ডিজিটাল শুমারি
গণনার কাজ শেষ হলেও এখনও অনেকেই রয়ে গেছেন ষষ্ঠ গণশুমারির গণনার বাইরে। গণনাকারীরা অনেক ক্ষেত্রে বাসায় বাসায় যাননি। অনেক বাসায় না গিয়েও বাইরে দরজায় ‘গণনা হয়ে যাওয়ার স্টিকার’ লাগিয়ে দিয়েছেন।
দেশজুড়ে ১৫ থেকে ২১ জুন ষষ্ঠ ধাপের জনশুমারির কাজ হয়। এবারের জনশুমারিকে ‘ডিজিটাল শুমারি’ আখ্যা দেয়া হয়। জনশুমারি ও গৃহগণনা কার্যক্রমে দেশজুড়ে ৩ লাখ ৬৫ হাজার গণনাকারী ট্যাবের সাহায্যে ৭ দিন ধরে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। বন্যাকবলিত সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলায় এক সপ্তাহ সময় বাড়িয়ে ২৮ জুন পর্যন্ত গণনা কার্যক্রম চালানো হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই গণনা থেকে বাদ পড়ার অভিযোগ তুলছেন। জানা গেছে, খোদ রাজধানীতেই অনেক মানুষ গণশুমারির বাইরে থেকে গেছেন। গণশুমারি শেষে গত মঙ্গলবার পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জনশুমারির কাজে অবহেলা হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘জনশুমারি ও গৃহগণনার কাজের দায়িত্বশীল মন্ত্রী হিসেবে স্বীকার করছি, এবারের মানুষ গোনার কাজে অবহেলা হয়েছে।’
জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের পরিচালক দিলদার হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাছে এ রকম অভিযোগ ছিল। এসব নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, পরিবারের অন্য কেউ তথ্য দিয়ে দিয়েছে, যারা অভিযোগ করেছে তারা জানে না।’ কোন বাসায় গণনাকারী গিয়ে কাউকে না পেলে প্রতিবেশীর কাছ থেকে তথ্য নিতে পারে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ । যদি গিয়ে না পায়, তাহলে তো তাদের গণনার বাইরে রাখা যাবে না।’
গণনা না করেও বাসায় স্টিকার লাগিয়ে চলে আসার অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একদিকে কাজ শুরু করে আবার সেই দিকে যাওয়ার কথা রয়েছে। তাই হয়তো বা এ রকম হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ২১ তারিখের পর পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা হটলাইন চালু রেখেছি। যারা গণনার বাইরে ছিল তাদের জন্য সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’
প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন বলেন, ‘উপজেলাগুলোতে নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও)র সভাপতিত্বে একটি কমিটি করা হয়েছিল। সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনারকে সভাপতি করে কমিটি করা হয়েছে। যেহেতু ডিজিটাল শুমারি হয়েছে, তাই এ্যানড্রয়েড (ট্যাব) চালাতে পারে কি না, সেটা দেখা হয়েছে। কোথাও লিখিত পরীক্ষা আবার কোথাও মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে তাদের বাছাই করা হয়েছে।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তারা বলছেন, স্বাধীনতার পর এখন পর্যন্ত দেশে পাঁচটি আদমশুমারি হয়েছে। ১৯৭৪ সালে প্রথম, ১৯৮১ সালে দ্বিতীয়, ১৯৯১ সালে তৃতীয়, ২০০১ সালে চতুর্থ এবং ২০১১ সালে পঞ্চম আদমশুমারি হয়।
২০১১ সালের শুমারি অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা ১৪ কোটি ৯৮ লাখ। ১০ বছর পর পর শুমারি হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
২০১৩ সালে পরিসংখ্যান আইনের মাধ্যমে আদমশুমারি শব্দটিকে পরিবর্তন করে জনশুমারি করা হয়। আগের প্রতিটি শুমারি হয়েছিল জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে। এবারই প্রথম বর্ষাকালে জনশুমারি হয়েছে।
শুমারির জন্য প্রথম সময় নির্ধারণ করা হয় গত বছরের ২ থেকে ৮ জানুয়ারি। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে পিছিয়ে ২৫ থেকে ৩১ অক্টোবর ও পরে ২৫ থেকে ৩১ ডিসেম্বর সময় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ট্যাব কেনাকাটার জটিলতার কারণে তৃতীয় দফার সময় পিছিয়ে ১৫ থেকে ২১ জুন সময় ঠিক করা হয়। এবার শুমারিতে ৩ লাখ ৬৫ হাজার গণনাকারী ও ৬৩ হাজার সুপারভাইজার তথ্য সংগ্রহ করেছেন।