ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটসৈয়দপুর স্বাদুপানিউপকেন্দ্রের বিজ্ঞানীদেরসাফল্য

টেংরার পর গুতুম রেণু উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

টেংরার পর গুতুম রেণু উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে সৈয়দপুরে স্বাদুপানি উপকেন্দ্রে টেংরার রেণুপোনা উৎপাদন, প্রযুক্তি ও কলাকৌশল উদ্ভাবনের পর এবার বিলুপ্ত প্রায় গুতুম মাছের রেণু পোনা উৎপাদনে সফলতা পাওয়া গেছে। অচিরেই আনুষ্ঠানিকভাবে এই সফলতার ঘোষণা দেয়া হবে। প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে এই সফলতা অর্জন করতে যাচ্ছে। এছাড়া ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে বিবেচিত বউ/রানী মাছ, খলিসা, চ্যাং, শোল, টাকিসহ অন্যান্য প্রায় ৬৫ প্রজাতির বিলুপ্ত মাছ নিয়ে গবেষণা অব্যাহত রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। সৈয়দপুর স্বাদুপানি উপকেন্দ্রের প্রধান ড. খোন্দকার রশীদুল হাসান বলেন, অনেক সীমাবদ্ধতা থাকলেও কেন্দ্রে বিলুপ্ত ৬৫ প্রজাতির মাছ নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চলছে। টেংরার পর এবার গুতুম মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদনেও সফলতা এসেছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি বন্যায় স্বাদুপানি উপকেন্দ্রের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং পুকুরগুলোর মাছ এলোমেলো হয়ে গেছে। ক্ষতি কাটিয়ে সব গুছিয়ে নিয়ে গুতুম মাছের পোনা উৎপাদনের প্রযুক্তি কলাকৌশল আগামী বছরেই ইনস্টিটিউটের কাছে হস্তান্তরের আশা করছেন তিনি। গুতুম মাছ আমাদের দেশে চলনবিল, ছোট যমুনা নদী, হালতি বিল, ময়মনসিংহ, সিলেট, দিনাজপুর এবং রংপুরের ছোট ছোট নদী থেকে সামান্য পরিমাণে মিলছে। মাছটি বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ হিসেবে বিবেচিত না হলেও নদী, খাল-বিল, জলাশয়ে আর আগের মতো মিলছে না। মাছটির দেহ পার্শ্বীয়ভাবে সামান্য চাপা। আঁশ ছোট ও সুস্পষ্ট এবং মিউকাসে আবৃত। গুচ্ছ পাখনা ও পৃষ্ঠ পাখনায় রেখার মতো দাগ দেখতে। দেহ সাধারণত গাঢ় হলুদ বর্ণের। সাধারণত গুতুম, গুটিয়া, গোরকুন, পোয়া, পুইয়া নামে পরিচিত হলেও এই জনপদে গোতরা বা পুয়া মাছ নামে বেশি পরিচিত। মাছটির সর্বোচ্চ ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্য হয়ে থাকে। গুতুম মাছ পরিণত পুরুষদের দীর্ঘ বক্ষ পাখনার ৭ম ও ৮ম পাখনা রশ্মি একীভূত হয়ে ল্যামিনা সার্কুলারিস নামে গঠন দেখতে পাওয়া যায় যা স্ত্রী মাছে অনুপস্থিত। বক্ষ পাখনা স্ত্রীদের চেয়ে পুরুষদের অধিক হয়ে থাকে একই বয়সের পরিণত স্ত্রীরা পুরুষের চেয়ে স্ফীত, সামান্য লম্বা হয়ে থাকে। যাদের উদরের সম্মুখে দাগ দেখতে পাওয়া যায়। এরা প্রকৃতিতে একটি নির্দিষ্ট ঋতুতে প্রজনন করে থাকে। এদের প্রজননকাল এপ্রিল-সেপ্টেম্বর মাসে চিহ্নিত করা হয়েছে। স্বাদুপানি উপকেন্দ্রের একদল বিজ্ঞানী গবেষণা করে বিলুপ্ত প্রজাতির টেংরা মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন। এই সাফল্যের জন্য স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৭ প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক রৌপ্যপদক অর্জন করে। পুরস্কার লাভের পর উৎসাহ আর উদ্দীপনা নিয়ে কেন্দ্রের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. খোন্দকার রশীদুল হাসান, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালিহা হোসেন ও শওকত আহম্মেদ গুতুম মাছসহ বিলুপ্তপ্রায় ৬৫ প্রজাতির মাছ নিয়ে গবেষণার কাজ জোরেশোরে শুরু করেন। বর্তমানে এ কেন্দ্রে তিন কর্মকর্তাসহ মোট ২০ কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। বৈজ্ঞানিকদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও কর্মচারীদের আন্তরিকতায় একের পর এক বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ গবেষণা করে সুফল বয়ে আনায় সকলের দৃষ্টিতে এসেছে স্বাদুপানি উপকেন্দ্রটি।
×