ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার স্থাপন

পরিকল্পনার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না বিতরণ কোম্পানি

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯

পরিকল্পনার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না বিতরণ কোম্পানি

রশিদ মামুন ॥ প্রিপেইড মিটার স্থাপনে সরকারের পরিকল্পনার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানি। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে দেশের দুই কোটি গ্রাহকের ঘরে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের নির্দেশ দেয়। কিন্তু বিতরণ কোম্পানিগুলো সরকারের কাছে সম্মিলিত যে হিসেবে দিয়েছে তাতে দেখা যায় এখন ৩১ লাখ মানুষের ঘরে প্রিপেইড মিটার রয়েছে। বাকি এক কোটি ৭০ লাখ মানুষের ঘরে এক বছরের মধ্যে প্রিপেইড মিটার স্থাপন সম্ভব কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিতরণ কোম্পানি যে পরিকল্পনা সরকারের কাছে দাখিল করেছে তাতে বলা হচ্ছে আর সর্বোচ্চ ৪২ লাখ মানুষের ঘরে প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা সম্ভব হবে। বিদ্যুতের অপচয়, সিস্টেম লস ও চুরি ঠেকাতে প্রিপেইড মিটার স্থাপনকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। একটি পক্ষ আধুনিক এই বিদ্যুত বিতরণের বিরোধিতা করলেও সারাবিশ্বে এখন প্রিপেইড মিটার এবং স্মার্ট প্রিপেইড মিটারেই বিদ্যুত বিতরণ করা হয়ে থাকে। দেশেও প্রিপেইড মিটার স্থাপনকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। কিন্তু মিটারের সঙ্কটের কারণেই প্রিপেইড মিটার স্থাপনে গতি আসছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, নির্দিষ্ট কোম্পানির বাইরে মিটার কেনা হচ্ছে না। এক্ষেত্রে মিটার সরবরাহে একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। এক্ষেত্রে কোন বিতরণ কোম্পানি ৩৫ ডলারে মিটার কিনলেও কেউ কেউ আবার তা কিনছেন ৫২ ডলারে। অভিযোগ রয়েছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দরপত্রের বাইরে গিয়ে পারস্পরিক দরকষাকষির মাধ্যমে নির্দিষ্ট কোম্পানিকে কাজ দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে কেউ কেউ। সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়াতে প্রিপেইড মিটার স্থাপনে ব্যয় যেমন বাড়ছে সময় তেমন বেশি লাগছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, কোন কোম্পানি এক লাখ মিটারের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দিলে এক্ষেত্রে পাঁচ ডলার দাম বাড়িয়ে দিলেও বিপুল পরিমাণ ব্যবসা হয়। আর এই পাঁচ ডলারের ভাগাভাগি করতে গিয়েই মিটার স্থাপনে বিলম্ব হচ্ছে। তিনি বলেন, নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে কোন কোন সিন্ডিকেট কাজ হাতিয়ে নিচ্ছে। বিতরণ কোম্পানিগুলো গত অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের যে চিত্র বিদ্যুত বিভাগকে জানিয়েছে তাতে দেখা যায়, মাত্র ৩১ লাখ পাঁচ হাজার ৪১০টি প্রিপেইড মিটার স্থাপন করেছে সবগুলো বিতরণ প্রতিষ্ঠান। দেশের ছয়টি বিতরণ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ১১ লাখ ৪৫ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপন করেছে। এছাড়া পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ১০ লাখ ১০ হাজার ৫৬৯, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) চার লাখ ৪১ হাজার ৫১৯, ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) দুই লাখ ৯৩ হাজার ৮৩৮, ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এক খাল ৯৫ হাজার ৫৯১, নর্দান ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) ১৮ হাজার ৮৪৯ মিটার স্থাপন করেছে। বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলো এখন নিজেরাই মিটার স্থাপন করছে। এক্ষেত্রে গ্রাহকের কাছ থেকে তারা মাসে ৪০ টাকা করে মিটার ভাড়া নিচ্ছে। প্রিপেইড মিটারগুলো বেশি দামে কেনার কারণেই ভাড়াও বেশি আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে হিসেব বলছে একটি মিটারের আয়ুষ্কাল ১০ বছর ধরে হিসেব করলে একটি মিটারের যে দাম তার দ্বিগুন ভাড়া হিসেবে আদায় করছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। সরকারের কাছে বিতরণ কোম্পানি যে পরিকল্পনা জমা দিয়েছে তাতে দেখা যায় বিতরণ কোম্পানিগুলো ২০২১ সাল পর্যন্ত আরও ৪২ লাখ ৫০ হাজার মিটার স্থাপন করা হতে পারে। তবে দ্রুততার সঙ্গে মিটার স্থাপনে সরকার এই দায়িত্ব গ্রাহকের কাছে ছেড়ে দিতে চাচ্ছে। এজন্য একটি নীতিমালাও তৈরি করা হয়েছে। তবে খোলা বাজারে কোথাও এই মিটার পাওয়া যায় না। খোদ ঢাকা শহরে মিটার সঙ্কটের কারণে একটি বাড়িতে দুই ধরনের মিটার রয়েছে। একটি বাড়িতে ডিজিটাল মিটারের সঙ্গে প্রিপেইড মিটারও রয়েছে। পরিকল্পনায় দেখা যায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে পিডিবি ছয় লাখ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ১১ লাখ মিটার স্থাপন করবে। একই সময়ে আরইবি সাড়ে নয় লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপন করবে। যার মধ্যে সাত লাখ প্রথম বছর এবং আড়াই লাখ দ্বিতীয় বছর। ডিপিডিসি ২০১৯-২০ এ ৫০ হাজার এবং ২০-২১ এ ৭৬ হাজার মিটার স্থাপন করবে। ডেসকো দুই বছরের প্রতিবছর দুই লাখ করে মিটার স্থাপন করবে। ওজোপাডিকো ২০১৯-২০ এ তিন লাখ ৭০ হাজার এবং ২০২০-২১ এ দুই লাখ মিটার স্থাপন করবে। আর নেসকো প্রথম বছরে এক লাখ এবং ২০২০-২১ এ চার লাখ মিটার স্থাপন করবে। সারাদেশে এখন তিন কোটি ৬০ লাখের ওপরে বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছে। ক্রমান্বয়ে এই সংখ্যা বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে সব গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার দিতে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
×