ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সৈয়দ হকের তুলির আঁচড়ে চিত্রের দিব্যরথ

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ২৪ মার্চ ২০১৮

সৈয়দ হকের তুলির আঁচড়ে চিত্রের  দিব্যরথ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কলমের ব্যবহারে তিনি দারুণ সচল। কবিতার পঙ্ক্তিমালায় অনন্য তাঁর লেখনী। একইভাবে গল্প-উপন্যাস অথবা কাব্যনাটকে মন্ত্রমুগ্ধ করেছেন সাহিত্যপ্রেমীদের। সাহিত্যের সীমা পেরিয়ে এবার তিনি আলো ছড়ালেন শিল্পের ভুবনে। রং-তুলির আঁচড়ে রাঙালেন ক্যানভাস। কথাশিল্পী কিংবা কবির পরিচয় ছাপিয়ে চিত্রকরের পরিচয়েও স্বমহিমায় হাজির হলেন সব্যসাচী সৈয়দ শামসুল হক। রং-রেখা আর বিন্যাসের সমন্বয়ে মূর্ত ও বিমূর্ত রীতির প্রকাশে সৃজন করেছেন চিত্রগুচ্ছ। শৌখিন চিত্রশিল্পীর আঁকা ছবিগুলোও কেড়ে নেয় শিল্পরসিকের নজর। তেমন কিছু চিত্রকর্ম নিয়ে শুরু হলো প্রদর্শনী। শুক্রবার থেকে চিত্রের দিব্যরথ শীর্ষক এ প্রদর্শনীর সূচনা হয় রাজধানীর কাওরানবাজারের ডেইলি স্টার-বেঙ্গল আর্টস প্রিসিঙ্কটে। ছুটির দিনের সন্ধ্যায় প্রদর্শনীর অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী হাশেম খান। উদ্বোধনী আয়োজনে বক্তব্য রাখেন প্রয়াত কবির সহধর্মিণী কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের। অতিথি সারিতে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম ও কবিপুত্র সৈয়দ হক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। হাশেম খান বলেন, এই প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে সৈয়দ শামসুল হককে নতুনভাবে আবিষ্কার করা সম্ভব হলো। তিনি যে ছবি আঁকেন, তা আমরা আগে থেকেই জানতাম। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের একটি চিত্রশিবিরে আমরা একসঙ্গে অংশ নিয়েছিলাম। সেখানে তিনি আমাদের সঙ্গে সমানতালে ছবি এঁকেছেন। আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে লিখছেন, ছবি আঁকার ক্ষেত্রেও তিনি এমনই ছিলেন। তিনি চার হাতে লিখেছেন। একেক সময় তিনি একেক ধরনের কাজ করতেন। পরিবারের সদস্য হিসেবেও আমরা তাকে পুরোপুরি চিনতে পারিনি। আমরাও তাঁকে যেন নতুন করে চিনলাম। তিনি কোন পেশাদার আঁকিয়ে ছিলেন না। দিনি অকস্মাৎ চলে যাবার পর স্যুটকেসে বন্দী অবস্থায় মেলে তাঁর আঁকা ছবি। সৈয়দ শামসুল হকের চিত্রকর্ম প্রাণময়, সজীব ও নানা ভাবনায় আলোড়ন দেখা যায়। এই সৃষ্টিতে ধরা দিয়েছে কখনও প্রতীকময় ইশারায় সময়ের সঙ্কট, জীবনযুদ্ধ, কখনও আনন্দের ঔজ্জ্বলতায় জীবনের প্রাণদায়ী ঐশ্বর্য। এসব চিত্র যেন তার সৃষ্টির বহুবিচিত্র পাশাপাশি তার যাপনের সঙ্গেও দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দেয়। কবিতার মতোই সৈয়দ শামসুল হকের চিত্রকর্ম ছন্দময়। ‘জ্যোৎস্নায় দম্পতি’ নামে ছবিতে হলদে আভার চাঁদের নিচে প্রিয়তমের বুকে প্রিয়তমার আলিঙ্গন হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায়। ‘ছোটবেলার স্মৃতি’ শিরোনামের ছবিতে বিমূর্ত ধারায় উদ্ভাসিত হয়েছে ছেলেবেলায় হারিয়ে যাওয়া গল্প। প্রদর্শনীতে ঠাঁই পাওয়া বেশিরভাগ চিত্রকর্মই শিরোনামহীন ও বিমূর্ত রীতিতে চিত্রিত। রয়েছে প্রচুর রঙের ছোঁয়া। ক্যানভাসে তেল, জল ও এ্যাক্রেলিকের পাশাপাশি আছে কলমের সৃজিত স্কেচ। সব মিলিয়ে ৪৯টি চিত্রকর্ম ও দুটি ভাস্কর্য ঠাঁই পেয়েছে প্রদর্শনীতে। চিত্রকর্মের পাশাপাশি কথাশিল্পীর নিজ হাতে নির্মিত ভাস্কর্যও স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে। সৈয়দ হকের জীবনের শেষ সময়ে হাসপাতালে লেখা কবিতাও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে প্রদর্শনীতে। রয়েছে কবির স্বরচিত কবিতা আবৃত্তির ভিডিও। কানে হেডফোন দিয়ে দর্শনার্থীরা শুনে ফেলতে পারেন সৈয়দ হকের ভরাট কণ্ঠস্বরের উচ্চারণ। এছাড়াও সৈয়দ হকের অপ্রকাশিত ডায়েরি থেকে সংগৃহীত অনূদিত কবিতাও রয়েছে প্রদর্শনীতে। রয়েছে কবির ডায়েরিও। সবার জন্য উন্মুক্ত প্রদর্শনীটি চলবে আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত। প্রতিদিন দুপুর বারোটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে । চিত্রকে সহপাঠীদের প্রদর্শনী ‘মঙ্গলযাত্রা’ ॥ তারা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সাবেক শিক্ষার্থী। চারুশিক্ষায় দীক্ষা নিয়েছেন দীর্ঘ ছয় বছর। ১৯৮৬-১৯৮৭ ব্যাচের এই চারুশিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধায়নেই ১৯৮৯ সালে প্রথমবারের মতো বের হয়েছিল মঙ্গল শোভাযাত্রা। সেই শিল্পীরা আবার এক হলেন ছবি আঁকার সূত্র ধরে। তাঁদের চিত্রিত ছবি নিয়ে ধানমন্ডি গ্যালারি চিত্রকে শুরু হলো ‘মঙ্গলযাত্রা’ শীর্ষক প্রদর্শনী। শুক্রবার সন্ধ্যায় চিত্রকে (বাড়ি ৪, সড়ক ৬, ধানমন্ডি) এ যৌথ চিত্র প্রদর্শনীর করেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী অধ্যাপক রফিকুন নবী। বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যাপক বুলবন ওসমান। সভাপতিত্ব করেন চিত্র সমালোচক অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চিত্রকের নির্বাহী পরিচালক চিত্রশিল্পী মোঃ মনিরুজ্জামান। প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া শিল্পীরা হলেন আজাদ কালাম, আসমিদা জাহিদ মনি, অনিতা ইসলাম, বাবুল আহমেদ খান, বানু রোকসানা আক্তার, দেওয়ান মিজান, ফরিদুল কাদের খান, ফয়জুল কবির, ফিরোজা আক্তার সিদ্দিকী, গোপাল চন্দ্র পাল, হেলিমুল ইসলাম খোকন, কামরুল আহসান খান, কাকলি সরকার দোলা, মাহবুবুর রহমান, মহাতারমা ইয়াসমিন মুক্তি, মতিয়া বানু শুকু, মোঃ আলপ্তোগিন, আনোয়ার হুসেইন চুন্নু, হানিফ তালুকদার, খুরশিদ আলম অলোক, মাহবুবুল ইসলাম বাবু, মাসুম আহমেদ, রফিকুল ইসলাম হিটলু, শফিকুল ইসলাম লিটন, শাহাদাত হোসেন, মিনহাজ উদ্দিন কর্নেল, মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, মনির উদ্দিন মোঃ হেলালি, নাদেজদা ফারহানা কাকলি, নাজিম উদ্দিন, নিয়ামুল কাইয়ুম লোটাস, রেজাউল হক লিটন, রোকসানা সাইদা পপি, এস এম ফখরুজ্জামান হেলাল, সালেহ মাহমুদ, শহীদ আহমেদ মিঠু, সাখাওয়াত হোসেন, সুশান্ত দাস, স্বরূপ বসাক ও তৈয়বা বেগম লিপি। প্রদর্শনীতে বিভিন্ন মাধ্যমে আঁকা ৭৫টি চিত্রকর্ম ও ৯টি ভাস্কর্য স্থান পেয়েছে। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলবে প্রদর্শনী। প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের স্বাধীনতা উৎসব ॥ প্রতিষ্ঠার বাইশ বছর পূরণ করেছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। দ্বাবিংশতিতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে আগারগাঁওয়ের জাদুঘর প্রাঙ্গণে চলছে সপ্তাহব্যাপী উৎসব । শুক্রবার উৎসবের তীয় দিনে জাদুঘরের উন্মুক্ত মঞ্চে ‘গুলমত এন্ড গং’ পথনাটক পরিবেশন করে সাত্বিক নাট্য সম্প্রদায়। সগির মোস্তফার রচনায় নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন আনিসুর রহমান সেলিম। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয় শুভাঢ্য উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা উদ্যান সরকারী মহাবিদ্যালয় ও তেজগাঁও কলেজ। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে মুক্তধারা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র। সপ্তাহব্যাপী এ উৎসব উপলক্ষে চলছে মুক্তিযুদ্ধের বইমেলা। আগামী ২৮ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত এ মেলা চলবে।
×