ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১০ জুন ২০২৫, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শেখ মুজিব লাল পাসপোর্ট দিয়ে দেশে বাকশাল তৈরি করেছিল: ব্যারিস্টার ফুয়াদ

প্রকাশিত: ১০:০৬, ১০ জুন ২০২৫; আপডেট: ১০:১০, ১০ জুন ২০২৫

শেখ মুজিব লাল পাসপোর্ট দিয়ে দেশে বাকশাল তৈরি করেছিল: ব্যারিস্টার ফুয়াদ

ছবি:সংগৃহীত

এবি পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ এক বেসরকারি টিভি চ্যানেলের টক শো-তে অংশ নিয়ে বলেন, বাংলাদেশের মূল সমস্যা দ্বৈত নাগরিকত্ব নয়, বরং রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট ও সুশাসনের অভাব। তিনি দাবি করেন, গত ১৬-১৭ বছরে প্রতিবছর প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার করে চুরি হয়েছে, আর এই অর্থ লোপাটকারীরা সবাই কি সবুজ বা লাল পাসপোর্টধারী ছিলেন? তাহলে পাসপোর্টের রঙ দিয়ে একজন মানুষের দেশপ্রেম বা যোগ্যতা বিচার করা কতটুকু যৌক্তিক, সে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

ফুয়াদ বলেন, শেখ মুজিব যে চতুর্থ সংশোধনী করল, বাকশাল করল, শেখ মুজিবের কোন রঙের পাসপোর্ট ছিল? এটাই তো রাষ্ট্র আকারে আমার লজ্জার ব্যাপার। সেই মানুষটা বৈধ অবৈধভাবে আরেক দেশে গিয়ে ক্যারিয়ার তৈরি করছে, সেটেল হইছে। সুবিধা মত তারা সে নাগরিক হইছে। সমস্যাটা কোথায়? তখন তো আলোচনা আসে নাই।  জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে দ্বৈত নাগরিকত্বের প্রশ্ন তুলে একপাক্ষিক বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে, অথচ এর আগেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি—যেমন তারেক সিদ্দিকী কিংবা অন্য জেনারেলরা—বিদেশি নাগরিকত্ব বা আবাসনের সুবিধা ভোগ করলেও তাদের নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা হয়নি। তিনি দাবি করেন, ড. খলিলুর রহমান ব্যক্তি হিসেবে গণতন্ত্র, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নিবেদিতভাবে কাজ করেছেন। অথচ এখন কেবল তার নাগরিকত্বের বিষয়টিকে সামনে এনে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

 

 

তিনি আরও বলেন, আলী রিয়াজ, বদরুল আলম মজুমদার প্রমুখ গবেষক ও বিশ্লেষকরা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতন্ত্রের জন্য কাজ করেছেন। তাদের দ্বৈত নাগরিকত্বকে ইস্যু করে তাদের অবদানকে খাটো করা অনুচিত। বরং বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেমন চীন, মালয়েশিয়া বা সিঙ্গাপুর—বিদেশে থাকা নিজেদের দক্ষ নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেয়, তেমনি বাংলাদেশকেও তার প্রবাসী নাগরিকদের জ্ঞান, দক্ষতা ও অর্থনীতিতে অবদান রাখার সুযোগ করে দিতে হবে।

ব্যারিস্টার ফুয়াদ প্রশ্ন তোলেন, একজন প্রবাসী যখন বৈধ পথে দেশে অর্থ পাঠান, এফডিআই আনেন, সম্পত্তি কেনেন বা দান করেন, তখন রাষ্ট্র তো কোনো আপত্তি তোলে না। বরং তাকে উৎসাহিত করে। কিন্তু যখন সেই ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় কোন পদে অধিষ্ঠিত হন, তখন তার নাগরিকত্ব নিয়ে বিতর্ক তোলা হয়। তিনি বলেন, “আপনি তার কাজকে বিবেচনা করবেন না, শুধু কাগজের রং (পাসপোর্ট) দিয়ে বিচার করবেন? সেটি তো বৈষম্য।”

তিনি আরো বলেন, ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশি কিছু বিশিষ্ট দ্বৈত নাগরিককে সামনে এনে প্রচার চালাচ্ছে, যেন তারা দেশবিরোধী। অথচ এই সময়েই সেনাপ্রধানের প্রশংসা করে বলা হচ্ছে, তিনি নির্বাচন চান, ক্ষমতা চান না। তাহলে প্রশ্ন উঠছে, এই প্রপাগান্ডা কার স্বার্থে?

 

 

ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকদের এমপি হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, অথচ বিগত সরকার আমলে অনেকেই গোপনে বা ফাঁকফোকর দিয়ে সংসদ সদস্য হয়েছেন। তিনি বলেন, “আপনি যদি আইন এলাও করেন, তাহলে বাস্তবে তার সুযোগ বন্ধ কেন করবেন? আইন ও বাস্তবতা যেন একসঙ্গে চলে।”

সবশেষে তিনি বলেন, একজন মানুষের আসল পরিচয় তার কাজ, সততা ও দেশপ্রেম। পাসপোর্ট নয়, সেই মূল্যায়নের ভিত্তিতেই রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োগ হওয়া উচিত। “বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য, যারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আছেন, তাদের সম্পদ ও মেধা কাজে লাগানোর জন্য যেসব বাধা আছে, তা দূর করতে হবে,” মন্তব্য করেন ব্যারিস্টার ফুয়াদ।

ছামিয়া

আরো পড়ুন  

×