ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিস্ফোরক ও বোমার সরঞ্জাম উদ্ধার

হুজি ও আনসারুল্লাহর ৯ জঙ্গী গ্রেফতার, ছিল ডাকাতির পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৯ জুন ২০১৫

হুজি ও আনসারুল্লাহর ৯ জঙ্গী গ্রেফতার, ছিল ডাকাতির পরিকল্পনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হুজি ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নয় জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে পাঁচ কেজি বিস্ফোরক, বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও বিপুল পরিমাণ জিহাদী বইপত্রসহ জঙ্গীবাদী তৎপরতা চালানোর নানা ধরনের আলামত। গ্রেফতারকৃতরা ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন আইএসের (ইসলামিক স্টেট) আদলে ‘বাংলাদেশ জিহাদী গ্রুপ’ নামে নতুন একটি জঙ্গী সংগঠন সৃষ্টি করেছে। সংগঠনের তহবিল গঠনের জন্য তারা ব্যাংক ডাকাতির পরিকল্পনা করছিল। তাদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। রবিবার রাতে রাজধানীর বনশ্রী ও সূত্রাপুর থানা এলাকা থেকে হুজি ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৯ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে কাজী ইফতেখার খালেদ ওরফে খালেদ, ফাহাদ বিন নুরুল্লাহ কাশেমী ওরফে ফাহাদ, মোঃ রাহাত, দ্বীন ইসলাম, আরিফুল করিম চৌধুরী ওরফে আদনান, মোঃ নুরুল ইসলাম, মাওলানা নুরুল্লাহ কাশেমী, মোঃ দেলোয়ার হোসেন ও মোঃ ইয়াসিন আরাফাত। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় বিভিন্ন ধরনের পাঁচ কেজি বিস্ফোরক, বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম, গ্রেফতারকৃতদের তৈরি আটটি শক্তিশালী হাতবোমা ও ছয়টি চকোলেট বোমা, চারটি চাপাতি, উগ্র মতবাদ প্রচারের বইপত্র ও সংগঠনের প্রস্তাবিত পতাকা। যা অনেকটা ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন আইএসের (ইসলামিক স্টেট) আদলে তৈরি করা। দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় জানান, গ্রেফতারকৃতরা এদেশে ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন আইএসের আদলে ‘বাংলাদেশ জিহাদী গ্রুপ’ নামের একটি জঙ্গী সংগঠন প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করে যাচ্ছিল। জঙ্গী সংগঠনের জন্য দলীয় তহবিল সংগ্রহ করতে ঢাকার কয়েকটি ব্যাংক এবং উত্তরবঙ্গের একটি ব্যাংকে ডাকাতির পরিকল্পনা করছিল। গ্রেফতারকৃতদের সঙ্গে দেশী-বিদেশী জঙ্গী অন্য কোন সংগঠনের যোগাযোগ থাকার বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। এ ছাড়া গ্রেফতারকৃতরা বিদেশী কোন জঙ্গী বা অন্য কোন তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা পায় কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে ডিবি পশ্চিম বিভাগের উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম, মিডিয়া বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার উপস্থিত ছিলেন। বিকেলে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় দায়েরকৃত তিন মামলায় এবং সূত্রাপুর থানায় দায়েরকৃত এক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ঢাকার সিএমএম (চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট)-এর আদালতে হাজির করে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। প্রত্যেক মামলায় ১০ দিন করে চার মামলায় মোট ৪০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে ডিবি। শুনানি শেষে খিলগাঁও থানার দুই মামলায় ছয়জনকে তিন দিন করে ও অপর একটি মামলায় দুই দিন এবং সূত্রাপুর থানার এক মামলায় সবাইকে দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। খিলগাঁও থানার মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম ইউসুফ হোসেন এবং সূত্রাপুর থানার মামলায় শামসুল আরিফিন এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। প্রসঙ্গত, গত ২১ এপ্রিল দুপুরে সাভারের কাঠগড়ায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক শাখায় বোমা মেরে, গুলি চালিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপক, নিরাপত্তারক্ষীসহ তিনজনকে হত্যা করে ক্যাশ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের সঙ্গে ডাকাতদের ধাওয়া ও গুলির ঘটনায় আরও চারজনের মৃত্যু হয়। আর ঘটনার সময় জনতার হাতে ধরা পড়া দুই ডাকাতের মধ্যে এক ডাকাত গণধোলাইয়ে ওইদিন রাতেই মারা যায়। পরে সাভার এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অপর ডাকাতও মারা যায়। ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় গত ৩০ মে মাহফুজুল ইসলাম শামীম ওরফে সুমন নামে একজন গ্রেফতার হয়। পুলিশ জানায়, সুমন সদ্য নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা এবং ব্যাংক ডাকাতির ‘অপারেশন কমান্ডার’ ছিল। সুমনসহ ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় ১১ জন গ্রেফতার হয়। সুমন মুলত জেএমবি সদস্য। ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশ হত্যা করে তিন জঙ্গী ছিনিয়ে নেয়া তিন জেএমবি জঙ্গির একজন সালাহউদ্দিনের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে শামীম কয়েকজন অনুসারীকে নিয়ে সম্প্রতি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে যোগ দেয়। গত ১০ মার্চ গাজীপুরের বোর্ড বাজারে বিকাশের পাঁচ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের সময় একজনকে হত্যার সঙ্গেও শামীম জড়িত। নিজের জন্য নয়, আল্লাহর নির্দেশে, আল্লাহর পথে খরচের জন্যই ব্যাংক ডাকাতি করা হয়েছিল বলে শামীম আদালতে বলেছে। ব্যাংক ডাকাতির সঙ্গে জড়িত অনেকেই দলীয় ফান্ডের টাকা যোগাড় করতে ব্যাংক ডাকাতি করেছে বলে বিভিন্ন সময় পুলিশ ও আদালতকে জানিয়েছে। জঙ্গীরা দলীয় ফান্ডের টাকা যোগাড় করতে ব্যাংক ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালে হুজি, জামাআ’তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), জাগ্রত মুসলিম জনতা অব বাংলাদেশ (জেএমজেবি) ও শাহাদাৎ-ই আল-হিকমা নিষিদ্ধ হয়। আর ২০০৯ সালে নিষিদ্ধ হয় হিযবুত তাহ্রীর। সর্বশেষ গত ২৫ মে নিষিদ্ধ করা হয় আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এসব সংগঠন নিষিদ্ধ হলেও তাদের তৎপরতা থেমে নেই। গোপনে তাদের তৎপরতা চলছে। সম্প্রতি সব জঙ্গী সংগঠনগুলোকে এক ছাতার নিচে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন সংগঠন এবং ব্যক্তিরা।
×