ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

দশ বছর হওয়ার আগেই দেশের ৫ ভাগ শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ২৯ জুলাই ২০১৮

দশ বছর হওয়ার আগেই দেশের ৫ ভাগ শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে ধর্ষণ ও সহিংসতা। প্রতিদিনই এ ধরনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে বয়স ১০ বছর হওয়ার আগেই দেশের ৫ দশমিক ১৭ ভাগ শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ পেতে নারীর প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হওয়া জরুরী। একই সঙ্গে গণসচেতনতা ও বিদ্যমান আইনের বাস্তবায়নের বিকল্প নেই বলে মত বক্তাদের। শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফ্রেন্ডস এ্যাসোসিয়েশন (ডুফা) আয়োজিত ‘নারী-শিশুর প্রতি নির্যাতন এবং ধর্ষণ প্রতিরোধে নাগরিক সমাজ ও রাষ্ট্রের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে বিভিন্ন বক্তা এ অভিমত তুলে ধরেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডুফার সানজিদা খান রিপা, ব্যারিস্টার কামরুন মাহমুদ দিপা এবং মোঃ জাহিদুল কবীর টিটু। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, যারা ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত তাদের ওপর গবেষণা করে এই সামাজিক ব্যধি নির্মূলে ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক উল্লেখ করে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমাজকে নারী ও শিশুবান্ধব করতে হবে। মানুষের মধ্যে গণসচেতনতাও জরুরী বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, নারীরা স্ব স্ব ক্ষেত্রে দক্ষতা দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে। নারীদের হেয় করে পিছিয়ে রাখা যাবে না। নারীনেত্রী খুশী কবীর বলেন, পুরুষ মানেই নারীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও কর্তৃত্ববান এবং নারী মানেই বিনয়ী এ রকম ভুল ধারণা নিয়ে এই সমাজে সবাই বড় হয়। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে পরিবার থেকেই কাজ শুরু করতে হবে। সমাজের বিভিন্ন সেক্টরে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর কথা বলেন এই নারীনেত্রী। এতে নারীর প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হবে বলেও মনে করেন তিনি। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণ কমাতে হলে সব পর্যায়ে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি পারিবারিক সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সোশ্যাল মিডিয়ার নেতিবাচক দিক নিয়ন্ত্রণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। অন্যান্য বক্তা বলেন, সাম্প্রতিক ধর্ষণ ও নারী-শিশুর প্রতি সহিংসতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। সেমিনারে সম্প্রতি নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণের একটি তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, বয়স ১০ বছর হওয়ার আগেই দেশে ৫ দশমিক ১৭ ভাগ শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। ২০১৪ এর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত সারাদেশে ১৭ হাজার ৩৮৯ নারী ও শিশু ধর্ষণের মামলা নথিভুক্ত হয়। যার মধ্যে ১৩ হাজার ৮৬১ন ভুক্তভোগী নারী ও ৩ হাজার ৫২৮ শিশু। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে দেশে ১৮৭ নারী ধর্ষণ, ২৯ যৌন হয়রানি ও ১৯ ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উইমেন এ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের চেয়ারম্যান ড. সানজিদা আক্তার বলেন, আমাদের সমাজের অনেক জায়গায় বৈষম্য খুব বেশি। নারীর প্রতি এই বৈষম্য দূর করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। ডুফা সভাপতি এ কে এম এনায়েত হোসেনের সভাপতিত্বে এ সময় মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন অতিরিক্ত কর কমিশনার অরুণ কুমার বিশ্বাস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিদ্দীকা আক্তার লাকী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক শহিদুল ইসলাম, আইনজীবী ব্যারিস্টার আফরোজা, ব্যারিস্টার শফিকুল ইসলাম, ঢাবি শিক্ষক ড. মনিনুর রশীদ, ধীমান রয়, লুনা খান, জিয়াউল কবীর সুমন প্রমুখ। সেমিনারে ডুফা সম্পাদক ড. নেয়ামুল ইসলামসহ অন্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
×