ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রভাবশালী ও দস্যুদের হাত থেকে খাস জমি মুক্ত রাখতে হবে

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১৯ অক্টোবর ২০১৮

প্রভাবশালী ও দস্যুদের হাত থেকে খাস জমি মুক্ত রাখতে হবে

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ সমাজে নারী-পুরুষ সমতার লড়াইয়ে সফল হতে সরকারের নীতি, শিক্ষা ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার আমূল পরিবর্তন দরকার। সরকারী খাস জমিগুলো উপযোগিতার ভিত্তিতে বরাদ্দ দিতে হবে। ভূমি ব্যবহার নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে প্রভাবশালী ও দস্যুদের হাত থেকে খাস জমিগুলো মুক্ত রাখতে হবে। তাছাড়া বাজারের স্থিতিশীলতা ও কৃষকদের অবাধ প্রবেশের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এন্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) ও ‘নিজেরাই করি’ এর যৌথ উদ্যোগে ‘নারী-পুরুষ সমতা এবং গ্রামীণ নারীর ক্ষমতায়নে জলবায়ু পরিবর্তনে সহনীয় কৃষির চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ বিষয়ক সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। মানবাধিকার কর্মী খুশি কবিরের সঞ্চালনায় আয়োজিত সেমিনারে সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শারমীন সুলতানা, এ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এন্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডির) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে লিখিত প্রতিবেদন পাঠ করেন রওশন জাহান মনি। লিখিত বক্তব্যে রওশন জাহান মনি বলেন, এ দেশে এখনো সর্বোচ্চ শ্রমশক্তি কৃষিতেই নিযুক্ত রয়েছে। দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তিও কৃষিখাত। অন্যদিকে আর্থসামাজিক অবস্থায় পুরুষের তুলনায় নারী দারিদ্র্যসীমার প্রায় ৪৩ শতাংশ নিচে বাস করে। এর মূলে রয়েছে নারীর অশিক্ষা, অপুষ্টি, বৈষম্যমূলক মজুরি ও প্রশিক্ষণের অভাব ইত্যাদি। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করে নারীর ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানো প্রয়োজন। কৃষিনির্ভর অর্থনীতির দেশে কৃষিকে যেমন উপেক্ষা করা যায় না, তেমনি এখাতে নিয়োজিত নারীর অবদানকে যথাযথ স্বীকৃতি ও সমর্থন এখন সময়ের দাবি। অন্যদিকে জীবন সংগ্রামে নারীরা সম্মুখ যোদ্ধা অবস্থানে থাকলেও সম্পদের ওপর নারীর অধিকার এখনও দূরের স্বপ্ন হয়ে রয়ে গেছে। নারী-পুুরুষের সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন বাস্তবায়নে তিনি সংবিধান ও আইনকানুন সম্বলিত সুপারিশ তুলে ধরে বলেন, খাস জমি নীতিমালায় বৈষম্যের জায়গাটি তুলে দিয়ে এটিকে আইনে পরিণত করতে হবে, বাণিজ্যিক ব্যবহারের উদ্দেশে খাস জমি বিতরণ সীমিত রাখতে হবে, স্থানীয় পর্যায়ের সকল স্তরে কৃষি ও নারী ভিত্তিক শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। আবু সাঈদ খান বলেন, মানব সভ্যতায় কৃষি ব্যবস্থার প্রবর্তন হয়েছে নারীদের হাত ধরে। কিন্তু তারা এখনো তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত ও প্রতিনিয়ত বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। পুরুষরা নিজেদের স্বার্থ চিন্তা করে ক্ষমতার বলে সমাজকে পুরুষতান্ত্রিক বানিয়ে রেখেছে। তাতে বিশেষ লাভ হবে না। বৈষম্যভিত্তিক পরিবার বা সমাজে এগিয়ে যেতে পারে না। এ বৈষম্য দূর করে নারী-পুরুষ সমতা আনতে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। নারী-পুরুষ সমতার লড়াই এ সফল হতে সরকারের নীতি, শিক্ষা ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার আমূল পরিবর্তন দরকার। তিনি সরকারী খাস জমিগুলো বরাদ্দের বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, কোন এলাকায় শিল্প কারখানা হবে, কোথায় চাষাবাদের উপযোগী তা নির্ধারণ করে জমি বরাদ্দ দিতে হবে। এই জন্য ভূমি ব্যবহার নীতি থাকা দরকার। তাছাড়া বাজারে স্থিতিশীলতা ও কৃষকদের প্রবেশের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। গ্রামে যে ফল ১০ টাকা, শহরে এসে তা ৬০ টাকা। এর মধ্যে মধ্যস্থতাকারীরাই সুবিধা ভোগ করে। এখনও কৃষির ওপর আমাদের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে। তাই গ্রামীণ কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই শিল্পায়ন করতে হবে। এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে কৃষি জমি অনেক কমে এসেছে। তবে জনসংখ্যা যেমন বেড়েছে, খাদ্য উৎপাদনও তেমন বেড়েছে। এটা আমাদের অনেক বড় সাফল্য। তবে কৃষি ক্ষেত্রে নিয়োজিত মানুষগুলো অনেক বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এখনো সক্ষম পুত্র না থাকলে বিধবারা খাস জমির বরাদ্দ পায় না।
×