ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভূমিখেকোদের গ্রাস থেকে অবশ্যই কৃষিজমি রক্ষা করতে হবে

প্রকাশিত: ১১:১০, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯

ভূমিখেকোদের গ্রাস থেকে অবশ্যই কৃষিজমি রক্ষা করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের বিভিন্নস্থানে কৃষি জমি ভরাট করে প্রতিনিয়তই কারখানা বা বহুতল ভবন নির্মাণ হচ্ছে। এতে দেশের কৃষি জমি ক্রমেই কমছে। জমির জোনিং না থাকায় চিহ্নিত করা যাচ্ছে না কৃষি ও শিল্পের জমি। কৃষি জমি সুরক্ষায় নীতি থাকলেও আইনী বাধ্যবাধকতার শক্তি নেই। তাই কৃষি জমি সুরক্ষায় দ্রুততম সময়ে শক্ত আইন করার কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে দেশের কৃষি জমি অবশ্যই রক্ষার কথা বলেন তারা। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে এ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এএলআরডির আয়োজনে ‘কৃষি জমি সুরক্ষা: সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের অপরিহার্যতা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা আইন প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এএলআরডি মুখপাত্র শামসুল হুদা বলেন, দেশের কৃষি জমি সুরক্ষা করতে না পারলে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে ব্যর্থ হবে। কারণ, প্রতিবছর কয়েক শ’ একর কৃষি জমি শিল্প-প্রতিষ্ঠান এবং ইমারত নির্মাণসহ অনেক খাতে নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গুরুত্বসহকারে দেখবেন বলে আশা করছি, বলেন তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে দেশের কৃষি জমি রক্ষা করতে হবে। কৃষকদের হাতে পর্যাপ্ত অর্থ থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষকের হাতে প্রচুর অর্থ না থাকলে স্থানীয় বাজার কখনও চাঙ্গা হবে না। দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাস্তবায়নের জন্য কৃষি জমি এবং কৃষক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অধ্যাপক আকাশ বলেন, দেশের কৃষি জমি এবং কৃষকদের বাঁচাতে হলে অবশ্যই আইন পাস করাতে হবে। প্রভাবশালীদের রুখতে আইন জরুরী। প্রকাশিত খসড়া আইনটি যাতে প্রভাবশালীদের পক্ষে না যায় এবং তারা যাতে লবিং করে বেশি দিন আটকে না রাখতে পারে, সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি দেয়ার কথাও বলেন। সাবেক বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, কৃষি জমি নিয়ে সরকারের কাছে যে সব আপত্তি-অভিযোগ আছে, তা ভালভাবে খতিয়ে দেখে একটি আইন পাস করা দরকার। কারণ, আইন না থাকলে কৃষি জমি বাঁচানো সম্ভব নয়। কৃষি জমি যারা নষ্ট করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরী। কিন্তু শক্ত আইন না থাকায় তা বাস্তবে রূপ নিতে পারছে না। আইন পাস হলে ভূমিখেকোদের মোকাবেলার জন্য অনেকেই এগিয়ে আসবেন। সাংবাদিক আবু সাঈদ বলেন, রাজধানীর আশপাশের সব কৃষি জমি প্রভাবশালীরা কৌশলে দখল করে আবাসিক এলাকা তৈরির নামে গ্রাস করছে। এজন্য শহরের মানুষের কয়টি বাড়ি এবং ইমারত থাকবে তা আইন করে ঠিক করে দিতে হবে সরকারকে। নইলে কোনভাবেই কৃষি জমি রক্ষা করা সম্ভব হবে না। ইনসিডিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক একে মাসুদ আলী বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে কৃষক এবং কৃষি রক্ষার জন্য যে ওয়াদা করেছে, তা বাস্তবায়িত করলেই দেশের কৃষি জমি রক্ষা পাবে। দেশবাসী আশা করছে, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেহেতু কৃষিবান্ধব তাই কৃষি জমি রক্ষা পাবে। অনুষ্ঠানে শুরুতেই এএলআরডির মুখপাত্র শামসুল হুদা তার মূল প্রবন্ধে বলেন, জাতীয় ভূমি নীতি বর্তমানে অকার্যকর। এছাড়াও জমির জোনিং না থাকায় কৃষি ও শিল্পের জমি চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। এতে কোন কোম্পানির মালিক কৃষি জমি কেনার ক্ষেত্রেও কোন বাধার সম্মুখীন হচ্ছে না। পাশাপাশি রাসায়নিক দূষণে কৃষি জমির উৎপাদনশীলতা স্থায়ীভাবে হ্রাস পাচ্ছে। দেশের ইটভাঁটি নিয়ে অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ইটভাঁটির সংখ্যা প্রায় সাত হাজার। এগুলো বেশিরভাগই কৃষিজমির ওপর গড়ে উঠেছে। দেশের বার্ষিক ইটের উৎপাদন ১৭.২ বিলিয়ন। যা তৈরিতে ১২৭ কোটি সিএফটি মাটি দরকার হয়। এই মাটি কৃষি জমির উর্বর অংশ বা উপরিভাগ থেকেই সংগ্রহ করা হচ্ছে। এই খাতে বছরে ২২ লাখ টন কয়লা ও ১৯ লাখ টন জ্বালানি কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এতে বছরে ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টন গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণ করে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটাতে সহায়ক। মানবাধিকার কর্মী খুশী কবীর সভাপতির বক্তব্যে বলেন, আইনটি জরুরী এতে কোন সন্দেহ নেই। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার যে সূচক নির্ধারণ করা হয়েছে সেখানে বেশির ভাগই কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। গ্রামের বাচ্চারা এখন সাঁতার শিখতে পারে না, সব পুকুরে বাণিজ্যিক মাছ চাষ হচ্ছে। খুলনা বাগেরহাট এলকায় চিংড়ি চাষ প্রচুর হলেও এখনও কৃষিতে ফেরা সম্ভব বলেও জানান তিনি। যার সক্ষমতা আছে তাকে সব কিছুর উর্ধে এই প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসারও আহ্বান জানান খুশী কবীর। অনুষ্ঠানে কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি বদরুল আলমসহ এএলআরডির অন্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
×