে যেমন কে বাজিমাত করবে, এটা নিয়ে চারদিকে রব উঠে। অন্য ফুটবল টুর্নামেন্ট নিয়ে সাধারণত এমনটি লক্ষ্য করা যায় না। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম মহাদেশীয় প্রতিযোগিতা কোপা আমেরিকা। মাত্র ১০ দেশের মহাদেশীয় এই আসর বিশ্বকাপের মতোই উজ্জ্বল। তবে এবারের শতবর্ষী আসরে খেলছে ১৬টি দল। এর মধ্যে ছয়টি আমন্ত্রিত। উত্তর ও মধ্য আমেরিকার মেক্সিকো বার বার আমন্ত্রিত হতে হতে এখন কোপার অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। ব্রাজিল দল সম্পর্কে প্রচলিত একটি কথা আছে। ফেবারিট থেকে তারা কখনও বিশ্বকাপসহ বড় আসরের শিরোপা জিততে পারেনি। যার সবচেয়ে বড় প্রমাণ ২০০৬ বিশ্বকাপে তাদের ইতিহাসের অন্যতম সরা দল নিয়েও ব্যর্থ হওয়া। অথচ ১৯৯৪, ২০০২ সালে তাদের নিয়ে তেমন প্রত্যাশা না থাকলেও শেষ হাসি হেসেছিল সেলেসাওরাই। ২০০৩ ও ২০০৭ কোপা কাপ ও ২০০৯ কনফেডারেশন্স কাপ ব্রাজিল জিতেছে ফেবারিট তকমার বাইরে থেকে। অর্থাৎ প্রতিদ্বন্দ্বীদের ছাপিয়ে ফুটবলের ব্রাজিল এমন উচ্চতায় পৌঁছেছে যেখানে দু’চোখ মেলে তাকানোর দুঃসাহস কারও নেই। অতএব ঘরানাগত ভিন্নতা কিংবা সমর্থনগত কারণ যাই হোক না কেন এটা আপনাকে মানতেই হবেÑ ফুটবলের সেরা দেশ ব্রাজিল। ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা ও ২০১৪ বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর অবশ্য নিন্দুকেরা ব্রাজিলের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে অনেক কটূ মন্তব্য করে থাকেন। ২০১৫ সালের কোপাতেও ব্যর্থ হয় নেইমাররা। এবার শতবর্ষী কোপায় এসব দুর্নাম ঘোচানোর সুযোগ পাচ্ছে কার্লোস দুঙ্গার দল। তবে কাজটা যে সহজ হবে না সেটা বলাইবাহুল্য। আর মেসিরা আর্জেন্টিনার হাহাকার ঘোচাতে পারেন কিনা সেদিকেও দৃষ্টি ফুটবল বিশ্বের।
×