ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী ও বিরোধী দলের সমর্থন ঘোষণা মাহিন্দা ও তার দোসরদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

রনিল বিক্রমাসিংহে শ্রীলঙ্কার নয়া প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ১৩ মে ২০২২

রনিল বিক্রমাসিংহে শ্রীলঙ্কার নয়া প্রধানমন্ত্রী

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ অর্থনৈতিক সঙ্কট ঘিরে সহিংস বিক্ষোভে টালমাটাল শ্রীলঙ্কায় মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগের পর ২৬তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন রনিল বিক্রমাসিংহে। সরকার ও বিরোধী দল বিক্রমাসিংহের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেছে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান লঙ্কান প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে। ৭৩ বছর বয়সী বিক্রমাসিংহে প্রেসিডেন্টের সরকারী বাসভবনে ষষ্ঠবারের মতো শপথ নেন এবং তারপর আশীর্বাদ নিতে ওয়ালুকারমা মন্দিরে যান। রনিল বিক্রমাসিংহে শ্রীলঙ্কার ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) নেতা এবং পাঁচবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে সদ্য পদত্যাগকারী প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ও তার দোসরদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার মাহিন্দা, তার রাজনীতিবিদ পুত্র নামাল এবং আরও ১৫ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন স্থানীয় একটি আদালত। এই তথ্য জানিয়েছে শ্রীলঙ্কান সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিরর। খবর সিলন টুডে ও এনডিটিভির। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, বিক্রমাসিংহে ২২৫ সদস্যের শ্রীলঙ্কান সংসদে সরকার ও বিরোধীদলের সমর্থন নিয়ে একটি ‘ঐক্য’ সরকারের প্রধান হয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। সে বৈঠকেই চূড়ান্ত করা হয় আরেকবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী হবেন বিক্রমাসিংহে। ডেইলি মিররের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শপথ নেয়ার পর বিক্রমাসিংহে কলম্বোর একটি মন্দির পরিদর্শন করবেন এবং এরপর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। দেশব্যাপী টানা বিক্ষোভের মুখে গত সোমবার শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান মাহিন্দা রাজপাকসে। এরপরও দুদিন ধরে জ্বলে বিক্ষোভের আগুন। দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্ত্রী-এমপিদের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়। রাস্তায় রাস্তায় যানবাহনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। সহিংসতায় মারা যান এক এমপিসহ অন্তত ৮ জন। শ্রীলঙ্কার রাজপথে বিক্ষোভকারীদের তোপের মুখে পড়েন সরকারী দলের নেতাকর্মী ও সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের অনেকের গায়ের কাপড় খুলে মারধর করতে দেখা যায়। এ অবস্থায় দেশব্যাপী কড়া কার্ফু জারি করে সরকার। সরকারী সম্পদ ধ্বংস করতে দেখলে সঙ্গে সঙ্গেই গুলির নির্দেশ দেয়া হয় সেনাবাহিনীকে। এ পরিস্থিতিতে বুধবার থেকে সহিংসতা কিছুটা কমলেও বিক্ষোভ এখনও অব্যাহত আছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি হলো প্রেসিডেন্ট গোটাবায়াসহ রাজাপাকসে পরিবারের সবাইকেই পদত্যাগ করতে হবে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করছেন না। তিনি রনিল বিক্রমাসিংহেকে নিয়ে নতুন সরকার গঠন করলেন। এদিকে বুধবার রাতে গুজব ছড়িয়ে পড়ে সদ্য পদত্যাগ করা মাহিন্দা রাজাপাকসে এবং তার পরিবারের অন্য সদস্যরা ভারতে পালিয়ে গেছেন। সেই খবর কলোম্বোর ভারতীয় হাইকমিশন থেকে নাকচ করা হয়। রাজাপাকসের সন্ধানে বিক্ষোভকারীরা ত্রিঙ্কোমালির একটি নৌঘাঁটিতে জড়ো হয়েছেন। শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পর মাহিন্দা রাজাপাকসে বর্তমানে উত্তর-পূর্বের একটি নৌঘাঁটিতে অবস্থান করছেন। বড় বড় প্রকল্পের নামে ভুল বিনিয়োগ, বিদেশী রাষ্ট্র ও সংস্থা থেকে অপরিণামদর্শী ঋণগ্রহণ এবং কোভিড সময়ের ভুল নীতির কারণে শ্রীলঙ্কা সম্প্রতি চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। ডলারের জোগান না থাকায় বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। তারা বিদেশী ঋণ শোধ করতে পারবে না বলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেয়। অর্থাৎ নিজেদের একপ্রকার দেউলিয়া ঘোষণা করে। দেশটিতে তৈরি হয় চরম মানবিক সঙ্কট। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও খাবারের দাম আকাশচুম্বী হয়ে যায়। প্রতিবাদে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে রাস্তায় নেমে আসে সাধারণ মানুষ। তারা ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ এনে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ বিক্ষোভে যোগ দেয় শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট ও বিনোদন জগতের তারকারাসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষ। তারা রাজাপাকসে পরিবারকে দেশের এই দুরবস্থার জন্য দায়ী করে এবং এজন্য প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীসহ ওই পরিবারের সবার পদত্যাগ দাবি করে। উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কায় গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হলেও তাদের মন্ত্রিসভার অর্ধেকের বেশি সদস্যই ছিল রাজাপাকসে পরিবারের। ফলে সেখানে একরকম পরিবারতন্ত্র চলছিল। রনিল বিক্রমাসিংহের পরিচয় ॥ ১৯৪৯ সালের ২৪ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন রনিল বিক্রমাসিংহে। ১৯৭৭ সালে প্রথমবারের মতো দেশটির সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। সে সময় তিনিই সবচেয়ে কম বয়সে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন। ১৯৯৪ সালের পর থেকে তিনি ইউএনপির নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বেশকিছু রাজনৈতিক সূত্রের মতে, শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাসীন পোদুজানা পেরামুনা (এসএলপিপি), প্রধান বিরোধী দল সামাগি জানা বালাওয়েগয়ার (এসজেবি) একটি অংশ এবং আরও কয়েকটি দল সংসদে বিক্রমাসিংহের পক্ষে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে সমর্থন প্রকাশ করেছে। বিক্রমাসিংহে ২২৫ সদস্যের শ্রীলঙ্কান সংসদে সরকার ও বিরোধীদলের সমর্থনে একটি ‘ঐক্য’ সরকারের প্রধান হয়েছেন। ইউএনপির চেয়ারম্যান ভাজিরা আবেবর্দেনা বলেছেন, বিক্রমাসিংহে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন বলে আশা করছেন তারা। শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে পুরনো দল হিসেবে পরিচিত ইউএনপি। কিন্তু ২০২০ সালের নির্বাচনে দলটি মাত্র একটি আসন পায়।
×