ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

নোটবুকের ঘটক আর থাকছে না, নতুন ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

নোটবুকের ঘটক আর থাকছে না, নতুন ব্যবস্থা

সমুদ্র হক ॥ একটি ইংরেজী শব্দ ‘ই’। বিশাল ব্যাপ্তি। ভূম-ল ছাড়িয়ে মহাকাশ। ই-ছাড়া বিশ^ অচল। ই-ছাড়া জীবন অচল। ভালবাসা, প্রণয়ে- ই। পরিণয়ে (বিয়ে) ই। একটা সময় বিয়ের জন্য ঘটক ধরতে হতো। আজকের দিনে ধরতে হয়। খুঁজতে হয় না। যার নাম ই-ঘটক। ঘরেই থাকে চুপটি করে। ছেলেমেয়ের প্রজনন স্বাস্থ্যে কিশোরবেলা শুরু হলেই ই-ঘটকের এ্যাসিটেন্টরা মনের মাঠে নেমে পড়ে। বিয়ের প্রাথমিক পাঠ শুরু হয় প্রণয়ের বর্ণমালা পাঠের স্কুলে। এই স্কুল ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার। এরপর প্রণয়ের পালায় কখনও, বিচ্ছেদ কখনও মিলন। তারপর বিচ্ছেদ ও মিলন যাই আসুক বিয়ের সফলতা আনতে বর্তমানে সেদিনের ঘটকের দরকার পড়ছে না। ঘরের কোথাও লুকিয়ে থাকা ই-ঘটককে আমন্ত্রণ জানানো হয়। যেখানে বিচ্ছেদের ছন্দ লয় কখনও মিলন হয়ে ওঠে। এরও খরচাপাতি আছে। যা ই-খরচ। নেটে ঘটকের জন্য কিনতে হয় মেগাবাইট, গিগাবাইট। ‘ই’ অর্থ ইলেক্ট্রনিক। এ কালের ঘটক ইলেক্ট্রনিক। ই-ঘটকের সঙ্গে পরিচিতির আগে দেখা যাক কেমন ছিল নিকট অতীতের ঘটক। পাজামা-পাঞ্জাবি পরা বয়স্ক মানুষ। হাতে ছাতা। পকেটে নোটবুক। সেখানে ছেলেমেয়ের ছবি ও ঠিকুজি। বিয়ের জন্য পাত্র-পাত্রী দেখার খবর পেলেই ঘটক ছুটে যায় সেই বাড়িতে। শুরুতে কুশলাদি ও কথাবার্তা। কেমন ছেলে বা মেয়ে পরিবারের পছন্দ তা জানা। তারপর খোঁজখবর করা। সামাজিক আচার। পছন্দের পর পাকা দেখা। নানা কথা। অঙ্কে মিলে যাওয়ার পর বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক। এরপর ঘটক বিদায়। এ ছিল বাঙালী সংস্কৃতির অতীতের বিয়ে। অতীতের ঘটকের জন্য বরাদ্দ থাকত একটি লুঙ্গি, একটি ছাতা ও কিছু সম্মানী। পরবর্তী সময়ে এই ঘটকগণ কিছুটা আপডেট হন। যাদের একজন দেশজুড়ে আলোড়িত ঢাকার ঘটক ‘পাখি ভাই’। পাখি ভাইকেও ঘটকালির জন্য প্রযুক্তির আশ্রয় নিয়ে কম্পিউটারে ডাটা রাখতে হয়। পাখি ভাইয়ের শারীরিক দেখা মেলে। তবে আজকের ই-ঘটক অদৃশ্য। শারীরিক দেখা দেন না। দেখা দেন স্মার্টফোন, ট্যাব, ল্যাপটপে। ই-ঘটকের ঠিকানা, হরেক রকম ওয়েবসাইট। ম্যাট্রিমনি, বাঙালী বিয়ে, ব্রাইড-গ্রুম, ম্যারেজ, কাপল লাইফ, ওয়েডিং ইত্যাদি। ই-ঘটকের বাড়িতে (ওয়েবসাইট) প্রবেশের জন্য নেটের বাইট থাকতে হয়। যেমন ই-ঘটক ম্যাট্রিমনির বাড়িতে ঢুকলেন। তারপর রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এ জন্য নির্দিষ্ট মেয়াদে থেকে পাত্র-পাত্রী খোঁজার জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের ফি জমা দিতে হবে মোবাইল পেমেন্ট। তারপর সে একের পর এক পাত্র-পাত্রীর ছবি ও বায়োডাটা দেখাবে। জানাবে যোগাযোগের ঠিকানা। মেইল এ্যাড্রেস ও ফোন নম্বরও দেবে। পাত্র-পাত্রী পছন্দ হলে অভিভাবক যোগাযোগ করতে পারে। আবার যার বিয়ে সে নানাভাবে যোগাযোগ করে বায়োডাটার সঙ্গে প্রকৃত অবস্থা মিলিয়ে নিতে পারে। কারণ ই-ঘটক কতটা সঠিক তথ্য দিচ্ছে তাও জানা দরকার। ই-ঘটককে অতীতের ঘটকের মতো পাত্র-পাত্রী খোঁজার জন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরতে হয় না। বর্তমানের তরুণ -তরুণীর অনেকেই ছবিসহ তাদের পরিচিতি ই-ঘটকের ওয়ালে (দেয়াল) রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে পোস্ট করে। এভাবে প্রতিটি ই-ঘটকের ওয়ালে বহু পাত্রপাত্রী জড়ো হয়ে আছে। শুধু পছন্দ করা। ই-ঘটক শুধু ছেলেমেয়ের পরিচিতিই দেবে। এ পর্যন্তই তার কাজ। বাকিটা অভিভাবকদের সম্পন্ন করতে হবে। এই বিষয়ে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক তরুণ ফাইয়াজ হাসান বললেন, ওয়েবসাইট থেকে পাত্রী পছন্দ করেছেন। এখন কথা চলছে। আরেক তরুণ রেজওয়ান বললেন, অনেকে তারুণ্যের ছবি পোস্ট করেও ভুল কোয়ালিফিকেশন দেয়। এ জন্য ই-ঘটকের ছবি ও বায়োডাটা যাচাই করে নিতে হয়। তরুণী ঝিনুক বললেন, বিয়ের ওয়েবসাইট থেকে তিনি এক ছেলেকে পছন্দ করেছেন। এখন খোঁজখবর নিচ্ছেন। এখন তরুণ -তরুণীর অনেকে এভাবে খুঁজে নেয় তাদের জীবনসঙ্গী। শিহারুল নামের এক তরুণ বললেন, ই-ঘটকের বাড়িতে অনেক ডিভোর্সি নারী-পুরুষ পোস্ট দেন। তারাও তাদের সঙ্গী খোঁজেন। কেউ প্রান্তবেলায় একাকিত্ব ঘোচাতে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চায়। বর্তমানে উন্নত স্মার্টফোনে কম্পিউটারের অনেক প্রোগ্রাম দেয়া আছে। ওয়েবসাইট, গুগল, টুইটার, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম লিংকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নানা কিছু আছে। স্কাইপি, ভাইবার, ইমোতে বিশ্বের যে কোন স্থানে ভিডিও কলিংয়ে যোগাযোগ করা খুবই সহজ। ই-ঘটকের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে কারও সঙ্গে ভিডিওতে কথা বলা যায়। তারপর দু’জনার পছন্দে ও আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে কোথাও লাইভ সাক্ষাত করা যায়। বিয়ের আগে এভাবে পাত্র-পাত্রীরা নিজেদের মধ্যে পরিচয়ের গ-ি বাড়িয়ে কথাবার্তা বলে বিয়ে পরবর্তী জীবনের দিনগুলোকে আরও মধুময় করে তুলতে পারে। এভাবেও ই-ওয়েডিংয়ের নতুন ধারা শুরু হয়েছে। নিকট ভবিষ্যতে প্রজন্মের তরুণ-তরুণী নিজেরাই পছন্দ করে খুঁজে নেবে তাদের কাক্সিক্ষত বর -কনে। ই-ঘটক জেনারেশনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নতুন সৃষ্টির পথে।
×