ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রেনেড হামলা মামলার পলাতক ১৮ আসামি কে কোথায়

প্রকাশিত: ১০:৩১, ১ জুলাই ২০১৯

 গ্রেনেড হামলা মামলার পলাতক ১৮ আসামি কে কোথায়

শংকর কুমার দে ॥ একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক ১৮ আসামি কে কোথায়- জানে না কেউ। মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবনসহ দন্ডপ্রাপ্ত এসব পলাতক আসামি ফিরিয়ে আনারও কোন উদ্যোগ নেই। এ জন্যে সাজা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। পলাতক এই ১৮ জনের মধ্যে চার জনের নাম ইন্টারপোলের রেড নোটিসের তালিকায় রয়েছে। এরা হচ্ছে, বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, কুমিল্লার মুরাদনগরের বিএনপির সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদ নেতা মাওলানা তাইজউদ্দিন মিয়া ও রাতুল বাবু। পলাতক ১৯ জনের মধ্যে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের লন্ডনে অবস্থান ছাড়া বাকি ১৮ জন কোথায় আছে কেউ জানেন না। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় আসামির সংখ্যা ৫২। এর মধ্যে যুদ্ধাপরাধীর মামলায় জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সিলেটে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলায় হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল বিপুলের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তাদের এই মামলা থেকে বাদ দেয়ায় আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৯। এদের মধ্যে কারাগারে রয়েছে ২২। জামিনে আছে ৮, পলাতক ১৯। এর মধ্যে বেগম জিয়ার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে আছেন। অপর ১৮ জনকে কোথায়- কেউ জানে না। পুলিশ সদর দফতর সূত্র মতে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ, পুলিশের সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান ও ডিএমপির সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান। জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদ নেতা মাওলানা মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মুরসালিন ওরফে মুরসালিন, মোহাম্মদ খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মোঃ ইকবাল, মাওলানা আবুবকর ওরফে হাফেজ লোকমান হাওলাদার, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের ও মুফতি শফিকুর রহমান পলাতক। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন। ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি প্যারোলে মুক্তি নিয়ে লন্ডনে চলে যান। তখন থেকে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। ’১৪ সালে তারেক রহমানকে ফেরত দেয়ার জন্য যুক্তরাজ্য সরকারকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হলেও এ বিষয়ে কোন অগ্রগতি এখন পর্যন্ত নেই। পুলিশ সদর দফতরের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পলাতক আসামিরা কে কোথায় আছে তা খুঁজে বের করার জন্য ইন্টারপোলের সাহায্য নেয়া হচ্ছে। পলাতকরা কে কোন দেশে অবস্থান করছে তা চিহ্নিত করে সেসব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করা হবে। পলাতকদের গ্রেফতারে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পলাতকরা দেশে কিংবা বিদেশে কে কোথায় অবস্থান করছে সে বিষয়ে জানতেও তারা কাজ করে যাচ্ছেন। পলাতক ১৯ আসামির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজনের অবস্থান সম্পর্কে অবহিত আছে সরকার বলে জানান তিনি। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শনিবার গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে একটি ট্রাকে তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে দলের প্রধান এবং তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা বক্তৃতা শেষ করার পর পরই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কযেক শ’ নেতাকর্মী। ওই হামলার ঘটনায় দুটি মামলা করা হয়- একটি হত্যা মামলা, অপরটি বিস্ফোরক আইনের মামলা। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানের যাবজ্জীবন সাজা হওয়ায় বিএনপিতে তার নেতৃত্বে থাকার বৈধতার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। এখন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় রায়ের পর বিএনপিকে সন্ত্রাসী ও খুনীদের দল বলে প্রচার করবে প্রতিপক্ষরা। তারেক রহমান এক দশক ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। আইনের চোখে তিনি পলাতক। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টিও ঝুলে আছে। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ফেরার আসামি একটি রাজনৈতিক দলের প্রধানের দায়িত্ব নিয়ে নেতৃত্ব দেয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী। বিশেষ করে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিরা কে কোথায় আছে তা চিহ্নিত করে দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করা রাষ্ট্র ও সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
×