ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে দীর্ঘস্থায়ী সরকার খুবই প্রয়োজন

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৩ এপ্রিল ২০১৮

উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে দীর্ঘস্থায়ী সরকার খুবই প্রয়োজন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে দেশে একটি দীর্ঘস্থায়ী সরকার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা, অর্থমন্ত্রীর দূরদর্শী ও বিচক্ষণ পরিকল্পনা এবং আন্তরিক প্রয়াস অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সুদৃঢ় করেছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ করেছে। বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তাই সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। অন্যদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন এটা নির্বাচনের বছর, তাই আগামী বাজেটে পুরনো যেসব উদ্যোগ রয়েছে সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে সরকার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। কর ও ভ্যাট ব্যবস্থাপনায় বড় কোন পরিবর্তন আনা হচ্ছে না। মানুষের কষ্ট লাঘবে রাস্তা মেরামত ও সংস্কারে গুরুত্ব দেয়ার কথা জানান তিনি। এছাড়া করদাতাদের জন্য কর দেয়ার সঠিক পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে বলে জানান, এনবিআর চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। বৃহস্পতিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট উপলক্ষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও এফবিসিসিআইয়ের যৌথ পরামর্শক কমিটির ৩৯তম সভায় বক্তব্যে তারা এসব কথা বলেন। সভায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী মোঃ আমিনুল ইসলাম, এনবিআরের চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ, মীর নাসির হোসেন, এ কে আজাদ, সাবেক প্রথম সহসভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সিনিয়র সহসভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমসহ অন্য সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন তার বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে করসংক্রান্ত বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন। তিনি কর্পোরেট কর, ব্যক্তি-শ্রেণীর করদাতার করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো, বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো, ব্যাংক খাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি নিশ্চিত করা, ব্যবসায়ীদের হয়রানি কমানো, এফবিসিসিআইয়ের ভবন নির্মাণে সরকারের সহায়তাসহ বিভিন্ন দাবি তুলে করেন। এফবিসিসিআই সভাপতি অর্থমন্ত্রীরও ভূয়সী প্রশংসা করেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা তাদের বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন। সব মিলিয়ে প্রায় ৬০ জন বক্তা বক্তব্য দেন। সবশেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কিছু কিছু প্রস্তাব নিজে বিবেচনা করবেন বলে আশ্বাস দেন। সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, এ বছর রফতানি বাড়াতে উৎসাহ দেয়া হবে। নতুন নতুন পণ্যে বন্ডের লাইসেন্স দেয়া হবে। বন্ড কার্যালয়ে হয়রানি ও ভোগান্তি দূর করার উদ্যোগ নেয়া হবে। তিনি বিভিন্ন পণ্যে এখন সম্পূরক শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আছে, তা থাকবে বলে জানান। এফবিসিসিআই সভাপতির বক্তব্য ও বাজেট প্রস্তাবনা ॥ দেশে একটি স্থায়ী সরকারের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, জাপানে একটি দল ৪৫ বছর ক্ষমতায় ছিল, লি কুয়ান ইউ সিঙ্গাপুরকে পাল্টে দিয়েছেন। এটা আপনাদের বিবেচনার জন্য উত্থাপন করলাম। এ সময় তিনি মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই যে, অগ্রযাত্রা এটা ধরে রাখতে একটি দীর্ঘ স্থায়ী সরকার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ করেছে। চলতি অর্থবছরে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে চলেছে। চলতি অর্থবছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। অন্যদিকে দেশে মাথাপিছু জাতীয় আয় ১৬১০ ডলার থেকে বেড়ে ১৭৫২ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। সে হিসাবে এক বছরেই মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১৪২ মার্কিন ডলার। এই অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। এফবিসিসিআই মনে করে, সরকারের ২০২১ সালের ভিশন বাস্তবায়ন, ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন এবং ২০৪১ সালের উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে সরকার এবং বেসরকারী খাত পারস্পারিক সহযোগিতার ভিত্তিতে একসঙ্গে কাজ করে যাবে। তিনি বলেন, আগামী ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৪ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ বাজেটের প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৬ দশমিক ০৯ শতাংশ। বর্তমানে জাতীয় অর্থনীতি একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়ালেও বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে আমাদের সামনে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশকে আরও জোরদার করতে হবে। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানকে দৃঢ় করতে ব্যবসায়িক খরচ (কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস) কমিয়ে আনা খুবই জরুরী। তিনি বলেন, দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিনিয়োগ সুরক্ষা, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, ব্যাংকের সুদের হার হ্রাস, পরিবহন খরচ হ্রাস, বিদ্যুত ও জ্বালানিসহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দিতে হবে।
×