মানব তখনই মানবসম্পদ হয়ে ওঠে যখন সে দেশ ও সমাজের ইতিবাচক কাজে আত্মনিয়োগে যোগ্যতা ও সামর্থ্য অর্জন করে। এই সঙ্গে একথাও সত্য যে, দক্ষ মানবসম্পদ ছাড়া কল-কারখানা কিংবা অর্থনীতির চাকা সচল রাখার যে কোন কর্মযজ্ঞ সক্রিয় ও সফল হতে পারে না। সে কারণেই দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির কথাটি গুরুত্বের সঙ্গে বারবার উচ্চারিত হয়ে থাকে। সম্প্রতি জনকণ্ঠে প্লাস্টিক শিল্পে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি সংক্রান্ত যে উদ্যোগের খবর এসেছে তা ইতিবাচক। দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে সরকারী-বেসরকারী সহযোগিতায় প্লাস্টিক শিল্পের জন্য বিপেটের স্থায়ী ক্যাম্পাস তৈরি হচ্ছে। আশা করা যায় প্লাস্টিক খাতের রফতানি আয় বাড়ানোর পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বর্তমান সরকার প্রায় প্রতিটি শিল্পে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বস্ত্র শিল্পে দক্ষ জনবল তৈরিতে কাজ করছে সরকার। দেশের প্রতিটি বৃহত্তম জেলায় একটি করে টেক্সটাইল কলেজ এবং ভোকেশনাল টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ৩০-৩৫ হাজার সনদপ্রাপ্ত দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার সার্বিকভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ করে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছে। জাহাজ নির্মাণ শিল্পের দক্ষ জনবল তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউট সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।
মানবসম্পদ উন্নয়নে ২৩ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম এক ছাতার নিচে নিয়ে আসার সুবিবেচনাপ্রসূত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে গত বছর। বিভাগটি নিজে কোন প্রশিক্ষণ প্রদান না করলেও অন্যান্য মন্ত্রণালয়-বিভাগ যে প্রশিক্ষণ প্রদান করছে তার সমন্বয় সাধন, বাজারের চাহিদা মোতাবেক প্রশিক্ষণের মানোন্নয়ন, আন্তর্জাতিক সনদের ব্যবস্থাকরণ, দেশ-বিদেশের চাহিদা নিরূপণ প্রভৃতি কাজ করবে। ইতোমধ্যে মানবসম্পদ উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাড়ানো হয়েছে। নির্দিষ্টভাবে কারিগরি শিক্ষা প্রদানে অর্থ সহায়তা বাড়ানোর কথা বলা হয়। সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা পাবে বিশেষ সুবিধা। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংক ও কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (সিডা) প্রথমে ৫৭৩ কোটি ৩৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকা দিলেও পরে এটা বাড়িয়ে ৭৭২ কোটি ৯ লাখ ৭ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়।
আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে ক্রমোন্নতির বিষয়টির স্বীকৃতি মিলেছিল। মানবগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার কাজটিতে কিছুটা গতিও এসেছে। সুদক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। দেশে পেশাভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা প্রকৌশল, কৃষি, চিকিৎসা, কারিগরি ইত্যাদি জনসংখ্যা অনুপাতে বেশ কম। ফলে বেকারত্বের হার কমানোর ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত সাফল্য আসেনি। স্মরণযোগ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান তার কারিগরি জ্ঞান কাজে লাগিয়ে বিশ্ব অর্থনীতির সর্বোচ্চ স্থান দখল করে আছে। এখন চীন বিশ্বের শীর্ষ অর্থনৈতিক পরাশক্তি। তাদের এই অভূতপূর্ব সাফল্যের মূল কারণ হচ্ছে সময়োপযোগী প্রযুক্তিকে বাহন করে নিজেদের শ্রম ও মেধাকে কাজে লাগানো। জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করার ক্ষেত্রে সবার আগে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা গ্রহণ যে জরুরী সে কথাও আমরা জোরেশোরে বলে আসছি। সে বিবেচনায় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা হলো দক্ষ জনশক্তি তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত।
শীর্ষ সংবাদ: