ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সকল জেলা বারে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের প্রতিবাদ কর্মসূচী

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৯ অক্টোবর ২০১৭

সকল জেলা বারে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের প্রতিবাদ কর্মসূচী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে সাক্ষাতে বাধা দেয়ার প্রতিবাদে রবিবার থেকে দেশের সকল জেলা বারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন শুরু করেছেন সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির বিএনপিপন্থী আইনজীবী বৃন্দ। আর সমিতির আওয়ামীপন্থী আইনজীবীবৃন্দ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন প্রধান বিচারপতিকে রাজনৈতিক ফাঁদে ফেলে এবং রাজনৈতিক বক্তব্যে জড়িয়ে ফায়দা লোটার জন্য একটি রাজনৈতিক দল চেষ্টা করছে। অন্যদিকে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া ও নুরুল আমিনের আপীলের শুনানিতে রাষ্ট্রীয় আইনজীবী নিয়োগ দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। চট্টগ্রাম বন্দরে তরল কোকেন আটকের ঘটনায় দায়ের করা মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। পাশাপাশি এই মামলার কার্যক্রম কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিনিয়র আইনবিদ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে আজকের সঙ্কট হলো সংবিধান অনুযায়ী বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকবে কি থাকবে না, সেটির। তিনি বলেন, একটি রায়কে কেন্দ্র করে; যেহেতু এ রায় সরকার পছন্দ করেনি। আজকে সেই রায়ের প্রতিক্রিয়া হিসেবে সরকার এবং সরকারী দলের নেতৃবৃন্দরা যে আচরণ করেছেন তা নজিরবিহীন। কোন সভ্য দেশে, কোন গণতান্ত্রিক দেশে, কোনদিন শুনিনি প্রধান বিচারপতিকে গৃহবন্দী করেছেন। এখনও তিনি সম্পূর্ণভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছেন। সরকারের অনুমোদন ছাড়া কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। এতে বোঝা যায় তিনি শুধু নজরবন্দী না; তিনি তাদের অধীনে, তাদের কাস্টডিতে, সরকারের হেফাজতে এখন আছেন। আমাদের আইনজীবী নেতৃবৃন্দরা তার সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। দেশের সাংবাদিকরা দেখা করতে পারেন না। তার আত্মীয় স্বজনরা এখনও তার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। সরকার এগুলো সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে শুধু একটি কারণে। কারণ, এ সরকার আমাদের বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। সুপ্রীমকোর্ট বারের সভাপতি এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র আইনজীবী এ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন প্রমুখ। শনিবার সুপ্রীমকার্ট আইনজীবী সমিতির এক সংবাদ সম্মেলনে এ দেশের সকল বারে ঘোষণা দেয়া হয়। কর্মসূচ অনুযায়ী, রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতিদিন দেশের সকল জেলা বারে আইনজীবীরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা পালন করবেন। আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের সংবাদ সম্মেলন ॥ সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি মোঃ অজিউল্লাহ বলেন, প্রধান বিচারপতি খোলামেলা চলাফেরা ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সত্ত্বেও বারের সভাপতি ও সম্পাদক তার (প্রধান বিচারপতির)ছুটিকে বিতর্কিত, প্রশ্নবিদ্ধ ও রাজনৈতিক আলোচনার বস্তুতে পরিণত করার লক্ষ্যে বার বার তারা বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন। আপনারা জানেন, রাষ্ট্রের ভিভিআইপি ব্যক্তি হিসেবে প্রধান বিচারপতির জীবন যাপন ও কার্য পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট একটি প্রটেকশন ও প্রটোকল রয়েছে। উক্ত প্রটেকশন ও প্রটোকল ভঙ্গ করে তার অনুমতি ব্যতীত কোন ব্যক্তি তার সঙ্গে সাক্ষাত বা দেখা করতে পারেন না। সুপ্রীমকোর্ট বার এ্যাসোসিয়েশনের অনুরূপ লিখিত আবেদন ও প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে অনুমতি ব্যতীত দায়সারা গোছের সাক্ষাতের চেষ্টা কোনভাবেই কাম্য নয়। সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমাউন, কুমার দেবুলসহ অন্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। উকিল নিয়োগের নির্দেশ ॥ ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া ও নুরুল আমিনের আপীলের শুনানিতে রাষ্ট্রীয় আইনজীবী নিয়োগ দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সাতদিনের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর কার্যালয়কে এ নিয়োগ দিতে বলা হয়েছে। রবিবার হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। এর আগে ২০১৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলায় ৫১৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। পূর্ণাঙ্গ রায়ে চোরাচালান মামলার রায় ২৬০ পৃষ্ঠা এবং অস্ত্র আটক মামলার রায় ২৫৪ পৃষ্ঠা। একই বছরের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক এস এম মজিবুর রহমান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। পরে এই মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপীল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য হাইকোর্টে আসে। চট্টগ্রামে কোকেন আটক মামলার কার্যক্রম স্থগিত ॥ চট্টগ্রাম বন্দরে তরল কোকেন আটকের ঘটনায় দায়ের করা মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। পাশাপাশি এই মামলার কার্যক্রম কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত। রবিবার বিচারপতি মোঃ মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি এ এন এম বসির উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেয়। চট্টগ্রাম বন্দরে তরল কোকেন আটকের ঘটনায় খানজাহান আলী গ্রুপের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা বাতিল চেয়ে আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত এই আদেশ দেয়। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। রাষ্ট্রপক্ষে বিরোধিতা করেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম মনিরুজ্জামান কবির।
×