ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

খালি জায়গা নতুন করে দখল হচ্ছে

অভিযান সত্ত্বেও তুরাগ ও বুড়িগঙ্গা তীরের অবৈধ স্থাপনা পুরো সরেনি

প্রকাশিত: ১১:২২, ২০ মার্চ ২০২০

অভিযান সত্ত্বেও তুরাগ ও বুড়িগঙ্গা তীরের অবৈধ স্থাপনা পুরো সরেনি

গাফফার খান চৌধুরী ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কড়া নির্দেশনার পর দফায় দফায় অভিযান চালানো হলেও তুরাগ নদ ও বুড়িগঙ্গা নদীর দুপাড়ের অবৈধ স্থাপনা পুরোপুরি সরেনি। অনেক জায়গায় নদ নদীর পাশের মালিকাধীন জায়গার ওপরের স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। উপরন্তু অভিযানের পর খালি জায়গায় নতুন করে মাটি ভরাট করে নানা স্থাপনা তৈরি হয়েছে। মিরপুরের দিয়াবাড়ি থেকে বছিলা ব্রিজ হয়ে ঝাউচর পর্যন্ত তুরাগ ও বুড়িগঙ্গা নদীর বিভিন্ন জায়গায় এমন চিত্র চোখে পড়েছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের পর খালি জায়গায় মাটি ভরাট করে শুধু তুরাগ নদের ভেতরেই তিনটি বিশাল ট্রাকস্ট্যান্ড করা হয়েছে। মঙ্গলবার সরেজমিনে মিরপুরের দিয়াবাড়ি, আমিন বাজারের বড়দেশী, গাবতলী, মোহাম্মদপুর বছিলা, মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যানসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। মিরপুরের দিয়াবাড়ি ঘাটের কাছেই তুরাগ নদের ভেতরে একটি ছয়তলা বাড়ি রহস্যজনকভাবে টিকে আছে। বাড়ির আশপাশে আরও কয়েকটি বাড়ি রয়েছে। তবে এসব বাড়ির চারদিকের সব স্থাপনা অবৈধ বলে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দিয়াবাড়ি ঘাটের ঠিক কাছেই নিচে মাটি ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে ট্রাক স্ট্যান্ড। আর দিয়াবাড়ি থেকে গাবলতী পর্যন্ত উচ্ছেদ করা দুটি জায়গায় নতুন করে মাটি ভরাট করা হয়েছে। সেখানে স্থাপন করা হয়েছে দুটি বড় বড় ট্রাক স্ট্যান্ড। সেখানে শত শত ট্রাক রাখা হয়েছে। গাবতলীর আমিন বাজারের বড়দেশী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর বলছিলেন, তারা ঢাকার চারদিকের নদ-নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিরুদ্ধে নয়। তবে কাজটি সঠিকভাবে হয়নি। নদ-নদীর জায়গা ভেবে অনেক প্রকৃত জমির মালিকের ছোট ছোট স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে আমিন বাজার বড়দেশী মৌজায় তার ১১ শতাংশ জমিও রয়েছে। তার মতো অনেকেরই এমন পরিস্থিতি হয়েছে। নদ-নদীর জায়গা উদ্ধার করতে গিয়ে প্রকৃত মালিকাধীন জায়গা কেটে দেয়া হয়েছে। এমন জায়গার পরিমাণ যদিও খুব বেশি নয়। কয়েকজনের মিলে পাঁচ একরের মতো হবে। অথচ এসব জমির আশপাশের অনেক জায়গার ওপর থাকা স্থাপনা রহস্যজনকভাবে টিকে আছে। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। বিষয়টির সুরাহা হয়নি। এমন অভিযোগ করেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় বাসিন্দা জোনায়েদ আহম্মেদ, মিনহাজ উদ্দিন, শিশু রঞ্জন মজুদার, শামসুন্নাহার, ময়না বেগমসহ অনেকেই। এদের অভিযোগ বিআইডব্লিউটিএ’র লোকজন নদী খননের নামে বিভিন্নভাবে তাদের কাছে অনৈতিক সুবিধা দাবি করে ব্যর্থ হয়ে তাদের মালিকানাধীন জমি থেকে বিনা নোটিসে মাটি কেটে নিয়েছে। জমি হারিয়ে তারা এখন নিঃস্ব। টাকার বিনিময়ে অনেক স্থানীয় প্রভাবশালী তাদের অবৈধ স্থাপনা টিকিয়ে রেখেছেন। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ-এর যুগ্ম পরিচালক ও ঢাকা নদী বন্দরের নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা একেএম আরিফ উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, নদীকে ঘিরে গড়ে ওঠা সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান অব্যাহত আছে এবং থাকবে। ইতোমধ্যেই নদীর পাড়ের হাজার হাজার স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। যার মধ্যে তিন হাজারের বেশি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানে তুরাগ নদের যে জায়গা দখলে ছিল তাও উদ্ধার করা হয়েছে। উচ্ছেদকালে প্রকৃত মালিকাধীন কোন জমি কেটে নেয়ার সুযোগ নেই। তারপরেও ভুলবশত কোন প্রকৃত মালিকের জমি কাটা পড়লে, ওই জমির মালিক অভিযোগ করতে পারেন। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। নতুন করে উচ্ছেদ করা জায়গায় আস্তে আস্তে আবারও স্থাপনা গড়ে তোলার চেষ্টা করার বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি তারা নজরে রেখেছেন। সরেজমিনে সেসব জায়গার ওপর নজর রাখা হচ্ছে। নতুন করে নদের জায়গা দখল করার আর কোন সুযোগ নেই। মোটাদাগে যারা বড় বড় দখলকারী ছিল তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি আরও বলেন, নদের কাছে দিয়াবাড়ি ঘাটে একটি বিশাল ছয়তলা বাড়ি আছে। সেটিও আমরা ভাঙ্গতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ভবনটি নির্মাণের ক্ষেত্রে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমতি থাকায় বাড়িটি আর ভাঙ্গা যায়নি। তিনি আরও জানান, নদের জায়গায় গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদের ক্ষেত্রে মানবসৃষ্ট বড় বড় স্থাপনার বিষয়ে নানা ধরনের ব্যাখ্যা আছে। যার মধ্যে মানবসৃষ্ট সেসব স্থাপনা যা নদের ¯্রােতে বা কোন কিছুতেই নদের গতিপথকে আর স্বাভাবিক করতে পারবে না, সেসব ক্ষেত্রে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে। দিয়াবাড়িতে যে স্থাপনা টিকে আছে, তার কারণে নদের গতিপথ একেবারেই বদলে গেছে। ওই স্থাপনা ভেঙ্গে দিয়ে নদের গতিপথ স্বাভাবিক হবে কিনা সে বিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে নদের ¯্রােতের যে গতি আর কোনদিনই স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভবনা নেই। নদ নদীর ওপর গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা ভাঙ্গার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের সুনির্দিষ্ট নির্র্দেশনা পুরোপুরি মানা হচ্ছে।
×