ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

বাঙালির আবেগ নিয়ে বিতর্ক

ওবায়দুল কবির

প্রকাশিত: ২০:৩৬, ২০ এপ্রিল ২০২৪

বাঙালির আবেগ নিয়ে বিতর্ক

এবার বিশাল আয়োজনে পালিত হয়েছে পহেলা বৈশাখ

বেশ কয়েক বছর পর এবার বিশাল আয়োজনে পালিত হয়েছে পহেলা বৈশাখ। করোনা মহামারি এবং গত তিনবছর পবিত্র রমজানের কারণে এই উৎসবের আয়োজন ছিল সীমিত। এবার কঠোর নিরাপত্তা থাকলেও উচ্ছ্বাস আনন্দে গা ভাসিয়েছে উৎসবপ্রিয় বাঙালি। অস্বীকার করার সুযোগ নেই পহেলা বৈশাখ বাঙালির সবচেয়ে বড় ও প্রধান সার্বজনীন উৎসব। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই উৎসবে বাঙালি মেতে ওঠে প্রতিবছর।

এবার অবশ্য নানা বিতর্কে কিছুটা হলেও উৎসবের সৌন্দর্য ক্ষুণ্ণ হয়েছে। বিতর্কের মধ্যে ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পহেলা বৈশাখ নিয়ে কিছু মানুষের নেতিবাচক প্রচার, সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কিছু সংগঠনের আপত্তি ইত্যাদি। এত কিছুর পরও উৎসব পালিত হয়েছে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ছাড়া, যতটা সম্ভব বাঙালির মতো করেই। নিরাপত্তা ইস্যুতে সৃষ্ট বিতর্কের অবসান হওয়া উচিত।
২০০১ সালে রমনা বটমূলে ভয়ংকর বোমা বিস্ফোরণের পর থেকে পহেলা বৈশাখের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাতে হচ্ছে প্রশাসনকে। কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঘিরে রাখা হয় রমনা পার্কসহ সকল উৎসবস্থল। মঙ্গল শোভাযাত্রায় থাকে নিñিদ্র নিরাপত্তা। উৎসবের সময় বেঁধে দেওয়া হয় সন্ধ্যা পর্যন্ত। বিপত্তি বেধেছে এখানেই। উৎসবের আবার নির্দিষ্ট সময় কি? উৎসব চলবে যতক্ষণ খুশি ততক্ষণ।

এক সময় আমিও এমনটি ভাবতাম। বাস্তবতার নিরিখে আমার ভাবনায় পরিবর্তন এসেছে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ উৎসব আয়োজনকারী অনেক সংগঠন প্রশাসনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছে। তারা বলছেন, নিরাপত্তার নামে বাড়াবাড়ি করছে প্রশাসন। অনেকে জোর করে সন্ধ্যার পরও অনুষ্ঠান চালিয়েছে। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছেন। এ ধরনের বিতর্ক একটি সার্বজনীন উৎসবের জন্য সুখকর নয়।
দেশের সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা নিজে এ ধরনের বাঙালি উৎসবের জন্য উৎসাহিত করেন। সম্ভব হলে তিনি নিজেও এসব উৎসবে যোগদান করতেন। কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী তাঁকে গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি নিজেও অনেক সময় আক্ষেপ করে একথা বলেন। মুক্ত বাতাসে তিনি বৈশাখী মেলায় যেতে চান। ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলা একাডেমির বই মেলায় ঘুরতে চান আপন মনে। সাধারণ মানুষর সঙ্গে মিশতে চান, হাঁটতে চান গ্রামের মেঠোপথে।

পথের পাশে খেলতে থাকা শিশুকে বুকে জড়িয়ে আদর করতে চান। নিজের মতো করে শুনতে চান সাধারণ মানুষের মনের কথা। পরিস্থিতি তাকে এসব থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। তিনি না পারলেও দেশের প্রতিটি মানুষ যেন মুক্ত পরিবেশে সকল উৎসব আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, এটি তার প্রত্যাশা। সরকারের চিন্তার সংকীর্ণতা থেকে নিরাপত্তার এই ধারণা আসেনি। বাস্তবতার নিরিখে নিরাপত্তার এই ধারণা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।  
নিরাপত্তা নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন, তাদের অনেকের সঙ্গে এ নিয়ে আমার বিতর্ক হয়েছে। আমি তাদের বলেছি, ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিলের মতো কোনো ঘটনা যদি আবার ঘটে যায়, তবে এর দায় কে নেবে? তখন কি সবাই প্রশাসনের গাফিলতির দিকে আঙুল তুলবে না? এই প্রশ্নে সমালোচনাকারীদের কণ্ঠ নরম হয়ে যায়। তারা বলেন, ‘নিরাপত্তা অবশ্যই প্রয়োজন, তবে সবটাই বাড়াবাড়ি হচ্ছে।’ বাড়াবাড়ির সংজ্ঞা কি? কতটা হলে বাড়াবাড়ি হবে না?

এই প্রশ্নের সঠিক কোনো জবাব তাদের কাছে নেই। মনে রাখতে হবে, নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের বাড়াবাড়ির মধ্যেই আমাদের উৎসব পালন করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য হতে হবে, উৎসব আনন্দের পর আমরা যেন নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারি। একই সঙ্গে কিছু সংগঠন জোর করে সন্ধ্যার পর অনুষ্ঠান চালানোর কারণে ঢালাওভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দেওয়াও সঠিক নয়। এটাও মনে রাখতে হবে, পহেলা বৈশাখ বাঙালির অনেক আবেগের উৎসব। আবেগ থেকেই তারা এটি করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে বাঙালির আবেগকেই অপমানিত করা হবে। 
সামাজিক প্রচার মধ্যমে লক্ষ্য করেছি, কিছু ব্যক্তি পহেলা বৈশাখ পালনকে ‘হিন্দু কৃষ্টি’ বলে প্রচারের চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে আমার কিছু পরিচিত জনও রয়েছেন। ধর্মান্ধতা কিংবা রাজনৈতিক সংকীর্ণতায় তাদের বিবেগ-বুদ্ধি অকেজো হয়ে গেছে। এটি কিভাবে হিন্দু, মুসলিম কিংবা অন্য কোনো ধর্মের সঙ্গে সংযুক্ত হয় তা কিছুতেই বোধগম্য নয়। ইতিহাস বলেছে, পহেলা বৈশাখের সংস্কৃতি এই অঞ্চলে চালু হয়েছে মোঘল আমলে।

শস্য বিনিময়ের হিসাব মিলাতে বছরের প্রথম দিন উৎসবের আয়োজন হতো। মোঘল শাসকরা হিন্দু ছিলেন না। ধর্মীয় কারণে তারা এই উৎসব চালু করেননি। কালের আবর্তে নানা বিবর্তনে বাঙালির কাছে পহেলা বৈশাখ উৎসব বর্তমান রূপলাভ করেছে। এর সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। থাইল্যান্ডে আমি নিজে দেখেছি, চৈত্রসংক্রান্তি থেকে তাদের ‘বর্ষবরণ’ উৎসব শুরু হয়। ব্যাঙ্ককসহ বড় বড় শহরে এই উৎসব চলে চারদিন ধরে। কোনো কোনো এলাকায় উৎসব স্থায়ী হয় ১৫ দিন পর্যন্ত। হিন্দু কৃষ্টি হিসেবে তারা এটি পালন করে না। এটা তো তাদের থাই কৃষ্টি।   
বাঙালির এমন অনেক উৎসব রয়েছে ধর্মীয় বিভাজনে এগুলো আলাদা করা সম্ভব নয়। যারা এগুলোকে ধর্মভিত্তিক উৎসবে পরিণত করার চেষ্টা করছেন তারা জ্ঞানপাপী। এরাই সমাজে ছড়াচ্ছেন সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প। এদের সংকীর্ণ মানসিকতার কারণেই পূজাম-পে হামলা হয়। মনে রাখতে হবে, আমরা সবার আগে মানুষ, পরে মুসলমান বা হিন্দু। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সবাই বাঙালি। আমাদের সংস্কৃতি এক। আচার অনুষ্ঠান অনেক ক্ষেত্রেই অভিন্ন। এর মধ্যে ধর্মীয় বিভাজন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
শুধু পহেলা বৈশাখই নয়, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর মতে মুসলিম নারীদের সাজসজ্জায় কপালে টিপ পরা যাবে না, শাড়ি পরলে বেপর্দা হবে। এমন অপসংস্কৃতি আমাদের শুধু ঐক্যেই ক্ষতি করবে না, ধ্বংস হয়ে যাবে আমাদের সংস্কৃতি। শাড়ি বাঙালি নারীদের প্রধান পোশাক। দুই হাতে কাঁচের চুড়ি, কপালে লাল টিপ বাঙালি নারীর প্রিয় সাজ। নারীদের এই সাজই যেন বাঙালির প্রতিকৃতি। আবহমানকাল ধরে চলে আসছে এই সংস্কৃতি।

আধুনিকতার ছোঁয়া কিংবা আগ্রাসী সংস্কৃতিতে পোশাক আশাকে কিছুটা পরিবর্তন এলেও এখন পর্যন্ত বাঙালি নারীদের প্রিয় পোশাক শাড়িই রয়ে গেছে। হাজার বছর ধরে চলে এসেছে বাঙালি নারীদের এই সাজসজ্জা। পুরুষদের বাঙালিয়ানার পরিচয় ফতোয়া-পাঞ্জাবিতে। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বাঙালির এই ঐতিহ্য বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। যে কোনো মূল্যে এই অপচেষ্টা প্রতিহত করতে হবে।
শুধু পোশাক নয়, খাদ্যাভ্যাসের কারণে বাঙালিদের নাম ‘ভেতো’ বাঙালি। আর্য অথবা মুসলমানরা এ দেশে ধান আনেননি। ধানের চাষ এই অঞ্চলে আরম্ভ হয়েছিল অন্তত পাঁচ হাজার বছর আগে। পরে কখনো আর্য, কখনো সেন, কখনো তুর্কি, কখনো আফগান, কখনো মোগল এবং সবশেষে ইংরেজরা বঙ্গভূমি শাসন করেছে। বাঙালিদের ভাত খাওয়ার অভ্যাসে পরিবর্তন আসেনি। ভাত বাঙালির একটি সাংস্কৃতিক ভিত্তি। ভাত খাওয়ার এই সংস্কৃতিতে বিভাজন আনা সম্ভব নয়। তেমনিভাবে বাঙালির প্রতিটি সংস্কৃতি, প্রতিটি ঐতিহ্য আমাদের রক্ষা করতে হবে। এর বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নেবে, তাদেরকে দমন করতে হবে কঠোর হাতে।
বাঙালি মুসলমানরা ধর্মপ্রাণ। ধর্মের কথা বলে অনেক সময় তাদের বিভ্রান্ত করা সহজ হয়। চাঁদে মাওলানা সাঈদীর ছবি দেখার কল্পিত কাহিনী প্রচার করে বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় উম্মাদনা তৈরির কাহিনীও এই সমাজে ঘটেছে। শাড়িতে পর্দা হয় না ফতোয়া দিয়ে সেলোয়ার কামিজের প্রথা চালু করা হয়েছে। একই কৌশলে প্রথমে ফ্যাশন হিসেবে হাজির করা হয়েছে হিজাব। এখন হিজাব হয়ে উঠেছে মহিলাদের পর্দা। নতুন ফ্যাশনের আড়ালে কখন যে নারীরা হিজাবে বন্দি হয়ে গেছেন তা নিজেরাও টের পাননি। ‘মায়ের শাড়ির আঁচলের নিচে সন্তানের শান্তির পরশ’ চিরায়ত এই বাণী কি একদিন ভুলে যাবে বাঙালি?
সাম্প্রদায়িকতার দাপটে পহেলা বৈশাখের আবেদন এখন অনেকটাই কমে এসেছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের সেই পহেলা বৈশাখের সেই জৌলুস আর নেই। পহেলা বৈশাখ যেন দিন দিন শহুরে কৃষ্টিতেই পরিণত হচ্ছে। কয়েক দশক আগেও গ্রামাঞ্চলে দিনটি উদ্যাপনে কতই না আয়োজন হতো। গ্রামে গ্রামে বসত ঐতিহ্যবাহী মেলা। পহেলা বৈশাখের মেলার জন্য অপেক্ষা চলত বছরজুড়ে।

কোনো কোনো মেলা চলত কয়েকদিন ধরে। মেলা ঘিরে উৎসব শুরু হতো গোটা এলাকায়। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই কোনো না কোনোভাবে উপভোগ করতেন মেলার আনন্দ। অনেক ঐতিহ্যবাহী মেলা ছিল, যেখানে পাওয়া যেত খাট-পালংসহ গৃহস্থালী সকল পণ্য। সারা বছরের কেনাকাটার জন্য সবাই অপেক্ষা করতেন মেলার জন্য। পান্তা-ইলিশে মেলার আনন্দ বেড়ে যেত শতগুণ। অনেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিংবা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পান্তা ইলিশের আয়োজন করতেন। দাওয়াত দিতেন বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় পরিজনদের। মেলায় পান্তা-ইলিশের স্টল হয়ে উঠত প্রিয় মানুষদের মিলন মেলা।
মেলা ছাড়াও পাড়া-মহল্লায় কনসার্ট-নাটক থিয়েটারের আয়োজন হতো। রাজধানীতে রমনা বটমূল ঘিরে আয়োজন করা হতো পহেলা বৈশাখের মেলা। বাহারি পণ্য নিয়ে বসত শত শত দোকান। নানা সুরের বাঁশির আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠত গোটা শহর। রমনা পার্কে অস্থায়ী স্টলে খাওয়া হতো পান্তা-ইলিশ। চলত দিনভর আড্ডা, সামাজিক পুনর্মিলনী। মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়ে প্রদক্ষিণ করত শহরের রাস্তা। বিকালে রাজধানী হয়ে উঠত কনসার্টের নগরী। উৎসব আয়োজন এবং গান-বাজনায় মাতোয়ারা হয়ে যেত শহরের মানুষ। সারাদিন উৎসব আনন্দে মেতে গভীর রাতে ঘরে ফিরত সবাই। 
ধর্মের নামে রাজনীতির কুফল হিসেবেই শুরু হয় বাঙালি সংস্কৃতির ওপর আঘাত। প্রথম আঘাত আসে বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব পহেলা বৈশাখের ওপর। ২০০১ সালের পহেলা বৈশাখে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা করে হত্যা করা হয় ১০ জন নিরীহ বাঙালিকে। আহত হন আরও অনেকে। এই হামলার কারণ ছিল সমাজকে বার্তা দেওয়া। বাংলাদেশে বাঙালিয়ানা চলবে না।

সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীর গোপন তৎপরতায় এই হামলা পরিচালনা করা হয়। প্রথম কেউ স্বীকার করেনি এর দায়িত্ব। পরে সবই আসে প্রকাশ্যে। মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠী প্রকাশ্যেও তৎপর হয়ে ওঠে। ফতোয়া দেওয়া হয়, পহেলা বৈশাখের অনেক আচার অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে। তাদের ঘোর আপত্তি মঙ্গল শোভাযাত্রায়। এরা বিরোধিতা করে বর্ষবরণ উৎসবের। এগুলো বিধর্মীদের কাজ বলে প্রকাশ্যেই ফতোয়া জারি করা হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এগুলোকে আমলে নেয়নি।

উপরন্তু ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে রমনা বটমূলে বোমা হামলার দোষ চাপানোর চেষ্টা হয় দেশের প্রগতিশীল ব্যক্তিদের ওপর। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে যায় ফতোয়াবাজ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর অপতৎপরতা। সংগঠিত হতে শুরু করে দেশে জঙ্গিগোষ্ঠী। একে একে হামলা শুরু হয় উৎসব সমাবেশে। হামলা হয় উদীচীর অনুষ্ঠান, সিপিবির সমাবেশ, সিনেমা হল- এমনকি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মন্দির-গির্জায়। হামলা করা হয় প্রগতিশীল ব্যক্তিদের ওপর।

সাম্প্রদায়িক তৎপরতা এবং জঙ্গি হামলার ভয়ে সীমিত হতে থাকে পহেলা বৈশাখের মতো চিরায়ত বাঙালির উৎসব। সরকারের পক্ষ থেকে এসব অনুষ্ঠানে নানা বিধিনিষেধ আরোপ শুরু হয়। ধীরে ধীরে ম্লান হতে থাকে এই বাঙালির প্রধান উৎসব পহেলা বৈশাখ। এখন শুধু এই উৎসব পরিণত হয়েছে আনুষ্ঠানিকতায়।
পহেলা বৈশাখ ছাড়াও বসন্ত উৎসব, বর্ষবরণ, শীতে পিঠা-পুলির উৎসব হতো ঘটা করে। ফতোয়া, হামলার আশঙ্কায় এগুলোও এখন আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে। বছরের দুই ঈদ, শারদীয় দুর্গাপূজাও ছিল বাঙালির সার্বজনীন উৎসব। ঈদের নামাজের পর দিনের বাকি সময় হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে উপভোগ করত এই ঈদ উৎসব। দুর্গাপূজার সময় পূজার আচার অনুষ্ঠান ছাড়া বাকি সময় উৎসবে ধর্মীয় কোনো ভেদাভেদ চোখে পড়েনি।
কিছুই ভুলবে না বাঙালি। ছাড়বে না ভাত খাওয়া। মৌলবাদী ফতোয়াবাজরা যাই বলুক আমাদের ফিরতে হবে ঐতিহ্যে। পর্দার নামে মেয়েদের বন্দি করা যাবে না। পিছিয়ে দেওয়া যাবে না জনসংখ্যার অর্ধেক মহিলাদের। মৌলবাদের শৃঙ্খল ভেঙে বের করে আনতে হবে এই জনগোষ্ঠীকে। একই সঙ্গে বাঙালির প্রধান উৎসব পহেলা বৈশাখ।

ফতোয়ার শৃঙ্খলে এটি আবদ্ধ করা যাবে না। দমন করতে হবে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে। বাঙালি আগের মতো মুক্ত বাতাসে নববর্ষ পালন করতে চায়। আগের মতো হেসে খেলে আনন্দ আহ্লাদে বরণ করতে চায় নতুন বছরকে। আবারও রমনা বটমূলকে বানাতে চায় প্রাণের মিলন মেলায়। ফিরিয়ে আনতে চায় গ্রামের বৈশাখী মেলার ঐতিহ্য। এটি দাবি নয়, বাঙালির অধিকার। এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে সবাই মিলে। অধিকার প্রতিষ্ঠা হলেই ফিরে পাব আমাদের শিকড়। 

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, জনকণ্ঠ

×