ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

চাষীর মুখে হাসি ফোটাতে-

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

চাষীর মুখে হাসি ফোটাতে-

চাষীর মুখে হাসি ফোটে ফসলের মাঠ হেসে উঠলে। আবার সেই হাসি নিভতেও সময় লাগে না, যদি শ্রমের বিনিময়ে প্রাপ্ত ফসল বাজারে ন্যায্য দাম না পায়। পেঁয়াজের কথাই ধরা যাক। বাঙালীর প্রতি বেলার আহারের অনিবার্য খাদ্যবস্তু এটি। পেঁয়াজ ছাড়া যেমন কোন তরকারি রান্নার কথা গৃহিণীরা ভাবতেই পারেন না, তেমনি কৃষকের পাতে এক টুকরা কাঁচা পেঁয়াজ থাকবে না- এটাও মানা যায় না। ষোলো কোটিরও বেশি মানুষের এই দেশে তাই পেঁয়াজের চাহিদা প্রচুর। তবে দেশের চাষীরা উৎপাদন করেন চাহিদার চেয়ে কম, সেটাও এক অর্থে বিশাল। চলতি বছর অবশ্য পেঁয়াজে বাম্পার ফলন হয়েছে। অন্য বছর উৎপাদন ঘাটতি থাকে। সেটি পূরণ করতে প্রতিবেশী দেশসমূহ থেকে আমদানি করার প্রয়োজন পড়ে। এক্ষেত্রে আমদানির প্রধান উৎস হয় প্রতিবেশী দেশটি। ভারত রফতানিমূল্য বাড়ালে দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায় স্বাভাবিকভাবে আর কমালে কমে। কয়েক মাস আগে ভারতে বন্যা পরিস্থিতির কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশটির কৃষি বিভাগ পেঁয়াজের ন্যূনতম রফতানিমূল্য ২০০ ডলার থেকে (টনপ্রতি) দফায় দফায় বাড়িয়ে ৭০০ ডলারে উন্নীত করে। এর ফলে দেশের বাজারে পণ্যটির দাম এক লাফে ৭৫-৮০ টাকায় (কেজিপ্রতি) উঠে যায়। পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা চীন, মিসর, মিয়ানমার, পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করলেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সে সময় পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। অত দামে কিনতে গিয়ে সাধারণ ভোক্তাদের সমস্যায় পড়তে হয়। অথচ এখন মাত্রাতিরিক্ত কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হচ্ছে পেঁয়াজ চাষীদের। মাঠ পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮-১০ টাকায়। চাষীদের দাবি, উৎপাদনে ২০ টাকা খরচ হয়েছে প্রতি কেজিতে। এই বাস্তবতায় উৎপাদক পর্যায়ে চাষীরা বড় ধরনের লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন। যদিও রাজধানী ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা পর্যন্ত। রাষ্ট্রীয় সংস্থা টিসিবিকে পেঁয়াজ সংরক্ষণ, আমদানি হলে শুল্ক পুনর্বহাল এবং পেঁয়াজ উৎপাদনে চাষীদের ভর্তুকি প্রদানের দাবি তোলা হয়েছে। আমরা মনে করি কৃষকের স্বার্থরক্ষার কাজটি সবার আগে। রবি মৌসুমে নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করলে সংরক্ষণের অভাবে তা পানির দামে ছেড়ে দিতে হবে- এটা কোন কাজের কথা নয়। তাই এক্ষেত্রে পণ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন জরুরী। দেশে পেঁয়াজসহ কিছু কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচের সঙ্গে বাজারদরের মিল না থাকাটা অগ্রহণযোগ্য। এই বাজারমূল্যের বড় অংশটি যদি কৃষকের কাছে যেত তাহলে দেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ত। কিন্তু এই অতিরিক্ত দামের অর্থ যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে। এরাই মূলত কৃষিপণ্য, বিশেষ করে সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের কাঁচাপণ্যের দাম বাড়িয়ে থাকে। এই দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোন ধরনের নিয়ম মানা হয় না কিংবা এসব পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের কোন কার্যকর ব্যবস্থাও নেই। এদিকে সরকার দৃষ্টি দিলে কৃষকরা উপকৃত হবে। সেইসঙ্গে আরেকটি বিষয়ও খেয়াল রাখা দরকার- পেঁয়াজের উৎপাদন মৌসুমে বিদেশ থেকে আমদানি বন্ধ রাখলে খানিকটা সুবিধা হবে। আমরা চাই কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠুক।
×