ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভূমি সমস্যা নিয়ে সরকার যে কাজ করছে তাতে মৌলিক পরিবর্তন আসছে না’

প্রকাশিত: ১০:০৫, ২১ জুন ২০১৯

‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভূমি সমস্যা নিয়ে সরকার যে কাজ করছে তাতে মৌলিক পরিবর্তন আসছে না’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ গেজেট অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৫০টি ক্ষুদ্র ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বসবাস। কিন্তু বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট এ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (সেড) গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে আরও ৫০ জনগোষ্ঠী রয়েছে, যাদের অনেকগুলোর অস্তিত্ব বিলুপ্তির পথে। সংস্থা বলছে, জমির দলিল দেখাতে না পারায় একটি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বন- মামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এলজিইডি মিলনায়তনে ‘প্রান্তিক ও বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর বৈষম্য, বিচ্ছিন্নতা এবং অধিকার’ শিরোনামে আয়োজিত জাতীয় সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান। ‘প্রান্তিক ও বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর বৈষম্য, বিচ্ছিন্নতা এবং অধিকার : বস্তুনিষ্ঠ বাস্তবতা’ শিরোনামে সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের করেন সেডের পরিচালক ফিলিপ গাইন। তিনি জানান, ১৫৬টি চা বাগানে এখন ৮০টি নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী বসবাস করছে। উত্তরবঙ্গের ৩৭ নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর নাম পরিসংখ্যান ব্যুরোর তালিকাতে আসেনি, যাদের ১৬৭ পরিবারের সন্ধান পেয়েছেন তারা। সমাজে ‘ব্রাত্যজন’ বলে পরিচিত বিহারীদের ৩ লাখ সদস্য ও বেদেদের ৫ হাজার কমিউনিটি এখন বাংলাদেশের নানা প্রান্তে রয়েছে। সম্প্রতি মধুপুরে এক নৃতাত্ত্বিক গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে ফিলিপ গাইন জানান, সেখানে ৪৪টি গ্রামে গারো উপজাতি বাস করছে ৩৩ শতাংশ ও কোচ রয়েছে ৩ শতাংশ। গারোদের মধ্যে মাত্র ১১ শতাংশ লোকের কাছে জমির মূল দলিল রয়েছে। কোচদের মধ্যে যার হার ৪ শতাংশ। জমির দলিল দেখাতে না পারায় এই দুই গোষ্ঠীর সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বন মামলা রয়েছে বলেও জানান গাইন। অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীর ভূমির সমস্যা নিয়ে সরকার যেসব কাজ করছে তাতে ‘ফান্ডামেন্টাল পরিবর্তন’ আসছে না। সরকার যা করছে, তা একেবারে অস্থায়ী সমাধান। এই সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির একত্রে কাজ করা দরকার। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে যারা ক্ষুদ্র পেশাজীবী ও যাদের এলাকা স্থানান্তরের সুযোগ নেই তাদের স্থায়ী উপার্জনের সুযোগ করে দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি। সহস্র্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর পাশাপাশি সব ধরনের উন্নয়ন কর্মকা-ে ব্রাত্যজন বা সুবিধাবঞ্চিতদের অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, এসডিজি গোল অর্জনের পথে আমরা বলছি, নোবডি লেফট বিহাইন্ড। সেফটিনেটের নানা প্রোগ্রামও সরকার পরিচালনা করছে। প্রান্তিকের সুবিধাবঞ্চিত নাগরিক বা ব্রাত্যজন যাদের বলা হচ্ছে, তাদের এই প্রোগ্রামের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি সব ধরনের উন্নয়ন কাজে তাদেরও অংশীদার করতে হবে।
×