ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

গার্মেন্টস শিল্পে অসন্তোষ, নৈরাজ্য ও নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮

  গার্মেন্টস শিল্পে অসন্তোষ, নৈরাজ্য ও নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে

শংকর কুমার দে ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকদের মধ্যে বেতন-ভাতার দাবিতে অসন্তোষ ছড়িয়ে অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য, নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে নির্বাচন বিরোধী অশুভ মহল। গার্মেন্টস শিল্পের নারী শ্রমিকদের ধর্ষণ, খুন, আগুন, ভাঙচুর করার মতো সহিংস সন্ত্রাসের তান্ডবলীলা চালিয়ে নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে অশান্ত, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে ছক কষেছে নির্বাচন বিরোধী ওই অশুভ মহলটি। গত দু’দিনে নারায়ণগঞ্জে ও গাজীপুরে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে রাস্তায় নামিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টির মাধ্যমে সহিংসতার সৃষ্টি করা হয়েছে। সহিংসতা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা শক্ত হাতে মোকাবেলা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি। নারায়ণগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুর, চট্টগ্রামের পাঁচ শতাধিক গার্মেন্টস শিল্পে শুরু করা হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের গার্মেন্টস শিল্পাঞ্চলখ্যাত ফতুল্লা এলাকায় গত কয়েক দিন ধরে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির নামে গার্মেন্টস শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে এসে রাস্তা ব্যারিকেড, ভাংচুর, কাজ বন্ধ করে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। এই ধরনের পরিস্থিতি কঠোর হস্তে দমন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার ওসি মঞ্জুর কাদের জানান, এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ফতুল্লার ফকির এ্যাপারেল, ক্রমী গ্রুপ, অবন্তি কালার, এনা ট্যাক্স, নেভি হোসিয়ারি, মিন টেক্সসহ বেশ কয়েকটি গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিক কাজ বন্ধ করে রাস্তায় এসে ভাংচুর, পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। এতে কয়েকজন পুলিশ আহত হয়েছে। ওসি মঞ্জুর কাদের নিজেও আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন তিনি। পুলিশ ১৩ জন শ্রমিককে আটকের পর মালিকপক্ষ তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে। এই বিষয়ে মামলা, জিডি হয়েছে। গাজীপুর পুলিশ জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জের পর গাজীপুরেও গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকরা রাস্তা ব্যারিকেড করে ভাংচুরসহ আইনশৃৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে গাজীপুর পুলিশের দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে এক বা একাধিক মহল পোশাক খাতে অসন্তোষ সৃষ্টির পাঁয়তারা চালানোর বিষয়ে বিএনপির এক নেতার সঙ্গে বামপন্থী এক নেতার সঙ্গে গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই নেতারা বিএনপির ও বামপন্থী নেতা-উভয়েই গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিক রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ ছাড়াও গার্মেন্টস শিল্পে শ্রমিকের কাজ করেন না, অথচ শ্রমিক নেতা এমন বেশ কয়েকজন শ্রমিক নেতা একাধিক গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে গার্মেন্টস শিল্পে অসন্তোষ ছড়িয়ে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার ছক কষেছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনটি ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকদের বেতন-ভাতার দাবি তুলে তাদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে দিয়ে সহিংসতা ছড়িয়ে দেয়ার মধ্যে নারী শ্রমিকদের দু’একজনকে ধর্ষণ, ধর্ষণের পর খুন করার পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। এই ধরনের ঘটনা ঘটানোর পর তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গুজব ছড়িয়ে দিয়ে গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করে তোলার জন্য তৎপরতা চালানো হয়। নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের কয়েকটি গার্মেন্টস শিল্পে বেতন-ভাতার দাবি বাড়ানোর ধুয়া তুলে গত দুই তিন দিনে গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকদের রাস্তায় নামিয়ে এনে মহড়া দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ও বাস্তব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার পটভূমিতে কঠোর নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। নির্বাচন শেষে বিজয়ী দলের নেতৃত্বে নতুন সরকারের শপথ ও দায়িত্বভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত এ নজরদারি চলবে। এরই মধ্যে তৈরি পোশাক কারাখানা অধ্যুষিত নারায়ণগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও টঙ্গী এলাকা নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ বা বানচাল করার জন্য চক্রান্তকারী ও একই সঙ্গে কথিত শ্রমিক নেতা পরিচিতদের গতিবিধিও নজরে রাখছেন দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। যেহেতু দেশের তৈরি পোশাক খাত একটি স্পর্শকাতর খাত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের উন্নত দেশ ও সংস্থার বায়ারদের নজর রয়েছে এদিকে। অসাধু চক্রটি সহজে গোয়েন্দা নজরে আনা কারখানাগুলোর মধ্যে ঢাকা মহানগর এলাকায় রয়েছে প্রায় দুইশ’। দেড়শ কারখানা রয়েছে চট্টগ্রামে। এ ছাড়া বাকি কারখানা রয়েছে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়াসহ অন্যান্য এলাকায়। অসন্তোষ প্রবণ এসব এলাকায় শিল্পাঞ্চল পুলিশ ছাড়াও সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নজরদারি করছেন। তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, গত ১ ডিসেম্বর থেকেই কার্যকর করা হয়েছে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো। আগামী ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে শ্রমিকরা বেতন পাবেন নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী। এ বেতন কাঠামো নিয়ে শুরু থেকেই শ্রমিকদের মধ্যে একধরনের অসন্তোষ চালানোর পাঁয়তার চালানো হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে কিছু গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে অসন্তোষ সৃষ্টি করে শ্রমিকদের গার্মেন্টেসের বাইরে নিয়ে আসা হয়েছে। গাজীপুরের কিছু ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা কাজ করেননি, তাদের অভিযোগ বেতন কম বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, এবার ইলেকশন আছে, আমরা কাউকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেবো নাসেটা শ্রমিক পক্ষ হোক আর মালিক পক্ষ হোক। শ্রমিকদের উস্কে দিয়ে সেটিকে একটি অসাধু মহল কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করছে। একাদশ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়টাকে বেছে নিতে চাচ্ছে ওই অসাধু মহলটি। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি করে অঘটন ঘটানোর বিষয়টি নজরে এনেছে গোয়েন্দা সংস্থা। তিনি বলেন, শুধু নজরদারি নয়, প্রয়োজন হলে এ্যাকশনে যাবে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকার প্রয়োজনে যে কোন কঠোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পিছপা হবে না। যে কোন মূল্যে নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা বা নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হতে দেবে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
×