ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রমাগত সঙ্কুচিত হচ্ছে

করোনায় বিদেশে শ্রমবাজারে চরম মন্দা

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ৪ মার্চ ২০২১

করোনায় বিদেশে শ্রমবাজারে চরম মন্দা

ফিরোজ মান্না ॥ করোনা মহামারীতে বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজারে চরম মন্দা যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি কর্মী যান মধ্যপ্রাচ্যে। সেই মধ্যপ্রাচ্যের বাজার ক্রমাগত সঙ্কুচিত হচ্ছে। এর পরেই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। এই বাজারটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। কর্মী নিয়োগে সরকারী প্রচেষ্টা থাকলেও তা খুব একটা কাজে দিচ্ছে না। শ্রমবাজারে সঙ্কট তৈরি হওয়ায় ২০১৮ সালে জনশক্তি রফতানি কমে দাঁড়িয়েছে ২৭ শতাংশে। ২০১৯ সালের পরিস্থিতিও একই রকম ছিল। আর ২০২০ সালে করোনা পরিস্থিতির কারণে শ্রমবাজার প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মনিরুছ সালেহীন অবশ্য জনকণ্ঠকে বলেছেন, বিভিন্ন দেশে আবার কর্মী নিয়োগ শুরু হয়েছে। জানুয়ারিতে ৫০ হাজার কর্মী বিদেশে চাকরি নিয়ে গেছেন। বিএমইটি সূত্র জানিয়েছে, দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার হচ্ছে সৌদি আরব। এই বাজারে বাংলাদেশ থেকে ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ কর্মী চাকরি নিয়ে যাচ্ছেন। সৌদি আরবে বেকারত্ব বেড়ে এখন ১২ শতাংশ। ফলে সে দেশে বাজার সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। আরব আমিরাতের বাজার খুললেও তা সীমাবদ্ধ শুধু গৃহকর্মী খাতে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়ার বাজার বন্ধ আছে। এই বাজারটি খুলছে খুলছে করে আর খুলছে না। এই তিন বড় বাজারে সঙ্কটের কারণে জনশক্তি রফতানি কমে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মনিরুছ সালেহীন জনকণ্ঠকে বলেন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আবর আমিরাত, রুমানিয়া, কাতারসহ কয়েকটি দেশে কর্মী নিয়োগ হচ্ছে। অপ্রচলিত বাজারেও কর্মী যাচ্ছে। তিন মাস আগেও কর্মী নিয়োগ অনেক কম ছিল। জানুয়ারিতে ৫০ হাজার কর্মী বিদেশে চাকরি নিয়ে গেছেন। সংযুক্ত আবর আমিরাতে কর্মীরা ভিজিট ভিসা নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে আমাদের দূতাবাস কর্মীদের এ্যাটাস্টেশন করে দিচ্ছে। পরে তারা সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে কাজ করছেন। যদিও বাজারটি দীর্ঘদিন ধরে অফিসিয়ালি বন্ধ রয়েছে। এদিকে সৌদি আরবে অভ্যন্তরীণ বেকারত্ব কমাতে ১২ ধরনের কাজে কোন বিদেশী নেবে না সৌদি আরব। এসব কাজে সৌদিদের চাকরি দেয়া হচ্ছে। ১০ সদস্যের সিন্ডিকেট মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে অনিয়ম দুর্নীতি করায় বাজারটি বন্ধ হয়ে গেছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এরপর থেকে বাজারটি খোলার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। বাজারটি যখন খোলার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে ঠিক তখনই ২৫ সদস্যের সিন্ডিকেট বাজারটি দখল করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। এ অবস্থায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়া বাংলাদেশ যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়ে গেছে। মালয়েশিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর আগের কর্মী নিয়োগ পদ্ধতি (মাত্র ১০ এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠানো) বাতিল করে সে দেশের সরকার। বাংলাদেশ সরকারের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্র জানিয়েছে, জাপান ও থাইল্যান্ডে কাজের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। কিন্ত এই বাজার দুটিতেও বাংলাদেশ ভাল কিছু করতে পারছে না। জাপান যেতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। ২৬টি স্থানে প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে। চলমান এ প্রক্রিয়ায় কয়েক মাসের মধ্যেই জাপানে জনশক্তি রফতানি বাড়তে পারে। তবে এসব কর্মীদের সরাসরি জাপান কর্তৃপক্ষ নিয়োগ দিয়ে আসছে। এখানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোন হাত নেই। থাইল্যান্ডে বেকারত্বের হার বর্তমানে দশমিক ৮ শতাংশ। ফলে দেশটিতে বাজার তৈরি করার সুযোগ রয়েছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে নার্সেল সহকারী, গৃহকর্মী, নির্মাণকাজ ও মাছ ধরার ট্রলারে কর্মীর চাহিদা আছে। এই সংখ্যা তিন থেকে চার লাখ হতে পারে বলে মনে করছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। বায়রার এক কর্মকর্তা বলেন, থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা বিমান ভাড়াসহ তিন মাসের প্রশিক্ষণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এর আগেও একবার থাইল্যান্ডের বাজার নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দুই সরকারের মধ্যে চুক্তির প্রস্তাব দিলে বিষয়টি কেন কি কারণে যেন থেমে যায়। রিফিউজি এ্যান্ড মাইগ্রেটেরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) জানিয়েছে, শ্রমবাজারের উন্নয়নে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে তেমন কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এক সময় অনেক দেশে বৈধভাবে কর্মসংস্থানের জন্য কর্মীরা গেলেও গত কয়েক বছরে সেই বাজার অনেকটাই সঙ্কুচিত হয়ে উঠেছে। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বে শ্রমবাজার আরও চাপে পড়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সরকারী তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের ১৭২টি দেশে চাকরি নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের কর্মীরা। প্রতিবছর বাংলাদেশে থেকে সরকারীভাবে ৯ থেকে ১০ লাখ কর্মী বিদেশে চাকরি নিয়ে যান। এদের বেশিরভাগই যান অদক্ষ কর্মী হিসেবে। এই অদক্ষ কর্মীরাই এক সময় দক্ষ কর্মী হন। যখন একজন কর্মী দক্ষ তৈরি হন তখন তার দেশে ফেরার সময় হয়ে যায়। এ কারণে অনেকে অবৈধ হয়ে যায়। তারা পরে খরচের টাকার বাইরে আরও কিছু টাকা তোলার জন্য লুকিয়ে কাজ করেন। কেউ কেউ সংশ্লিষ্ট দেশের পুলিশের হাতে ধরা পড়ে দেশে ফিরে আসেন। আবার কেউ জেল জরিমানায় পড়ে যান। এ কারণে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর ওপর মন্ত্রণালয় জোর দিয়েছে। এখন দেশে বিপুলসংখ্যক দক্ষ কর্মী তৈরি হয়েছে।
×