ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মোরসালিন মিজান

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১০ নভেম্বর ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

বিরাট শিক্ষিত ঢাকার মানুষ। জ্ঞান বুদ্ধিতে যথেষ্ট এগিয়ে। এর পরও আইন কানুন মানার প্রবণতা কারও মাঝেই তেমন দেখা যায় না। যে যার মতো করে চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজধানী শহরে কোন সিস্টেম দাঁড়াচ্ছে না। অজস্র উদাহরণ আছে। আজ ফার্মগেট এলাকার উদাহরণটি দেয়া যাক। ব্যস্ত এই এলাকায় একাধিক ওভারব্রিজ। ফার্মগেট মোড়ে অবস্থিত সবচেয়ে বড় ওভারব্রিজটি দীর্ঘকাল ধরে ব্যবহার করে আসছেন পথচারীরা। ওভারব্রিজের শতভাগ ব্যবহার দেখা যেত এখানে। অন্য ওভারব্রিজগুলোও ফাঁকা পড়ে ছিল না কোনদিন। এর মূল কারণ শক্ত কাঁটাতারের বেড়া। সড়ক বিভাজকের দুই পাশে কাঁটাতার টানা ছিল। উপরে কাঁটাতার। নিচেও। মাঝখানে গাছ। দুষ্টু লোকদের পক্ষেও এতসব অতিক্রম করা সম্ভব হতো না। বাধ্য হয়ে তারা ওভারব্রিজ ব্যবহার করতেন। মহাব্যস্ত সড়ক হওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিতেন না অন্যরা। মূল ওভারব্রিজটির উপরে তাই মানুষের ভিড় লেগে থাকত সব সময়। অথচ এখন যে ছবি তা দেখে হতবাক হয়ে যেতে হয়। অজস্র যানবাহনের ফাঁক দিয়ে বেদম দৌড়ে রাস্তা পার হচ্ছে কা-জ্ঞানহীন মানুষ। ফুটপাথে শুয়ে বসে কাটানো নেশাগ্রস্ত লোকেরা এই অপকর্মের সূচনা করেছিল। তারপর নেমে যান মহাব্যস্ত ভদ্দরলোকরা। ঘাড়ের কাছে পা তুলে রাস্তা পাড় হতে দেখা যায় তাদের। শার্ট ছিঁড়ে যায়। গায়ে আঁচড় পড়ে। তবুও দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে রাস্তা পাড় হয়ে যান। নারীরা পর্যন্ত পিছিয়ে নেই। শাড়ির আঁচল আটকে যাচ্ছে কারও। কারওবা ওড়না। তবুও ওভারব্রিজ ব্যবহার করছেন না। হঠাৎ আক্রমণে সড়ক বিভাজকের সমস্ত কাঁটাতার উধাও। ফার্মগেট থেকে কাওরান বাজার পর্যন্ত যে রাস্তা, এর পুরোটাজুড়ে পথচারীদের এলোমেলো ছোটাছুটি। এই সার্কাস দেখে মনে হয় না, কোন কর্তৃপক্ষ আছে। এভাবে চলতে থাকলে যে কোন দিন বড় দুর্ঘটনা ঘটবে। ঘটুক। ঘটলে পরে দেখবেন দায়িত্বশীলরা। কেন? কী আসলে ঘটেছে, যে কারণে এত বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে ফার্মগেট এলাকার রাস্তায়? জবাব দেয়ার মতো আছেন কেউ? উৎসব অনুষ্ঠানের কথা বলা যাক। এখন হেমন্ত। নরম রোদ। শীত শীত বিকেল। আর রাতে যেটুকু ঠা-া, সহজেই মানিয়ে নেয়া যায়। সময়টি তাই উৎসবের জন্য খুব উপযোগী। প্রতি বছরের মতো এবারও শুরু হয়ে গেছে বহুবিধ আচার অনুষ্ঠান। বৃহস্পতিবার আর্মি স্টেডিয়ামে তিন দিনব্যাপী ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্টের উদ্বোধন করা হয়। স্কয়ার গ্রুপের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে সান কমিউনিকেশন। দুই বছর আগে এই উৎসবের সূচনা হয়েছিল। এবার তৃতীয় আসর। দেশী-বিদেশী মোট ১৪০ জন শিল্পীর পরিবেশনা উপভোগ করার সুযোগ পাচ্ছেন শ্রোতা। দেশীয় শিল্পীদের তালিকায় রয়েছেন আরিফ দেওয়ান, শাহজাহান মুন্সি, ফকির শাহবুদ্দিন, শাহনাজ বেলি, শাহ আলম সরকার, আলেয়া বেগম প্রমুখ। সেইসঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন স্বনামধন্য শিল্পীরা। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ইরান, ব্রাজিল, মালি, তিব্বতসহ কয়েকটি দেশের শিল্পীরা তাদের নিজ দেশ ও ভাষার লোকসঙ্গীত শোনাবেন। ভারতের শিল্পী ও দলগুলোর মধ্যে থাকছে পাপন, নুরান সিস্টার্স, বাসুদেব দাস বাউল, মালির গ্রেমি বিজয়ী ব্যান্ড টিনারিউয়েন। পাকিস্তানের মিকাল হাসান ব্যান্ড। নেপালের ব্যান্ড কুটুম্বা। তিব্বতের ফোকশিল্পী তেনজিন চোয়েগাল। ইরানের রাস্তাক। ব্রাজিলের মুরিসীয় টিজুম্বা। উৎসব মঞ্চে ফিউশন হবে। চলবে নিরীক্ষা। সব মিলিয়ে দারুণ একটা সময়। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয়ে চলবে রাত দেড়টা পর্যন্ত। এর আগে মঙ্গলবার ঢাকায় শেষ হয়েছে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এ্যাসোসিয়েশনের ৬৩তম (সিপিসি-২০১৭) সম্মেলন। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সংসদ সদস্যদের সংগঠনের ৬৩তম সম্মেলন গত ১ নবেম্বর শুরু হয়েছিল। ৫ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রী ও সিপিএ ভাইস প্যাট্রন শেখ হাসিনা এই সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। সিপিএ বাংলাদেশ ব্র্যাঞ্চ ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয় এই সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনের শেষ দিনে মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে (বিআইসিসি) সিপিএর সাধারণ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে নতুন চেয়ারপার্সন নির্বাচন করা হয়। সেইসঙ্গে বিভিন্ন কমিটি উত্থাপিত প্রস্তাব গৃহীত হয়। সাধারণ অধিবেশনের শেষ পর্যায়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি বিবৃতি গৃহীত হয়। বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা নির্যাতনের ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারকে দ্রুত এগিয়ে আসারও আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে। গত কয়েকদিন শহর ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে ৭ মার্চের ভাষণটি বাজানো হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ বাঙালীর শ্রেষ্ঠতম কবিতা। জাগরণের বিশুদ্ধ সঙ্গীত। কিন্তু যেখানে সেখানে যাচ্ছেতাইভাবে ভাষণটি ব্যবহার হওয়ার অভিযোগ পুরনো। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সুন্দর একটি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ বই বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। ওবায়দুল কাদের বলেন, ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণটির স্বীকৃতি দিয়েছে। আমরা এই ভাষণটি যত্রতত্র বাজাই। শুনি। আমি সবাইকে অনুরোধ করব, এটি যেন আমরা সবখানে না বাজাই। যে ভাষণ বিশ্ব স্বীকৃতি পেয়েছে, আমরা এটিকে সম্মানের সঙ্গে ব্যবহার করব। যত্রতত্র এর ব্যবহার করা উচিত নয়।
×