ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

শক্ত অবস্থানে আওয়ামী লীগ, কোন্দলে জর্জরিত বিএনপি ও বিজেপি ॥ ভোলা

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

শক্ত অবস্থানে আওয়ামী লীগ, কোন্দলে জর্জরিত বিএনপি ও বিজেপি ॥ ভোলা

হাসিব রহমান, ভোলা ॥ দ্বীপ জেলা ভোলায় সংসদ নির্বাচনী ঢামাঢোল বেজে উঠছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এখন সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনা, নানা হিসাব-নিকাশসহ চলছে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ। বিশেষ করে কে কোন আসন থেকে মনোনয়নের টিকেট পাচ্ছেন তা নিয়ে ভোলা শহর থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের চায়ের টেবিলে ঝড় বইছে। কে মনোনয়ন পেলে এলাকার উন্নয়ন হবে, দুর্নীতি কম হবে, ত্যাগী ও প্রবীণ নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন হবে, কার জনপ্রিয়তা কেমন, কোন নেতার ক্ষমতা বেশিÑ এসব নানা বিষয় নিয়ে শুধু সাধারণ মানুষই নয়, আওয়ামী লীগ বিএনপি ও বিজেপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা নানা বিচার বিশ্লেষণ করছেন। তফসিল ঘোষণার আগেই আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা গণসংযোগ, উঠান বৈঠকসহ প্রচার শুরু করেছে। তবে বিএনপি বা অন্য দলগুলো নির্বাচনী মাঠে তারা এখনও নামেনি। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত হলেও বিএনপি জোটে রয়েছে চরম কোন্দল। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ প্রচার এবং সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী হওয়ায় ক্ষমতাসীন দল অনেক এগিয়ে রয়েছে। আওয়ামী লীগ টানা দুইবারের ক্ষমতার আমলে ভোলা জেলার সার্বিকভাবে ব্যাপক উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে জয়ের নিশানা উড়াতে সচেষ্ট রয়েছে। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে বিএনপি জোটের জন্য সামনে অনেক কঠিন পরীক্ষা রয়েছে বলে মনে করছে স্থানীয়রা। তারপরও সকল বাধা উপেক্ষা করে তারা আসন পুনরুদ্ধারে প্রাণপণ চেষ্টা করবে বলে সূত্রগুলো বলছে। শেষ পর্যন্ত জনপ্রিয় ব্যক্তির বদলে নতুন কোন মুখ দলীয় টিকেট নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামলে ফলাফল বুমোরাং হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ভোলা দ্বীপের রাজনীতি মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ঘিরে। একটি আসনে বিজেপির প্রার্থী থাকলেও তারা বিএনপির ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া জাতীয় পার্টি রয়েছে নাম সর্বস্ব। তবে জামায়াতের উল্লেখযোগ্য একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে। এদিকে সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু কিছু সম্ভাব্য প্রার্থী গত ৫ বছর ভোলায় কোন কর্মকা- না করে ঢাকায় বসে মনোনয়ন পেতে ফেসবুক, বিভিন্ন দিবসের শুভেচ্ছা পোস্টারসহ বিভিন্ন উপায়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। ভোলা-১ (সদর) ॥ ভোলা সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত ভোলা-১ আসন। জেলার ৪টি আসনের মধ্যে এই আসনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব, বর্তমান সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী তোফায়েল আহমেদের ওপর নির্ভর করে এখানকার আওয়ামী রাজনীতি। তার বিকল্প আর কেউ নেই। তিনি একাধিকবার ভোলার বিভিন্ন আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। স্বাধীনতার আগে ১৯৭০ সালে তিনি প্রথম এমএনএ নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ তিনি নির্বাচিত হন। এ পর্যন্ত তিনি ভোলা-১ ও ২ আসন থেকে প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ ৭ বার নির্বাচিত হয়েছেন। মূলত স্বাধীনতার পর তোফায়েল আহমেদ নির্বাচিত হলে তার হাত ধরেই ভোলার উন্নয়নের সূচনা হয়। তার উদ্যোগেই সর্বপ্রথম ভোলা-চরফ্যাশন সড়ক পাকা হয়। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পার্টির প্রার্থী নাজিউর রহমান মঞ্জুরকে হারিয়ে তোফায়েল আহমেদ নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালের ১২ জুন বিএনপির প্রার্থী মোশারেফ হোসেন শাজাহানকে হারিয়ে আবারও তিনি নির্বাচিত হন। এছাড়া ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি ভোলা-১ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ভোলার দৃশ্যমান বাগমারা সেতুসহ অসংখ্য স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট, ২৫০ শয্যার হাসপাতালসহ বড় বড় যেসব উন্নয়ন হয়েছে তাঁর প্রায় অধিকাংশ তাঁর আমলেই হয়েছে। ভোলার প্রধান সমস্যা নদী ভাঙ্গন এবং জলোচ্ছ্বাস। ৭০-এর ভয়াল জলোচ্ছ্বাসের পর তোফায়েল আহমেদই প্রথম বঙ্গবন্ধুকে এনে দৌলতখানের আমানী বাজার এলাকায় বাঁধ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করান। আবার ভোলা শহরকে মেঘনার ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করতে তোফায়েল আহমেদই প্রথম তুলাতুলি পয়েন্টে ব্লকবাধ নির্মাণ করেন। যা আজও ভোলাকে রক্ষা করে যাচ্ছে। ৯৬ সালে তাঁর উদ্যোগেই ভোলার ভেদুরিয়া থেকে বরিশালের লাহারহাট দিয়ে ফেরি চলাচল শুরু হয়। ভোলা নদী ভাঙ্গন রোধে অন্য কোন সরকারের আমলে বাস্তব সম্মত কার্যকারী পদক্ষেপ না নিলেও ভোলা ইলিশা, রাজাপুর, কাচিয়া, ধনিয়াসহ কয়েকটি ইউনিয়ন মাস্টার প্লানের মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদী ভাঙ্গন রোধে ব্লক স্থাপন করা হচ্ছে। তার প্রচেষ্টায় ভোলায় কয়েক যুগ ধরে পড়ে থাকা মূল্যবান খনিজ সম্পদ প্রকৃতিক গ্যাস উত্তোলন করে ঘরে ঘরে আবাসিক সংযোগ দেয়া হয়। এমনকি ভোলাকে মূল ভূ-খ-ের সঙ্গে যুক্ত করতে ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তোফায়েল আহমেদ, যা প্রধানমন্ত্রী বাস্তবায়ন করবেন বলে ঘোষণা করেন। ইতোমধ্যে সম্ভব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া তার একান্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভোলার বাংলার বাজারে স্বাধীনতার জাদুঘর ও বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং একটি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল স্থাপনের কাজ শুরু করেছেন। তোফায়েল আহমেদের প্রচেষ্টায় বোরহানউদ্দিনে সরকারীভাবে গ্যাস ভিত্তিক ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত প্লান্ট এবং বেসরকারীভাবে অপর একটি ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। আরও ২২৫ মেগাওয়াটের একটি প্লান্ট নির্মাণ কাজ চলছে। তা ছাড়া ভোলা খেয়াঘাট এলাকায় সরকারীভাবে অপর একটি ২২৫ মেগাওয়াটের প্লান্ট স্থাপনের কাজ শুরু হবে। এ রকম বড় বড় দৃশ্যমান উন্নয়ন প্রকল্প তোফায়েল আহমেদের দ্বারাই সম্ভব বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। যা ইতোপূর্বে ভোলার কোন মন্ত্রী-এমপি করেননি। এ জন্যই তার কোন বিকল্প এখানে নেই বলে মনে করছে সাধারণ ভোটার ও নেতাকর্মীরা। তাকে ঘিরেই ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি পরিচালিত হয়ে আসছে। তাই ভোলা বলতেই তোফায়েল। এসব কারণে ভোলায় তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ এবং শক্তিশালী। ভোলা-১ আসনে এত উন্নয়নের কারণে তোফায়েল আহমেদের জয়ের ব্যাপারে সাধারণ ভোটার ও নেতাকর্মীর আশাবাদী। তাদের বিশ্বাস এ আসনটি ধরে রাখতে হলে তোফায়েল আহমেদের বিকল্প কেউ নেই। তাছাড়া মাঠ পর্যায়ে তিনি ছাড়া আর অন্য কোন প্রার্থীর কর্মকা-ও নেই। তিনিই আগামীতে ভোলা-১ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হবেন বলে মনে করছে ভোলার মানুষ। ভোলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভোলা-১ আসনে ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপির প্রার্থী মোশারেফ হোসেন শাজাহান প্রথম নির্বাচিত হন। তারপর ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে নাজিউর রহমান মঞ্জুর নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তোফায়েল আহমেদের কাছে বিএনপি হেরে যায়। কিন্তু ২০০১ সালে ১ অক্টোবরের নির্বাচনে বিএনপির মোশারেফ হোসেন শাজাহান ফের নির্বাচিত হন। তারপর এ আসনটি ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপির কাছ থেকে হাত ছাড়া হয়ে বিএনপি জোটের শরিক দলের প্রার্থী বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ নির্বাচিত হন। মূলত ২০০৮ সনের নির্বাচনে মনোনয়নকে কেন্দ্র করেই দ্বন্দ্ব দেখা দেয় ভোলা জেলা বিএনপি ও বিজেপির মধ্যে। স্থানীয়রা মনে করেন বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নাজিউর রহমান মঞ্জুর ইমেজ এবং বিএনপি জোটের ওপর ভর করেই ওই সময় পার্থ নির্বাচিত হন। কিন্তু নির্বাচিত হলেও ভোলা জেলা বিএনপির কিছু নেতা তাকে মেনে নিতে পারেনি। বিএনপির সঙ্গে রয়েছে তাদের তীব্র মতবিরোধ। প্রকাশ্যে না হলেও ভিতরে ভিতরে ইতোমধ্যে বিজেপি তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। দলীয় নেতাকর্মীরা আশা করছেন এবার ব্যারিস্টার পার্থ বিএনপি জোট থেকে মনোনয়ন পাবেন। এদিকে বিজেপি দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় দলের অনেক সিনিয়র নেতকর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। অপরদিকে বিএনপি জোট থেকে ভোলা সদর আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর মনোনয়ন পেতে জোর লবিং করছেন ওপর মহলে। এ আসন থেকে ইতোপূর্বে তার বড় ভাই বিএনপির সাবেক ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মরহুম মোশারেফ হোসেন এমপি ছিলেন। মোশারেফ হোসেন শাজাহানের পরিবারের ওপর কেন্দ্র করেই এখনও জেলা বিএনপি পরিচালিত হয়। বলতে গেলে তারাই জেলা সদরের বিএনপি ধরে রেখেছে। কিন্তু আসন্ন নির্বাচনের পূর্বে জেলা বিএনপি অঙ্গ সংগঠন জেলা যুবদলের কমিটি গঠন নিয়ে কোন্দল চরমে পৌঁছেছে। নিজেদের কোন্দলের কারণে দলীয় অফিসে তালা ঝুলানো, বিক্ষোভ, প্রতিবাদ সমাবেশ, কেন্দ্রীয় যুবদল নেতৃবৃন্দের কুশপুতুল দাহ করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত বিএনপি সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর, না কি বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ মনোনয়ন পান তা নিয়ে কর্মীদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। কারণ পার্থকে জেলা বিএনপির সিনিয়র পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মেনে নিতে পারছেন না। বিএনপি নেতারা জানান তারা গোলাম নবী আলমগীরকেই চাচ্ছেন। অপরদিকে ভোলা-১ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হায়দার আলী লেলিনও মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। তিনি এ আসনে বিএনপির টিকেট পেতে লবিং করছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এছাড়া সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির ভোলায় কোন অস্তিত্ব চোখে না পড়লেও ভোলা-১ আসন থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক আজিম গোলদার জাতীয় পার্টি থেকে আসন্ন নির্বাচনে সম্ভব্য প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ওলামা মাশায়েক আইম্মা পরিষদের ভোলা জেলা আহ্বায়ক আল্লামা ইয়াসিন নবীপুরী ভোলা-১ আসন থেকে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দলের নেতৃবৃন্দ নিশ্চিত করেন। ভোলা-২ (দৌলতখান-বোরহানউদ্দিন) ॥ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই আসন থেকে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালের ৭ মে’র এবং ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে তোফায়েল আহমেদ নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন তোফায়েল আহমেদ। এছাড়া ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর তিনি পুনরায় ভোলা-২ আসন থেকে বিএনপি জোটের প্রার্থী আশিকুর রহমান শান্তকে হারিয়ে নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে তোফায়েল আহমেদের বড় ভাইয়ের ছেলে দৌলতখান পৌরসভার সাবেক মেয়র আলী আজম মুকুল নির্বাচিত হন। ভোলার রাজনীতিতে এই নতুন সংসদ সদস্যের জনপ্রিয়তা একটু ব্যতিক্রম। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে একদিকে যেমন এলাকার উন্নয়ন করেছেন। তেমনি তৃণমূলের গণমানুষের বন্ধু হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। তিনি যখনই এলাকায় থাকেন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মানুষ তাকে ঘিরে রাখেন। তিনি মানুষের সুখ, দুঃখ, সমস্যা, অভাব, অনটনের কথা শুনে সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করেন। কোন বাধা ছাড়াই সাধারণ একজন মানুষ তার কাছে গিয়ে কথা বলার সুযোগ পায়। তিনিও সময়ে অসময়ে দল মত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় দিয়ে তাদের সুবিধা অসুবিধার কথা শোনেন। এলাকার কোন অসহায় মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার চিকিৎসার শেষ ভরসা এমপি মুকুল। আলী আজম মুকুলের বিশেষ প্রচেষ্টায় তার আসনে ২টি কলেজ ও একটি হাইস্কুল জাতীয়করণ করা হয়। দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিন উপজেলায় নদী ভাঙ্গনে ইতোপূর্বে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলেও আলী আজম মুকুলের প্রচেষ্টা প্রায় সাড়ে ৫শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে সিসি ব্লক স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। দৌলতখান উপজেলা কমপ্লেক্স, দৌলতখান থানা, ফায়ার সার্ভিস, তেঁতুলিয়া রিভার ভিউ পার্ক করেছেন। বেতুয়া খালের ওপর বিশাল সেতুসহ অসংখ্য ছোট বড় রাস্তাঘাট, পোল-কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। ২০০১ সালের পর বিএনপির জোট ক্ষমতায় এলে সাবেক সংসদ হাফিজ ইব্রাহিমের আমলে দৌলতখান বোরহানউদ্দিন রক্তাক্ত জনপদে পরিণত হয়। হামলা মামলা, নারী নির্যাতন, জবর দখল, বাড়ি ঘরে আগুন গরু ছাগল, পুকুরের মাছ লুট থেকে এমন কোন সন্ত্রাসী কর্মকা- নেই যা সেখানে হয়নি। কিন্তু সেই প্রতিহিংসার বদলে সহাবস্থানে দেখা যায় বিএনপির নেতাকর্মীদের এলাকায় অবস্থানে রয়েছে। যা ২০০১ সালে এই সহাবস্থান ছিাল স্বপ্নে মতো। অথচ বিএনপির আমলে বর্তমান এমপি আলী আজম মুকুলের বিরুদ্ধে ২২টি মামলা করা হয়। ২৬ মাস তাকে দেশের বাইরে পালিয়ে থাকতে হয়েছিল। এরপর এমপি নির্বাচিত হয়ে তিনি কোন প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ নেননি। এসব নানা কারণে আলী আজম মুকুলের জনপ্রিয়তা সবচাইতে বেশি তৃণমূল মানুষের কাছে। তারা মনে করছে আগামীতে বিএনপি জোটের প্রার্থীর বিরুদ্ধে মোকাবেলা করতে আলী আজম মুকুলের বিকল্প নেই। তিনি ছাড়া আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থীর মাঠে তেমন তৎপরতা নেই। ইতোমধ্যে আলী আজম মুকুল উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্মেলন করে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সকল কমিটি গঠন করেছেন। এলাকায় এলাকায়, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে উঠান বৈঠক করে দলের নেতাকর্মীদের সাংগঠনিকভাবে আগের চাইতে অনেক শক্তিশালী করেছে। নেতাকর্মীরা মনে করছেন এ আসনে মুকুল মনোনয়ন পেলে পুনরায় আওয়ামী লীগের দখলে থাকবে। ২০০১ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হাফিজ ইব্রাহিম নির্বাচিত হন। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে হাফিজ ইব্রাহিম মনোনয়ন পায়নি। তার বদলে বিএনপি জোট থেকে বিজেপির প্রার্থী আশিকুর রহমান শান্ত মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তোফায়েল আহমেদের কাছে হেরেছেন। আশিকুর রহমান শান্ত বিজেপি থেকে পদত্যাগ করায় এবার বিএনপি জোট থেকে হাফিজ ইব্রাহিম এই আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য লবিং করছেন বলে জানা গেছে। প্রকাশ্যে মাঠে কোন কর্মকা- চোখে না পড়লেও ভেতরে ভেতরে হাফিজ ইব্রাহিমের নেতাকর্মীরা মাঠ পর্যায়ে তৎপর রয়েছেন। দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিনের বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করছেন হাফিজ ইব্রাহিম ছাড়া এ আসনটি পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। মনোনয়ন পেতে তার কোন আইনী জটিলতা নেই বলেও তার দলের নেতাকর্মীরা প্রচার করছে। কিন্তু তিনি ছাড়াও ভোলা-২ আসনে আরও একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। আমেরিকা প্রবাসী জাহাঙ্গীর এম আলম এখন এলাকায় এসে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। বিএনপির হাইকমান্ডের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত জাহাঙ্গীর ভোলা-২ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া বিএনপির অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী অধ্যাপক ডাঃ সিরাজুল ইসলাম। ইতোমধ্যে তিনি এলাকায় পোস্টার ব্যানারের মাধ্যমে তৎপরতা জানান দিচ্ছেন। অপরদিকে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় কমিটির জাতীয় যুব সংহতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিল্পপতি মিজানুর রহমান এলাকায় তৎপরতা চালাচ্ছেন। ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) ॥ এই আসনটিতে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোঃ মোতাহার হোসেন মাস্টার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নজরুল ইসলাম বিএনপির প্রার্থী মোজাম্মেল হককে হারিয়ে নির্বাচিত হন। তারপর থেকে এ আসনটি আওয়ামী লীগের কাছ থেকে হাত ছাড়া হয়ে যায়। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ নির্বাচিত হন। তারপর ১৯৯১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেজর (অব.) হাফিজ পুনরায় নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে মেজর (অব:) হাফিজ নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালের ১২ জুন এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে পুনরায় বিজয়ী হন মেজর (অব.) হাফিজ। তবে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মেজর হাফিজকে হারিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মেজর (অব.) জসিম উদ্দিন নির্বাচিত হন। কিন্তু আইনী জটিলতায় ভোলা-৩ আসনটি দুই বছরের মাথায় শূন্য হয়। তারপর ২০১০ সালে উপনির্বাচনে এ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিনকে হারিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন নির্বাচিত হন। টানা পাঁচবার মেজর (অব.) হাফিজ ভোলা-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হওয়ার পর ২০০১ সালে ভোলা-৩ আসনে শুরু হয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বর নির্যাতন। বেসামাল হয়ে পড়ে ওই এলাকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ঘর বাড়ি লুটপাট, চাঁদাবাজি, চোখ উৎপাটন, ধর্ষণ থেকে শুরু করে এমন কোন সন্ত্রাসী কর্মকা- নেই যা হয়নি লালমোহন ও তজুমদ্দিনে। তৎকালীন বিএনপির কতিপয় নেতা মৌমাছি বাহিনী সৃষ্টি করে। যা সাধারণ মানুষের কাছে ছিল এক আতঙ্কের নাম। তাদের ভয়ে বহু মানুষ এলাকা ছাড়া হয়। এসব কারণে দেশব্যাপী তখন ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি। তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন মেজর হাফিজ। বর্বর নির্যাতনের এক কলঙ্কের তিলক লেপন হয় ভোলা-৩ আসনের ওপর। যা মনে পড়লে লালমোহনের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আজও আঁতকে ওঠে। ২০১০ সালের উপনির্বাচনে নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এমপি হওয়ার পর ভোলা-৩ আসনের আমূল পরিবর্তন শুরু হয়। দীর্ঘদিনের ঝিমিয়ে পড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে, দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্ত করতে মাঠে নামে আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এমপি শাওন। তার সাংগঠনিক দক্ষতায় লালমোহন তজুমদ্দিনে শক্ত অবস্থানে গিয়ে পৌঁছে আওয়ামী লীগ। এমনকি মহিলা লীগের নেতকর্মীরা এখানে বেশ তৎপর। তারপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুনবী চৌধুরী শাওন জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ্যাডভোকেট এ কে এম নজরুল ইসলামকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে জয়লাভ করে। নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন শুধু দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালীই করেননি। দীর্ঘদিনের অনুন্নত এলাকার উন্নয়নে কাজ শুরু করেন। এলাকার বড় সমস্যা নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে লালমোহন ও তজুমদ্দিনে ১১শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাঙ্গন রোধে কাজ শুরু করেন। লালমোহন শহরবাসীর দুঃখ লাঙ্গলখালীর দীর্ঘ সেতুসহ অসংখ্য স্কুল-কলেজ, পুল-কালভার্ট, ফায়ারসার্ভিস স্টেশন, উপজেলা কমপ্লেক্স, থানা, ওয়াইফাই সুবিধাসহ সজীব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল পার্ক স্থাপন, ৮৫ ভাগ মানুষকে বিদ্যুতের সুবিদা প্রদান, বেকার তরুণদের জন্য বিনা খরচে আইটি প্রশিক্ষণ প্রদানসহ ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেন। নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনই একমাত্র এমপি যিনি কয়েক হাজার মানুষের সামনে জনতার মুখোমুখি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। শুধু এলাকার মানুষের জীবন মানের উন্নয়নই নয় আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘর গুছিয়ে নিয়েছেন। প্রতি মাসে অন্তত ৭ থেকে ১৫ দিন এলাকায় ঘুরে ঘুরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জনসংযোগ করছেন। তিনি ছাড়া আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী মাঠে নেই। বিএনপি প্রার্থী মেজর (অব.) হাফিজ যদি নির্বাচন করে তাকে মোকাবেলা করতে শাওনই যোগ্য প্রার্থী বলে মনে করছে এলাকার নেতাকর্মীরা। অপরদিকে এলাকায় রাজনৈতিক কোন কর্মকা- না থাকলেও সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) জসিম উদ্দিন ঢাকায় বসে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে লবিং করছেন বলে প্রচার আছে। এদিকে ২০১০ সালের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের কাছে পরাজিত হওয়ার পর থেকে বিএনপির মেজর হাফিজ তার নির্বাচনী এলাকা থেকে বলতে গেলে বিচ্ছিন্ন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপির নেতা বলেন, উপনির্বাচনে মেজর হাফিজ হেরে গিয়ে তারপর আর লালমোহন তজুমদ্দিন আসেননি। তিনি এলাকার বাইরে বসে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বদলে তার আত্মীয়স্বজন দিয়ে পকেট কমিটি গঠন করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তজুমউদ্দিন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানকে বাদ দিয়ে বিতর্কিত কমিটি গঠন করেন। একইভাবে লালমোহন উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনিচল হক মিয়াকে বাদ দিয়ে কমিটি গঠন করেন মেজর হাফিজ। সেই কমিটিতে তার আত্মীয়দের অন্তর্ভুক্ত করেন। এসব ঘটনায় লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলা ত্যাগী বিএনপির নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন মেজর হাফিজের ওপর। বর্তমানে দলের মধ্যেই চরম কোন্দল চলছে। লালমোহনে বিএনপি দুটি কমিটি গঠন করা হয়। একটি হাফিজপন্থী, আর অন্যটি খালেদাপন্থী। হাফিজপন্থী কমিটির সভাপতি হচ্ছেন কবির পাটোয়ারি ও সম্পাদক তার ভাতিজা মার্শাল হিমু এবং খালেদাপন্থী কমিটির সভাপতি আনিচল হক মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক চরভূতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান টিটব। এ অবস্থায় বিএনপির সংস্কারপন্থী নেতা মেজর হাফিজ আবার বিএনপির টিকেট পেলেও তার ঘরের কোন্দল মিটাতে না পারলে নির্বাচনে চরম বেকায়দায় পড়বে বলে মনে করছে দলের নেতাকর্মীরা। এদিকে ভোলা-৩ আসনে বিএনপি থেকে মেজর হাফিজ ছাড়াও চরভূতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান টিটব মনোনয়নের জন্য লবিং করছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে এ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, নুর নবী সুমন ও মাওলানা কামাল উদ্দিন মনোনয়ন পেতে লবিং করছেন। ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) ॥ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী নাজিম উদ্দিন আলমকে হারিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব নির্বাচিত হন। এছাড়া ২০১৪ সালের নির্বাচনেও আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এ আসনটি বলতে আওয়ামী লীগের পুরাতন একটি ঘাঁটি। স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দখলে থাকে। ১৯৮৬ সালে এ আসনটি একবার জাতীয় পার্টির দখলে চলে যায়। কিন্তু ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ফের আওয়ামী লীগের দখলে ফিরে আসে। তারপর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে এই আসনটি টানা ১০ বছর বিএনপির প্রার্থী নাজিম উদ্দিন আলমের দখলে ছিল। গত জোট সরকারের আমলে এখানেও চলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবও তখন হামলা মামলা থেকে রক্ষা পায়নি। তার বাড়িতে বোমাবর্ষণসহ হামলা করা হয়। এরপর ২০০৮ সালে সাবেক সংসদ মরহুম অধ্যক্ষ এম এস নজরুল ইসলামের জ্যেষ্ঠ পুত্র আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বিএনপির কাছ থেকে এ আসনটি উদ্ধার করেন। এরপর টানা ১০ বছর এ আসনটি আওয়ামী লীগের কাছে রয়েছে। দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার পর আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বর্তমানে জলবায়ু, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর তার পিতা সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ নজরুলের রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজ ও স্বপ্নপূরণে কাজ শুরু করেন। তিনি গত ১০ বছরে চরফ্যাশনের আমূল পরিবর্তন করেছেন। তিনি চরকে বাস্তবে ফ্যাশনে পরিবর্তন করেছেন। তিনি চরফ্যাশন উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়ন থেকে ২১টি ইউনিয়নে রূপান্তর করেছেন। উপমন্ত্রী জ্যাকবের প্রচেষ্টায় চরফ্যাসন উপজেলায় নতুন তিনটি থানা স্থাপন হয়। চরফ্যাশন ও মনপুরায় তাঁর প্রচেষ্টায় ৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হয়। তার উদ্যোগে চরফ্যাশনে ৫টি কলেজ নির্মাণ, বাংলাদেশের মধ্যে অত্যাধুনিক বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ, প্রায় ৪০০ মিটার মায় সেতু, প্রায় ৩৫০ মিটার সুলতানের খেয়া, ১৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে মনপুরা ও চরফ্যাশনে সিসি ব্লকের কাজ করা হয়। গত ১০ বছরে রাস্তাঘাটসহ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার কাজ হয় ভোলা-৪ আসনে। এ আসনটি বাংলাদেশের মধ্যে একটি আলোচিত পর্যটন এলাকা। দক্ষিণ এশিয়ার সুউচ্চ দৃষ্টিনন্দন ২২৫ ফুট উচ্চতার ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করে জ্যাকব দেশ বিদেশে আলোড়ন তুলেছেন। ওই টাওয়ারের নামকরণ করা হয় জ্যাকব টাওয়ার। অন্যদিকে পর্যটন এলাকা কুকরি মুকরিতে স্থাপন করা হয়েছে অত্যাধুনিক রেস্টহাউজ। এছাড়া রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ কুকরি মুকরিতে একটি ইকো পার্কেরও উদ্বোধন করেন। অপরদিকে ফ্যাশন স্কয়ারে স্থ’াপন করেছেন দৃষ্টিনন্দন মিউজিক ফোয়ারা। তার পাশেই করা হয়েছে বিনোদনের জন্য শেখ রাসেল শিশু পার্ক। এছাড়া জ্যাকব চরফ্যাশনে রেজিস্ট্রি অফিস থেকে শুরু করে অতিরিক্ত জেলা জজকোর্ট, পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থাপন করেন। চরফ্যাশন এসব উন্নয়নমূলক কাজই শুধু নয়, সাংগঠনিকভাবেও জ্যাকবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিগত দিনের চাইতে অনেক বেশি শক্তিশালী। এসব কারণে ভোলা-৪ আসনে আওয়ামী লীগে প্রার্থী হিসেবে আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বিকল্প নেই। তাছাড়া জ্যাকব ছাড়া বর্তমানে ভোলা-৪ আসনে অন্য কোন প্রার্থীও মাঠে নেই। এদিকে স্বাধীনতার পর এ আসনে ১৯৯৬ সালে প্রথম বিএনপি জয়ের মুখ দেখে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাফরউল্লা চৌধুরীকে ২১ হাজার ১১৫ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে বিএনপি প্রার্থী নাজিম উদ্দিন আলম নির্বাচিত হন। তার পরের বছর ২০০১ সালে এ আসনটি বিএনপির দখলে রাখেন নাজিম উদ্দিন আলম। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বিজয়ী হওয়ার থেকে কোণঠাসা হয়ে পড়ে বিএনপি। চরফ্যাশন মনপুরায় দৃশ্যমান কোন কর্মকা- নেই। রাজনৈতিক কর্মকা- বা কোন দিবসও পালন করতে দেখা যায় না। তবে সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আলমের নিয়ন্ত্রণে অধিকাংশ নেতাকর্মী প্রকাশ্যে না হলেও ভিতরে ভিতরে দলগুছানোর কাজে ব্যস্ত। তারা এখন নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে অনেকটা গোপনে কমিটি গঠন করছে। নাজিম উদ্দিন আলমপন্থীরা মনে করছে, আওয়ামী লীগের কাছ থেকে পুনরায় এ আসন উদ্ধার করতে হলে নাজিমউদ্দিন আলম যোগ্য প্রার্থী। তবে এ আসনে তিনি ছাড়াও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য নূর ইসলাম নয়ন মনোনয়নের জন্য জোর লবিং করছেন। এতে করে তার অনুসারীদের সঙ্গে চরফ্যাশনে বিএনপির নেতাকর্মীদের কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে। এলাকায় মুখোমুখি অবস্থানে না থাকলেও জেলা সদরে বিএনপির একটি সভায় যোগ দেয়ার পূর্ব মুহূর্তে নাজিম উদ্দিন আলম গ্রুপ ও নূর ইসলাম নয়নের গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে ফ্রেশ ইমেজের তরুণ বিএনপি নেতা নুর ইসলাম নয়ন আশাবাদী বলে জানান। তিনি বর্তমানে কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য ও কেন্দ্রীয় যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তা ছাড়া বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ঢাকা হাইকোর্টে বার এসোসিয়েশনের জাতীয়তাবাদী ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক এ্যাডভোকেট মোঃ ছিদ্দিকুল্লাহ মিয়া লবিং করছেন বলে শোনা যাচ্ছে। ক্লিন ইমেজের আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ হিসেবে এলাকায় তার সুনাম রয়েছে। অপরদিকে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন থেকে এ্যাডভোকেট মোঃ মহিবউল্যাহ ও এরশাদের জাতীয় পার্টি থেকে আবদুল মন্নান ও মিজানুর রহমান প্রার্থী হতে পারে বলে এলাকায় শোনা যাচ্ছে।
×