ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিমান আরও ৮ হজ ফ্লাইটের অনুমতি পেল

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৭ আগস্ট ২০১৭

বিমান আরও ৮ হজ ফ্লাইটের অনুমতি পেল

আজাদ সুলায়মান ॥ চরম অনিশ্চয়তায় পড়া এক হাজার হজযাত্রী বহনের জন্য আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত আরও ৮টি হজ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন পেয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এতে বিমানের সব যাত্রী বহন করা নিশ্চিত হয়েছে। শনিবার বিকেলে সৌদি আরব থেকে শেষ ফ্লাইটের নতুন সময়সীমা আরও দুদিন বাড়ানোর ফলে স্বস্তি নেমে আসে বিমানে। যদিও শনিবার আরও একটি হজ ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। বিমান নিজস্ব কোটার ৬৩ হাজার ৫০০ যাত্রী নিয়ে আর কোন দুশ্চিন্তা না থাকলেও প্রতারণার কারণে আটকে পড়া চার শতাধিক হজযাত্রী নিয়ে বিপাকে পড়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজক্যাম্প। শনিবার দিনভর ক্যাম্পে আটকে পড়া শতাধিক হজযাত্রী বিক্ষোভে পাশাপাশি কান্নাকাটি করেছে। এদের ভাগ্যে কি ঘটবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে সোমবার শেষ ফ্লাইট পর্যন্ত। সর্র্বশেষ শনিবার রাত পর্যন্ত বিমান ৬১ হাজার হজযাত্রী বহন ঢাকা থেকে জেদ্দায় পাঠাতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে শনিবার বিকেল ৪টার বাতিলকৃত (বিজি১৫১১) ফ্লাইটটি আজ রবিবার দুপুর একটায় ঢাকা ছেড়ে যাবে। বাদ বাকি এক হাজার যাত্রী আজ ও আগামীকালের অতিরিক্ত ফ্লাইটে বহন করার সব প্রস্তুতি নিয়েছে বিমান। জানা গেছে, বিমানের সব যাত্রী বহন নিয়ে সঙ্কট কেটে গেলেও সৌদিয়ার ফ্লাইট ও যাত্রী নিয়ে কিছুটা জটিলতা রয়েছে। অতিরিক্ত শ্লটের কোন সমস্যা না হলেও উড়োজাহাজের অভাবে শেষের দিকে হাজার খানেক হজযাত্রী নিয়ে বিপাকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছ্।ে অবশ্য বিমানের পরিচালক আলী আহসান বাবু জানিয়েছেন, অতিরিক্ত দুদিনের মেয়াদ বাড়ানোর ফলে এখন যে ক্যাপাসিটি হয়েছেÑ তাতে সৌদিয়ার বাকি পড়া হজযাত্রীও বিমানবহন করতে প্রস্তুত। হাজিদের স্বার্থে সব ধরনের প্রস্তুতি ও কৌশল নিয়েছে বিমান। উল্লেখ্য, গতকাল শনিবার ছিল বিমানের শেষ ফ্লাইট পরিচালনার দিন। এ সময়ের মধ্যেই নিজস্ব কোটার ৬৩ হাজার ৫০০ হজযাত্রী বহনের চূড়ান্ত সময়সীমা ছিল বিমান। কিন্তু শেষদিনেও বিমানের হাজারখানেক যাত্রী বাকি থাকায় দিনভর চরম অনিশ্চতা, উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় কাটাতে দেখা গেছে বিমানের শীর্ষ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদ ও পরিচালক আলী আহসান বাবুসহ অন্যদের। বিমানকে আরও দুদিন অতিরিক্ত সময় দেয়ার সৌদি আশ্বাস এতদিন মৌখিকভাবে দেয়া হলেও শনিবার বিকেল পর্যন্ত অফিসিয়াল আদেশ না আসায় চরম দুশ্চিন্তায় পড়ে শীর্ষ কর্তারা। তাদের ছুটির দিনেও সার্বক্ষণিক ঢাকা থেকে জেদ্দায় সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করতে দেখা গেছে। এ সম্পর্কে একজন কর্মকর্তা বলেন, দুুপুর পর্যন্ত জেদ্দা থেকে অফিসিয়াল আদেশ না আসায় বিমানের শীর্ষ পর্যায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় বিকেলের একটি ফ্লাইট বাতিল হওয়ার সংবাদে আশকোনা হজক্যাম্পে আটকে হজযাত্রীদের মাঝেও হতাশা নেমে আসে। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদ ও পরিচালক আলী আহসান বাবুকে নিজ অফিসে বসে সৌদি আরবে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখেন। তারা এ বিষয়ে বিমানমন্ত্রীকে অবহিত করেন যে করেই হোক সৌদি আরব থেকে ছাড়পত্র আদায় করতে সক্ষম হবেন। অবশেষে বিকেল ৫টার দিকে আসে সেই সুসংবাদ আসার পর স্বস্তি নেমে আসে। জানা গেছে, এবার হজ এজেন্সিগুলোর গাফিলতি ও অতি মুনাফার লোভের কারণেই একের পর এক হজ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। হজ ফ্লাইট শুরুর পর থেকে ভিসা জটিলতায় ও হজযাত্রীদের বাড়িভাড়া সংক্রান্ত কারণে প্রায় ২৪টি হজ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। তখন বাতিল ফ্লাইটের ধাক্কা সামলাতে বিমান বিকল্প পন্থা হিসেবে সৌদিয়া এয়ারলাইন্সকে কিছু অতিরিক্ত হজযাত্রী বহনের অনুরোধ জানায়। কিন্তু সৌদিয়া বিমানের কোন চিঠির জবাব পর্যন্ত দেয়নি। এ অবস্থায় বিমান নিজস্ব চ্যানেলে সৌদিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে অতিরিক্ত দুদিন ফ্লাইট চালানোর সুযোগ আদায় করে নেয়। এভাবেই ৬৩ হাজার ৫ শতাধিক হজযাত্রী বহনের মতো কঠিন দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয় বিমান। বিক্ষুব্ধ হজযাত্রীরা আশকোনা হজ ক্যাম্প পরিদর্শনের সময়ে দেখা যায়, পরিচালকের রুমের সামানে শতাধিক হজযাত্রী ইহরাম পরিহিত অবস্থায় বিক্ষোভ করতে। বেশ কয়েকটি এজেন্সির এসব যাত্রীরা সরকারের কাছে জোর আবেদন জানিয়েছে বিশেষ ব্যবস্থায় তাদের হজে পাঠানোর। এদের একজন মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তিনি তার বন্ধু সিরাজুল ইসলামসহ মোট ৬ লাখ টাকা দিয়েছেন ‘মদিনা এয়ার ইন্টারন্যাশনাল’র মালিক সাইফুল ইসলামের হাতে। ২০ আগস্টের মধ্যে তাদের ফ্লাইট দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১৯ তারিখের পর অফিস বন্ধ করে মদিনার মালিক পালিয়েছেন। তিনি এ প্রতারকের বিচার চেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বলেন, আমরা এ প্রতারকের শাস্তি চাই, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। প্রতারিত হজযাত্রীদের বিক্ষোভের সংবাদ পেয়ে হজক্যাম্পে ছুটে যান ধর্মবিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি বিএইচ হারুন। তিনি ধৈর্য ধরে বিক্ষোভরত হজযাত্রীদের সব অভিযোগ শুনেন এবং তাৎক্ষণিক ধর্মমন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে একটা জরুরী সমাধান বের করার প্রস্তাব রাখেন। এ সময় বিএইচ হারুন বিক্ষুব্ধ হজযাত্রীদের শেষ ফ্লাইট পর্যন্ত ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন। তবে তিনি প্রতারক এজেন্সির বিরুদ্ধে গতবারের মতো এবারও কঠিন ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন । জানতে চাইলে বিএইচ হারুন জনকণ্ঠকে বলেন, কত জন প্রতারণার শিকার হয়েছেন, কিংবা হজে যেতে পারছেন না তা এখনও নিশ্চিত নয়। শেষ ফ্লাইট যাওয়ার পর দেখা যাবে কারা কি কারণে বাদ পড়েছেন। তখনই দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে হজ অফিস জানিয়েছে, ভিসা করার জন্য ৯৩ হজযাত্রীর কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে অফিস বন্ধ করে পালিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক সাইফুল ইসলাম। এতদিন নয়ছয় বুঝিয়ে রাখলেও বিমানের শেষ হজ ফ্লাইটের দিন ৯৩ হজযাত্রী প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। তারা শনিবার দুপুরে হজক্যাম্প এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে। তাদের মিছিল শুরু হলে হজ অফিস কর্মকর্তাদের কাউকে দফতরে পাওয়া যায়নি। এ সময় আজারউদ্দিন নামের এক হজযাত্রী বলেন, আমরা চাই সরকার যেভাবেই হোক আমাদের হজে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিক। এছাড়া, আমাদের কিছু চাওয়ার নেই। ছদরউদ্দিন নামের আরেক হজযাত্রী বলেন, আমরা টাকা দিয়েছি, সরকারের নিয়ম মেনে নিবন্ধন করেছি। এখন কেন হজে যেতে পারব না? সরকার যেন দ্রুত আমাদের হজে যাওয়ার ব্যবস্থা করে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা দাবি জানাচ্ছি। হজ অফিস জানিয়েছে, ১২টি এজেন্সির কমপক্ষে সাড়ে ৪ শত হজযাত্রীর সৌদি আরব যাত্রা চরম অনিশ্চিতায় পড়েছে। এসব কোম্পানির মালিক ও কর্মকর্তারা অনেক আগেই গা ঢাকা দিয়েছে। অথচ এসব যাত্রীর প্রত্যেকেরই ভিসা হয়েছে। শুধু একটি টিকেটের অভাবে তারা আটকা পড়েছেন। জানা যায়, অভিযুক্ত এজেন্সিগুলো হচ্ছেÑ আলবালাদ, গ্লোব ট্যুর, সানজিদ ট্রাভেলস, সাজম ট্রাভেলস, সাইফ এয়ার, গালফ ট্রাভেলস, ইকো এয়ার, ইউনো রোড ওভারসিজ, মিশকাত ট্রাভেলস, ও মিকাত। হজ পরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, যেহেতু আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত বিমানের ফ্লাইট পরিচালনার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে, একটা সম্ভাবনা রয়েছে এদের টিকেটের ব্যবস্থা করার। এজেন্সি মালিকরা চাইলে আজকেই টিকেট নিতে পারেন। এ বিষয়ে হাব মহাসচিব শাহাদাত হোসেন তসলিম জানিয়েছেন, গত এক মাসে কোন কোন এজেন্সি কি ধরনের অপরাধ করেছে, কার কতটুকু গাফিলতি অবহেলা ছিল সবই খতিয়ে দেখা হবে। তবে বড় সুসংবাদ হচ্ছেÑ সব যাত্রীকেই বিমান বহন করার সক্ষমতা রাখে। এ বিষয়ে আজ রবিবার জরুরী সংবাদ সম্মেলন ডেকে সব জানানো হবে। বাংলাদেশ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি এ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স হজযাত্রী পরিবহন করছে। এবার হজ এজেন্সিগুলোর গাফিলতি ও অতি মুনাফার লোভের কারণেই একের পর এক হজ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। হজ ফ্লাইট শুরুর পর থেকে ভিসা জটিলতায় ও হজযাত্রীদের বাড়িভাড়া সংক্রান্ত কারণে প্রায় ২৫টি হজ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। নিয়ম অনুসারে, হজযাত্রীদের ফ্লাইটের আগেই সৌদি আরবে বাড়িভাড়া করে ভাড়ার রসিদ ও বিমানের টিকেট নিশ্চিত করে হজ অফিস থেকে ডিও লেটার নিতে হয়। সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া না করার কারণে অনেক হজযাত্রী ভিসা পেয়েও যেতে পারছেন না। এবার বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২১ হাজার হজযাত্রী এ পর্যন্ত সৌদি আরব পৌঁছেছেন। শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ৬১ হাজার ১শ’ এবং সৌদি এ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স ৬০ হাজার জন হজযাত্রী পরিবহন করেছে। এবার ২৬ হাজার ২৪৭ জন ভিসা পেয়েছেন। এ হিসেবে বাকি ৬ হাজার হজযাত্রী আজ ও কালকের মধ্যে সৌদিতে পাঠাবে এ দুটো এয়ারলাইন্স।
×