ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আত্মসাত করা অর্থ ফেরত দিলে কাউকে জেলে পাঠাব না ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:১৭, ১৪ মার্চ ২০১৯

 আত্মসাত করা অর্থ ফেরত দিলে কাউকে জেলে পাঠাব না ॥ অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, দুর্নীতি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে কাজ করছে সরকার। তাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের ছাড় দেয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘আমি দুদককে কথা দিয়েছি, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেখানে জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলা হবে। তাই আপনারাও দুর্নীতিকে ‘নো’ বলবেন এই শপথ নেন।’ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে তিনি এখানে আসেননি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমরা কোন ব্যবসায়ীকে জেলে পাঠাব না যদি তারা অপরাধ স্বীকার করে আত্মসাত করা অর্থ ফেরত দেন। আর যারা ভাল ব্যবসায়ী, কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ নানা প্রতিকূলতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের সরকার থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে। ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, লিজ ফাইন্যান্সিংয়ের নামে অনেক প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে। এই লিজ ফাইন্যান্সিংয়ের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তাদের দু’একটি বাদে বাকিদের ফোন দিয়েও অফিসে পাওয়া যায় না। এটা কিন্তু বাস্তবতা। তবে প্রকৃত অবস্থা যাচাইয়ে প্রত্যেকটা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিশেষ অডিটের ব্যবস্থা করা হবে। এটি কাউকে বিপদে ফেলতে নয়, স্বচ্ছতার জন্য করা হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি। বুধবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে জনতা ব্যাংকের বার্ষিক ব্যবসায়িক সম্মেলনে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। ব্যাংকের চেয়ারম্যান লুনা সামসুদ্দোহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মোঃ আসাদুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আব্দুছ ছালাম আজাদ। ব্যাংকিং কোন খেলার জায়গা না উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এখানে থাকতে হলে ব্যাংকিং সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা প্রয়োজন। যারা ব্যাংকিং বোঝেন না এবং যারা অসৎ তাদের বোর্ডে রাখা হবে না। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আমি বলেছি। প্রয়োজনে আরও বলব। কোন অবস্থায় তাদের রাখব না। মুস্তফা কামাল বলেন, সরকার দুর্নীতিতে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে কাজ করছে। তাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের ছাড় দেয়া হবে না। অসাধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যারা থাকবেন তাদের ছাড় দেয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের এই খাতে ভাল লোক আছে, আবার অসাধু লোকও আছে। যিনি অন্যায় করেন এবং যাকে অন্যায়ে সাহায্য করেন তারা দুজনই কিন্তু সমান অপরাধী। এখনও পর্যন্ত আপনাদের কেউ আমার কাছে এমন অভিযোগ করেননি যে অমুক ব্যক্তি অসাধু। তাকে এই জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করুন। এই জায়গাটিতেই আমি পরিবর্তন আনার কথা বলেছিলাম। মনে রাখবেন বোর্ডে বা ব্যাংকে অসাধু কোন কর্মকর্তা রেখে এটা করতে পারবেন না। ওই একজন খারাপই সব অর্জন ম্লান করে দেবে। তিনি বলেন, সবাই খারাপ আমি বলবও না। সব কাজই খারাপ সেটি বলব না। কিন্তু একটা খারাপের কারণে এমন ধারণা তৈরি হতে পারে যে ব্যাংকের কিছুই নেই, সব চলে গেছে। তাই ব্যাংকের কর্মকর্তা, যারা তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন তাদেরও ধরা হবে। এটা করতে খুব বেশি সময়ের দরকার হবে না। অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের জন্য উচ্চ খেলাপী ঋণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আমি প্রতিজ্ঞা করেছি, এটা ভবিষ্যতে আর বাড়বে না বরং কমবে। সেজন্য আপনাদের সকলের ভূমিকা ও সহযোগিতা কামনা করছি। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা গরিব অবস্থা থেকে শুরু করেছি। ৪৮ বছর আগে বাংলাদেশ ছিল গরিবের উদাহরণ। বলা হতো, কেউ গরিব দেখতে চাইলে বাংলাদেশে যাও। আগে কতজনের ঘরে খাবার ছিল। আমাদের ঘরেও খাবার কম ছিল। আমরাও কম খেতাম। কিন্তু এখন আমরা উন্নয়নের মডেল হিসেবে বিবেচিত। এখন বলা হয়, যদি উন্নয়ন দেখতে চাও তবে যাও বাংলাদেশে। তিনি বলেন, অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি চলতি অর্থবছরে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৫ থেকে ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ হবে। এখন পর্যন্ত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১ শতাংশ রয়েছে। অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য এই খাতে বেশকিছু সংস্কারমুখী পদক্ষেপের দরকার উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, জতির পিতার স্বপ্ন ছিল অর্থনৈতিক মুক্তি ও স্বাধীনতা। সাধীনতা তিনি দিয়ে গেছেন। অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে পারেননি। তবে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে কাজ করে যাচ্ছেন তার রক্তের উত্তরাধিকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গবর্নর ফজলে কবির বলেন, আমাদের এক্সপোর্ট অরিয়েন্টেড হতে হবে। তাহলে দেশ শিল্পায়িত হবে। বড় বড় প্রকল্পের অর্থায়নে জনতা ব্যাংকের অবদান প্রশংসনীয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যাংকটির মূলধন পর্যাপ্ততা নেগেটিভে রয়েছে। খেলাপী ঋণ ৩০ ভাগের বেশি। এটা তাদের বড় সমস্যা। এটা কাটিয়ে উঠে শক্তিশালী অবস্থানে যেতে হবে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, খেলাপী ঋণ এক টাকাও বাড়বে না, বরং কমবে। এজন্য সবাইকে তৎপর হতে হবে। যারা ইচ্ছাকৃত খেলাপী নয়, তাদের বিষয়টা আলাদা করে দেখতে হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, বর্তমান অবস্থা কোথায়, ভবিষ্যতে কোথায় যেতে চান, বেস্ট সলুশনটা আপনারা বের করুন। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আধুনিক ব্যাংকিংয়ের প্রশিক্ষণ দিতে হবে কর্মকর্তা কর্মচারীদের। কারণ এখন আধুনিক ব্যাংকিংয়ের কোন বিকল্প নেই। ব্যাংকের চেয়ারম্যান লুনা সামসুদ্দোহা বলেন, জনতা ব্যাংক সর্বপ্রথম সরকার ঘোষিত ঋণের সুদ ৯ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে। এতে সামগ্রিক মুনাফা অর্জনে কিছুটা প্রভাব পড়লেও আমরা তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হচ্ছি। তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ৯৬৪ কোটি টাকা অর্জিত হয়েছে এবং ২০১৯ সালে ১৪০০ কোটি টাকা পরিচালনা মুনাফা অর্জনের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ব্যাংকের সকল শাখায় অনলাইন ব্যাংকিং চালু করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আব্দুস ছালাম আজাদ। তিনি আর্থিক অবস্থা তুলে ধরে বলেন, ২০১৮ সাল শেষে জনতা ব্যাংকের আমানত দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা। এ সময় ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। লোকসানি শাখা একটি কমে ৫৬টিতে দাঁড়িয়েছে। ক্রিসেন্ট গ্রুপ ও এননটেক্স গ্রুপের ঋণের কারণে ব্যাংকের খেলাপী ঋণ বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্রিসেন্ট গ্রুপের ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে অর্থঋণ আদালতে আমরা মামলা করেছি এবং এননটেক্স গ্রুপের ঋণ আদায় এবং নিয়মিতকরণের লক্ষ্যে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আশা করছি ২০১৯ সালে শ্রেণীকৃত ঋণ কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সক্ষম হবো।
×