ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

এসডিজি অর্জনে এগোচ্ছে বগুড়া

ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও ভূমিহীনদের আশ্রয় দেয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ১৮ আগস্ট ২০১৮

ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও ভূমিহীনদের আশ্রয় দেয়া হচ্ছে

সমুদ্র হক ॥ টেকসই উন্নয়নের ১৭ অভীষ্টের (এসডিজি) মধ্যে প্রথম দুইটি ‘নো পোভার্টি ও জিরো হাঙ্গার’ (দারিদ্র্য ও ক্ষুধা মুক্ত) অর্জনে বগুড়া দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। জেলার প্রতিটি এলাকায় ভিক্ষুকদের কর্মের সংস্থান করে দিয়ে স্বাবলম্বী করে তোলা হচ্ছে। ভূমিহীনদের আশ্রয় দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১শ’ ৮০ ভিক্ষুককে কাজের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ দিয়ে কর্মক্ষম করে তোলা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ১২ উপজেলার সকল ভিক্ষুককে এই কর্মসূচীর আওতায় আনা হবে এবং তা অতি দ্রুত। প্রতিটি এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত এবং কর্মহীন হয়ে বসে থাকা ভবঘুরে যারা লোকজনের কাছে হাত পেতে অর্থ সাহায্য নেয় তাদেরও তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী এসডিজি অর্জনে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিয়েছেন। এ ছাড়াও তিনি আশ্রায়ণ ও গুচ্ছগ্রাম বানিয়ে ১ হাজার ৫শ’ ভূমিহীনের বাড়ি ও আয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। উল্লেখ্য, গত বছর সরকার এসডিজির আওতায় নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে দ্রুত দারিদ্র্য দূরীকরণের উদ্যোগ নেয়। ওই সময় দেশের প্রতিটি এলাকায় ভিক্ষুক জরিপের কাজ শুরু করে ভিক্ষুক মুক্তকরণ কর্মসূচী চালু হয়। ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধের পাশাপাশি দারিদ্র্য মুক্তকরণে চালু আছে একটি বাড়ি একটি খামার, গুচ্ছগ্রাম, ভূমিহীনদের পুনর্বাসন প্রকল্পসহ কয়েকটি প্রকল্প। এসব প্রকল্পেও কর্মহীন মানুষদের কাজের ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে। যুব উন্নয়ন অধিদফতর যুবকদের প্রশিক্ষণ ও উপকরণের ঋণ দিয়ে কাজের পথ করে দিয়েছে। এক জরিপে বলা হয় দেশে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ২৪ শতাংশ। অতি দারিদ্র্যের হার ১২ শতাংশ। ২০১৭ সালের শুরুতে বগুড়ার ১২ উপজেলায় প্রাথমিকভাবে ভিক্ষুকদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। এই তালিকায় ছিল ৪ হাজার ৯শ’ ৮৬ জন। এরপর উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ (ইউএনও) যাচাই-বাছাই করেন। তখন একটি সমিতির মাধ্যমে ঋণ দিয়ে কয়েকজনকে পুনর্বাসন করা হয়। পরবর্তী সময়ে ভিক্ষাবৃত্তি নির্মূল কর্মসূচী বাস্তবায়নে উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করে সুনির্দিষ্ট বিধিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়। এই উদ্যোগের সঙ্গে দারিদ্র্য মোচনের সকল কর্মসূচী বাস্তবায়িত হচ্ছে। বগুড়ায় ভিক্ষুক পুনর্বাসন কর্মসূচীর আওতায় ইতোমধ্যে ৫ উপজেলার ৭৫ জন ভিক্ষুককে চাহিদা অনুযায়ী সহায়তা দিয়ে স্বাবলম্বী করে তোলা হয়েছে। বাকি ৭ উপজেলায় ১শ’ ৫ জন ভিক্ষুককে সহায়তা প্রদান চলমান। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রায়হানা ইসলাম সহায়তা প্রদানের এক অনুষ্ঠানে জানান, প্রতিটি উপজেলায় ভিক্ষুকদের তালিকা তৈরি করা হয়। প্রথম পর্যায়ে ১শ’ ৮০ জন ভিক্ষুকের পুনর্বাসনের জন্য প্রতিজনের জন্য ১০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থ ১৮ লাখ টাকার মধ্যে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে সরকারীভাবে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে। বাকি ৮ লাখ টাকা পাওয়া গেছে সমাজসেবা অধিদফতর থেকে। বগুড়া সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক শহিদুল ইসলাম খান বলেন, ভিক্ষুক নির্মূলসহ দারিদ্র্য মোচনের কয়েকটি কর্মসূচী বাস্তবায়িত হচ্ছে। ভিক্ষুকদের সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে দেখা গেল নন্দীগ্রামের ভাটগ্রাম ইউনিয়নের চেঁচোয়া কল্যাণনগর গ্রামের ষাটোর্ধ বয়সী মিরাবালাকে। বিয়ে হয়েছিল দিনমজুরের সঙ্গে। অভাব পিছুু ছাড়েনি। সন্তানরা কেউ খোঁজ নেয় না। ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়িয়ে স্বাবলম্বী করে তুলতে তাকে দেয়া হয় দুইটি ছাগল। ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়তে বগুড়া সদরের তেলিহারা শেখেরকোলা গ্রামের সঞ্জয়কে (৫৩) সহায়তা দিলে তিনি রিক্সা চালিয়ে এখন উপার্জন করছেন। সদরের নিশিন্দারা গ্রামের আফসার আলী এক দুর্ঘটনায় প্রতিবন্ধী হয়ে ভিক্ষা করতেন। ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়তে অনুদানে তিনি মুদি দোকান দিয়ে এখন স্বাবলম্বী। এমনি করে বগুড়া অঞ্চলে ভিক্ষুকরা স্বাবলম্বী হয়ে দারিদ্র্যকে দূর করে দিয়েছেন। অন্যান্য কর্মসূচীতেও দরিদ্রতা দূর হয়ে এসডিজি অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছে বগুড়া।
×