ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেট উচ্চাভিলাষী, জনবান্ধব নয় ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ১৫ জুন ২০১৯

  বাজেট উচ্চাভিলাষী, জনবান্ধব  নয় ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অর্থমন্ত্রী বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার যে বাজেট ঘোষণা করেছেন তা প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। শুক্রবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে দলের পক্ষে বাজেট প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ বাজেট উচ্চাভিলাষী, জনগণ তা গ্রহণ করবে না । অপর এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, এ সরকারের বাজেট দেয়ার অধিকার নেই কারণ, এ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। আর এটি জনবান্ধব বাজেট নয়। একটি বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষার বাজেট। এ বাজেট থেকে দেশের সাধারণ মানুষ কিছুই পাবে না। বরং তাদের ওপর করের বোঝা বাড়বে। লিখিত বক্তব্যে ফখরুল বলেন, এবার বাজেটের আকার বড় করার চমক সৃষ্টির প্রতিযোগিতায় নেমেছেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু বাজেটের আকার কত বড় এ নিয়ে আর জনমনে কোন উচ্ছ্বাস নেই। কেননা বছরের শেষ দিকে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ যেভাবে কাট-ছাঁট করা হয় তাতে বিরাটাকার বাজেটের অন্তঃসার শূন্যতাই প্রকাশ পায়। ফখরুল বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বিশাল আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে যার সিংহভাগই ধরা হয়েছে এনবিআর থেকে। অথচ চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রায় বেশ ঘাটতি রয়েছে। তার ওপর এবার আরও বড় আকারের আদায়ের পরিকল্পনা। এটা রাতারাতি সম্ভব নয়। বর্তমানে যে ব্যবস্থাপনা রয়েছে তাতে ঘাটতি বরং আরও বাড়বে। বর্তমান সরকার অনির্বাচিত মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, এ সরকারের জনগণের কাছে কোন জবাবদিহিতা নেই। আর সে কারণেই কল্যাণ রাষ্ট্রের নীতি বিসর্জন দিয়ে সরকার বাজেট প্রণয়নে নীতি বহির্ভূতভাবে অরাজকতার আশ্রয় নিয়েছে। আমাদের সময়ে প্রতিষ্ঠিত সামস্টিক অর্থনীতির বৈশিস্ট্যগুলো অনেক আগেই তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করে অকার্যকর করে ফেলা হয়েছে। সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। সুশাসন বলে এখন আর কিছু নাই। গোষ্ঠী স্বার্থে দেশ পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংককে ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করা হয়েছে। আয় ও সম্পদের বৈষম্য বেড়েছে। বিদ্যমান উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অর্থনৈতিক বৈষম্য আরও বেড়েই চলেছে। উপকৃত হচ্ছে সরকার দলীয় কিছু স্বার্থান্বেষী মহল। ফখরুল বলেন, বাজেটে সোনার দাম কমানো হয়েছে যা ব্যবহার করে সমাজের সুবিধাভোগী শ্রেণী। অথচ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষ সেই মোবাইল, সিম ও সার্ভিসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাজেটে অর্থমন্ত্রী সিগারেটের দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু সিগারেটের ওপর শুল্ক না বাড়ায় সিগারেট কোম্পানির শতকরা ৩১ ভাগ আয় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ সারাবিশ্বে সিগারেট নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ঘোষিত বাজেটের শিরোনাম দেয়া হয়েছে ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ- সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’। বর্তমান অর্থমন্ত্রী পরিকল্পনামন্ত্রী থাকাকালে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দেয়ালে লেখা দেখা গেছে ‘সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’। আবার বছরখানেক আগে টিভির পর্দায় একটি পণ্যের বিজ্ঞাপনেও শোনা গেছে ‘সময় এখন আমাদের’। আসলে সময় এখন তাহাদের এবং একমাত্র তাহাদেরই। সেটা দেশের মানুষের বুঝতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না। ফখরুল বলেন, বাজেটের শিরোনাম থেকেই উন্নয়নের ‘গীত’ প্রকৃষ্ট হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই তথাকথিত উন্নয়নের গীত আর মানুষ শুনতে চায় না। কর আর দ্রব্যমূল্যের চাপে ভোক্তা সাধারণের এমনিতেই নাভিশ্বাস উঠেছে। আয়-বৈষম্য, বেকারত্ব, অর্থনৈতিক নৈরাজ্যের কারণে সামাজিক অস্থিরতার মুখোমুখি জনগণ এখন আর উন্নয়নের মিষ্টি কথায় সন্তুষ্ট হতে পারছে না। মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিপুল অঙ্কের ব্যয়ের আকাক্সক্ষা থাকলেও সরকারের আয়ের সামর্থ্য কমে গেছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা প্রয়োজনীয় রাজস্ব আহরণে ব্যর্থতা ও নাজুক আর্থিক খাত। চলতি অর্থবছরে এনবিআরকে ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হলেও সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) এনবিআর আদায় করতে পেরেছে ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা। বাকি ৩ মাসে ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য কিভাবে পূরণ হয় সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে যা নেতিবাচক বলেই মনে হয়। তাছাড়া মোট রাজস্বের মধ্যে বড় অংশ হচ্ছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট। আগামী ১ জুলাই থেকে ভ্যাট ও সম্পূরক আইন ২০১২ কার্যকর করা হবে। নতুন আইনে ভ্যাটের স্তর থাকবে ৫টি। এই স্তর ভিত্তিক ভ্যাট হার অনেক অসামঞ্জস্যপূর্ণ। ব্যবসায়ীরা রেয়াত নিতে না পারলে এটি আবগারি শুল্কের মতো হয়ে যেতে পারে। রেয়াতের টাকা কিভাবে দেয়া হবে সেই বিষয়ে পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন আইনে ব্যবসায়ীরা রেয়াত চাইতে শুরু করলে সরকারকে নিজের পকেটের টাকা দিতে হবে। এ জন্য বছরে ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়ে যেতে পারে। এভাবে নতুন আইনটি কার্যকর হতে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। সরকারের পক্ষে যদি ভ্যাটের রেয়াতের টাকা ফেরত দেয়া সম্ভব না হয় তবে ভ্যাট কার্যত আবগারি শুল্কে পরিণত হবে। এতে করের ওপর আবার কর আরোপ হবে। এর ফলে জিনিসপত্রের দাম সাড়ে ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে যার চাপ পড়বে ভোক্তাদের ওপর। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আয়-ব্যয়ের বিশাল পার্থক্যের কারণে এবার বাজেট ঘাটতিও অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে অনুদান ছাড়া বাজেট ঘাটতি দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা যা মোট জিডিপির ৫ শতাংশ। এদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ১ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা অর্থাৎ ঘোষিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ বাড়ল ২০ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। এই ঘাটতি মেটাতে বিদেশ থেকে ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে ৬৮ হাজার ১৬ কোটি টাকা। ঘোষিত অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে নেয়া হবে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ ৭১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণ খাতের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা থেকে নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ রয়েছে ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা। ঘোষিত অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। ফখরুল বলেন, বাজেটে ব্যয় বেড়েই চলছে। দুই প্রকার রাজস্ব ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাবদ ব্যয়। ঘোষিত বাজেট অনুযায়ী মোট ব্যয় ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। বিগত ১০ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাবদ ব্যয় মোট বরাদ্দের ৫৫ শতাংশের কোঠায় থাকলেও মে ও জুন মাসে ব্যয়ের তথাকথিত উল্লম্ফন ঘটবে। রাজস্ব ব্যয় মোটামুটি ঘোষিত বাজেট অনুযায়ী হবে। অর্থাৎ ঘাটতি মোকাবেলায় ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাবে। ঋণের পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে সুদ-আসল পরিশোধ করতেই বিশাল ব্যয় হচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাতে রাজস্ব ব্যয়ের ১৮ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ফলে দেশের গুণগত সার্বিক রূপান্তরে অত্যাধিক প্রয়োজনীয় মানব পুঁজি বা দক্ষ শ্রমশক্তি বিনির্মাণে, তথা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সরকারী বিনিয়োগ বাড়ছে না। উপরন্তু ঋণের পরিমাণ সুদসহ জমতে জমতে পাহাড়সম হলে পরিশোধের কোন দিকনির্দেশনা এই বাজেটে নেই। বলা বাহুল্য, এর দায়ভার চাপবে ভবিষ্যত প্রজন্মের ওপর। ফখরুল বলেন, এ অর্থবছরে বেতন-ভাতার জন্য রাজস্ব ব্যয়ের ২০ দশমিক ৫ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা কোন অবস্থাতেই যুক্তিযুক্ত বলা যাবে না। তিনি বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বারবার সংশোধনের ফলে ঋণের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে অস্বাভাবিক খরচও চোখে পড়ার মতো। পদ্মা সেতু প্রকল্পে প্রাক্কলিত ব্যয় বাড়তে বাড়তে ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। চার লেন সড়ক তৈরিতে যেখানে ভারতে ১১ থেকে ১৩ লাখ ও চীনে ১৩ থেকে ১৬ লাখ মার্কিন ডলার খরচ হয়, সেখানে বাংলাদেশে ৫০ লাখের বেশি। সম্প্রতি রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে বালিশ দুর্নীতির যে খবর জনসম্মুখে এসেছে তাকে হিমবাহের চূড়া বলা যেতে পারে। বিভিন্ন প্রকল্পে কোন পর্যায়ের দুর্নীতি হচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়। এছাড়া অর্থবছর শেষে জোড়াতালি দিয়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ৯০-৯২ শতাংশ দেখানো হয়, যা প্রথম ১০ মাসের হিসাবের সঙ্গে কোনভাবেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ফখরুল বলেন, এবারের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ অর্জিত হবে বলে আশা করা হয়েছে। যদিও বছরের শুরুতে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৭ দশমিক ১ শতাংশ, যা প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি বলেন, শিক্ষা খাত প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। সংখ্যায় বাড়লেও শিক্ষার গুণগতমানে ধস নেমেছে। শিক্ষা খাতে ব্যয় মোট জিডিপির ৩ দশমিক ২ শতাংশেরও কম। স্বাস্থ্য খাতে ১ শতাংশেরও কম। মানবসম্পদ আশানুরূপভাবে উন্নত হয়নি। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে করের টাকা দিয়ে ক্ষতির রাষ্ট্রীয়করণ করা হচ্ছে। সরকার প্রত্যক্ষ করের তুলনায় পরোক্ষ কর আদায় বেশি করছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, পরোক্ষ করের বোঝা সাধারণ মানুষের ওপর পড়ে বেশি। এদিকে সাধারণ মানুষের অর্থে যে বাজেট তৈরি হয় তার ব্যয় থেকে ধনীদের ভর্তুকি দেয়া হয়। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে রাষ্ট্রীয় অর্থে তাদের বেইল আউট করা হচ্ছে। অপরদিকে প্রতিবছর ১০ থেকে ১১ লাখ লোককে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতার আওতায় এনে যে সাহায্য দেয়া হয় সেটা সমুদ্রে এক বিন্দু শিশিরের মতো। সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ জিডিপির ৩ শতাংশের কথা বলা হলেও পেনশন বাদ দিলে তা ১ দশমিক ৭ শতাংশ মাত্র। ফখরুল বলেন, দেশ থেকে বছরে ৮ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে যাচ্ছে। ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি বলছে গত এক দশকে দেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ৭ হাজার কোটি ডলার। বাংলাদেশী টাকায় যার পরিমাণ ৫ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। কানাডায় কারা কোন মার্কেটের মালিক, নিউইয়র্কে এবং লন্ডনে কাদের কি আছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সৌজন্যে সকলেরই জানা। মির্জা ফখরুল বলেন, প্রাণ নেই ব্যাংক খাতে। বিনিয়োগের জন্য নেয়া শিল্প ঋণ যেখানে পুরোটাই ব্যাংক খাত নির্ভর সেখানেই চলছে তীব্র অর্থসঙ্কট। সবার মনেই প্রশ্ন ব্যাংকের এত টাকা গেল কোথায় ? ঋণের টাকা ফেরত আসছে না ব্যাংক খাতে। খেলাপী ঋণ কেবল বাড়ছেই। ইতোমধ্যে খেলাপী ঋণের পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। যেখানে ২০১১ সালে খেলাপী ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বর্তমানে স্বল্পমেয়াদী আমানতের ওপর নির্ভরশীল। বেশি সুদ ও কর ছাড়ের কারণে সবাই সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছে। আবার আমদানি যে হারে বাড়ছে সে হারে রফতানি বাড়েনি। এ কারণে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় মূল্যের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। ফখরুল বলেন, ঋণ খেলাপীদের সুবিধা দিতে দফায় দফায় নীতিমালা পরিবর্তন করা হয়েছে। ২০১৫ সালে ৫০০ কোটি টাকার ওপরে দায়গ্রস্ত ঋণখেলাপীদের বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে। এই আওতায় ১১টি শিল্প গ্রুপের ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়মিত করার বিশেষ সুবিধা দেয়া হলেও দুুটি গ্রুপ ছাড়া আর কেউ কোন টাকা পরিশোধ করেনি। দেখা যাচ্ছে দেশের সাধারণ করদাতারাই ঋণ শোধ ও উন্নয়নের মূল উৎস হিসেবে কাজ করছেন। বারবার বলা হলেও আয়কর এখনও কর আদায়ের প্রধান উৎস নয়। মূল্য সংযোজন করের মাধ্যমেই ব্যয় নির্বাহ করতে হচ্ছে। এই পরোক্ষ করের বোঝা পুরোটাই সাধারণ জনগণের কাঁধে চেপে বসে। নিম্নœবিত্ত ও মধ্যবিত্ত জনগণের ওপর করের ভার বর্তাচ্ছে। বিপরীত দিকে উচ্চবিত্তদের কর পরিহার ও ফাঁকি দেয়াটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরপরেও এবারের বাজেটে দুর্নীতিবাজদের কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। ফখরুল বলেন, বিপুলসংখ্যক চাকরিপ্রার্থীর জন্য চাকরির বাজার অপর্যাপ্ত। আবার চাকরির বাজারের সঙ্গে শিক্ষার মান সমান তালে বেড়ে উঠছে না। বিদেশ থেকে দক্ষতার ঘাটতি পূরণে জনবল আমদানি করতে হচ্ছে। অথচ বর্তমানে ৪ কোটি ৮২ লাখের মতো তরুণ বেকার। ২০০৫ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে প্রতিবছর দেশে দারিদ্র্য কমার হার ছিল ১ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যবর্তী সময়কালে এ হার কমে ১ দশমিক ২ শতাংশে নেমেছে। বর্তমানে প্রায় ১৪৫টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী চলমান থাকলেও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতাভুক্ত লোকের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ। এ খাতে আর্থিক বরাদ্দ নেপাল ও ভুটান থেকেও কম। ফখরুল বলেন, তৈরি পোশাকশিল্পের বাইরে নতুন কোন নির্ভরযোগ্য উৎপাদনশীল খাত তৈরি হচ্ছে না। গত ছয় বছরে শিল্পকারখানার সংখ্যাও বাড়েনি, কমেছে ৬০৮টি। ২০১২ সালে বড় শিল্পকারখানা ছিল ৩ হাজার ৬৩৯টি আর ২০১৯ সালে সংখ্যা কমে ৩ হাজার ৩১টি হয়েছে। মাঝারি শিল্পকারখানা ৬ হাজার ১০৩টি থেকে কমে ৩ হাজার ১৪টি হয়েছে। ক্ষুদ্র শিল্পকারখানার সংখ্যাও কমেছে। তাই এই মুহূর্তে দেশের অর্থনীতি এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। চলতি বছর রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপাদন হলেও হতাশ কৃষক ধানের ন্যায্য দাম না পেয়ে ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সঙ্কুচিত হয়ে আসা, বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ না বাড়া, ফি বছর বেকারত্বের হার বৃদ্ধির কারণেও উন্নয়ন কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আব্দুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ। বিশাল বাজেটের চাপে অর্থমন্ত্রী অসুস্থ- সালাম ॥ বিশাল বাজেটের চাপে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন’ এবং ‘ফিউচার অফ বাংলাদেশ’ এর যৌথ আয়োজনে ‘বাজেট প্রত্যাখ্যান’ শীর্ষক এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। সালাম বলেন, বিশাল বাজেট বহন করার মতো অবস্থা বর্তমানে জাতির নাই। এই বাজেট যদি জাতিকে বহন করতে হয় তাহলে পুরো জাতিই অসুস্থ হয়ে পড়বে। এই বাজেট জনগণের পকেট কাটার এবং গরিবদের আরও গরিব করবে। এটি জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া বাজেট। ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন’ এর সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সহ-সভাপতি আক্তার হোসেন, ‘ফিউচার অফ বাংলাদেশ’ এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ শওকত আজিজ প্রমুখ।
×