ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে কোচিং সেন্টার মালিকসহ আটক ৩

প্রকাশিত: ০৯:৫৬, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

  প্রশ্নপত্র ফাঁসের  অভিযোগে  কোচিং সেন্টার  মালিকসহ  আটক ৩

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ও যশোর ॥ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গাজীপুরের শ্রীপুর হতে এক কোচিং সেন্টারের মালিকসহ দুই যুবককে আটক করেছে র‌্যাব সদস্যরা। আটককৃতরা হলো- শ্রীপুর যোগীরসীট এলাকার আবুল হাসেমের ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম (২৫) এবং মোঃ শুকুর আলীর ছেলে মোঃ আকরাম হোসেন (২১)। এদিকে যশোরে এসএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ। র‌্যাব-১’র স্পেশালাইজ কোম্পানি পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লেঃ কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, কাওরাইদ ইউনিয়নের যোগীরসীট বাজার এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের কতিপয় সদস্য অবস্থান করছে। এ গোপন সংবাদ পেয়ে র‌্যাব সদস্যরা সেখানে অভিযান চালিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সক্রিয় সদস্য রফিকুল ইসলাম ও আকরাম হোসেনকে আটক করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কাজে ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত মোবাইল ফোন বিশ্লেষণ করে তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসএ্যাপ ও ফেসবুকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব্যাপারে বিভিন্ন সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক রফিকুল ইসলাম জানায়, সে গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের ছাত্র। লেখাপড়ার পাশাপাশি রফিকুল ইসলাম নিজস্ব কোচিং সেন্টার পরিচালনা করে এবং সেখানে শিক্ষকতা করত। কোচিং সেন্টারের শিক্ষকতা করার নামে ২০১৭ সালে বিভিন্ন ফেসবুক আইডি খুলে প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু করে। সে ফেসবুকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে বিভিন্ন পোস্ট দিলে ছাত্রছাত্রীরা মেসেজ দিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করত। রফিকুল ইসলাম ২০১৭ সালের পিএসসি, জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীদের ৮-১০টি পরীক্ষার প্রশ্ন বিতরণ করে মোটা অঙ্কের টাকা আয় করে। সে বিভিন্ন লিংক থেকে প্রশ্নপত্র ডাউনলোড করে ফেসবুকে পোস্ট দিত এবং ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা নিয়ে তাদের প্রশ্ন বিতরণ করার পরে ফাঁসকৃত প্রশ্নগুলো ফেসবুক থেকে ডিলেট করে দিত। এছাড়া মোঃ আকরাম হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে ২০১৮ সালে এসএসসি পাস করে। ২০১৮ সালে মোঃ রফিকুল ইসলামের ফেসবুক আইডি থেকে অনলাইনে প্রশ্ন ফাঁসের কাজে যুক্ত করে। ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় সে ১০টি পরীক্ষার প্রশ্নের পোস্ট দেয় এবং ছাত্রছাত্রীদের কাছে উক্ত প্রশ্ন অনলাইনে বিতরণ করে বিকাশের মাধ্যমে টাকা আয় করে। তবে তার দেওয়া প্রশ্ন এবং পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কিছুটা পৃথক ছিল। তার মোবাইল বিশ্লেষণ করে জানা যায় সে গফ জধভরয়ঁষ ওংষধস নামের আইডি থেকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করত। বর্ণিত আইডিটি রফিক নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করে বলে আটক আকরাম জানায়। র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, তাদের দেয়া পোস্ট দেখে অনেক সুযোগ সন্ধানী শিক্ষার্থী প্রলোভনে পড়ে প্রশ্নপত্র পাওয়ার আকাক্সক্ষায় বিকাশের মাধ্যমে তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা প্রেরণ করত। এক্ষেত্রে আসামিদের ফেসবুক ও হোয়াটসএ্যাপের বিভিন্ন লিংক/গ্রুপ হতে প্রাপ্ত প্রশ্নপত্র সরবরাহ করত। আবার কখনও পূর্বের বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কাটছাট করে, এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে নিজেরাই প্রশ্নপত্র তৈরি করে সরবরাহ করত। এভাবে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে আটককৃতরা বিভিন্ন শিক্ষার্থীর নিকট হতে বিকাশ ও বিভিন্ন পন্থায় বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাত করেছে বলে জানা যায়। আটক আসামিদের দেয়া তথ্য যাচাই বাছাইয়ের ভিত্তিতে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্য সদস্যদের আটকের চেষ্টা চলছে। উদ্ধারকৃত মোবাইল ফোন এবং আটকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যশোরে এসএসসি প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের দু’জন আটক ॥ যশোর থেকে এসএসসি প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার যশোর সদরের সাতমাইল বাজার থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। আটককৃতরা হলো সদরের ছোট হৈবতপুরের মিলন হোসেনের পুত্র সিরাজুল ইসলাম ও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের বারোবাজার পিরোজপুর গ্রামের মোসলেম উদ্দীনের পুত্র কামরুজ্জামান। যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, পুলিশ গোপন সংবাদে জানতে পারে শনিবার অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসচক্রের সদস্যরা যশোরের বিভিন্ন গ্রামে তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে প্রশ্নফাঁস করবে। এরপর অভিযান চালায় যশোর সদরের সাতমাইল বাজারে। সেখানকার একটি দোকান থেকে পুলিশ ওই দু’জনকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি ল্যাপটপ, ৩টি মোবাইল ফোন। তারা পুলিশের কাছে প্রশ্নপত্র ফাঁসচক্রের সঙ্গে জড়িত বলে জানায়। সেখান থেকে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের কথোপকথন এবং প্রশ্ন ফাঁসের বিভিন্ন লিংক পাওয়া গেছে।
×