ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধান বিচারপতির ঔদ্ধত্য সীমা ছাড়িয়েছে ॥ আমু

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৫ আগস্ট ২০১৭

প্রধান বিচারপতির ঔদ্ধত্য সীমা ছাড়িয়েছে ॥ আমু

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, ‘প্রধান বিচারপতি হঠাৎ করেই সংসদ নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে মাঠে নেমেছেন। তিনি পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে যে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন, তা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। তাকে মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগ সরকার, শেখ হাসিনার সরকার কোন ঠুনকো দল নয়। কোন সামরিক জান্তার পকেট থেকে এই দলের সৃষ্টি হয়নি।’ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ আয়োজিত মহিলা সংসদ সদস্যদের অবজ্ঞার প্রতিবাদে আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি আরও বলেন, ‘আপনি যাদের খুশি করার জন্য এসব অবান্তর কথা বলছেন তারা আপনার বন্ধু নয়, শত্রু। তাদের চিহ্নিত করুন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই আমরা এ দেশ স্বাধীন করেছি। আর কোন সামরিক জান্তার পকেট থেকে আওয়ামী লীগের সৃষ্টি হয়নি। তাই অবিলম্বে আপনার পর্যবেক্ষণ প্রত্যাহার করতে হবে।’ প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে আমির হোসেন আমু বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণে দেশের বিরুদ্ধে যে কথা বলা হয়েছে, তা এক্সপাঞ্জ (প্রত্যাহার) করুন। নইলে দেশের মানুষ এগিয়ে আসবে। তিনি বলেন, ‘সংসদের বিরুদ্ধে কথা বলার আগে আপনার ভাবা উচিত ছিল, এই সংসদের মাধ্যমেই আপনার নিয়োগ। এই সংসদের রাষ্ট্রপতিই আপনাকে নিয়োগ দিয়েছেন। সেদিকে চিন্তা রেখে ভবিষ্যতে কথা বলবেন।’ শিল্পমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা পাকিস্তানপ্রেম দেখান। কারণ তিনি পাকিস্তানের দালাল। আমির হোসেন আমু বলেন, ‘অন্য বিচারপতিদের মনে রাখা দরকার, উনি (প্রধান বিচারপতি) যা চান, তা হলো ওই জুডিসিয়ারি, ওই বিচারকদের একমাত্র দেবতা হতে। তিনি যা বলবেন, সেটাই মানতে হবে। সব ক্ষমতা তার হাতে থাকবে, এর বাইরে কিছু থাকবে না। আজকে সেই ব্যবস্থা আমরা বিচার বিভাগে হতে দিতে পারি না। প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রের ক্ষমতা নিয়ে নিতে চান। এই সব ঔদ্ধত্য দেখানোর একটা সীমা আছে। আজকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার জন্য যারা মাঠে নেমেছে, আপনি ইতোমধ্যে নিশ্চয়ই তাদের চিনতে পেরেছেন।’ আমির হোসেন আমু বলেন, ‘আজকে অনেক দল, বিশেষ করে বিএনপি নেতারা শেখ হাসিনার বক্তব্যের সমালোচনা করছেন। তারা তো করবেনই। কারণ, তারা তো পাকিস্তানপ্রেমিক। বাংলাদেশে একটা কথা আছে, সব শিয়ালের এক রা।’ শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘ভুলে গেলে হবে না, আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। তিনি ক্ষমতায় আসার পর তাকে নানাভাবে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু তাকে কোনো কিছুই দমিয়ে রাখতে পারেনি। তিনি সবকিছুকে উপেক্ষা করে দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আজকে তার ওপর কথা বলার সাহস আপনাকে কে দিল? আপনি কী উদাহরণ দিয়া ভীতিপ্রদর্শন করছেন?’ আমির হোসেন আমু বলেন, ‘শোকের মাস আসলেই ষড়যন্ত্রকারীরা উজ্জীবিত হয়। নতুনভাবে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করে। পাকিস্তানের উদাহরণ দিয়ে প্রধান বিচারপতি ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টা করছেন। আর তার কথা পুঁজি করে বিএনপি নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।’ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘বিবেক হচ্ছে মানুষের সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ মানুষের বিবেককে কুঠারাঘাত করেছে। মহিলা সংসদদের নিয়ে কটূক্তি করায় দেশের নারী সমাজ আজ সংক্ষুব্ধ। সংসদ নিয়ে তার করা আপত্তিকর মন্তব্য মানুষের হƒদয়ে আঘাত করেছে।’ তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির সংসদ নিয়ে পর্যবেক্ষণ বিএনপি-জামায়াতকে উস্কে দিচ্ছে। যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তারের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য অপু উকিল, সাবিনা আক্তার, যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি জাকিয়া হোসেন মল্লিক প্রমুখ। নইলে অবাঞ্ছিত যুবলীগ ‘২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা নিয়ে সম্প্রতি বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের দেয়া বক্তব্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় আওয়ামী যুবলীগ সারা বাংলাদেশে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করবে।’ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভী রহমানের ১৩তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বনানী কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী এ কথা বলেন। প্রসঙ্গত, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকে জাতীয় দুর্ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে সম্প্রতি ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এটা নিছক দুর্ঘটনা। এই নিয়ে এত কান্নাকাটি করার কিছু নাই।’ ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা ছিল বিশ্বের ইতিহাসে অন্যতম জঘণ্য রাজনৈতিক সন্ত্রাস। একটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশের উপর এ রকম পাশবিক নৃশংস হামলা কেবল নজিরবিহীন নয়, পৈশাচিকও বটে। যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, ‘ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন একজন ভাড়াটে খুনী, সন্ত্রাসী এবং ইতর শ্রেণীর রাজনীতিবিদ। তিনি শিক্ষকতার আড়ালে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীদের লালন করতেন, পৃষ্ঠপোষকতা দিতেন। তার মদদেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী মিছিলে হামলার মতো কুৎসিত নোংরা ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এই কুলাঙ্গার শিক্ষক এবং তিনি যে রাজনৈতিক দলটি করেন সেই বিএনপি বাংলাদেশে হত্যা, সন্ত্রাসের রাজনীতির ধারক-বাহক। তাদের জন্য হত্যা সন্ত্রাস পৈশাচিকতা ধর্ষণ লুণ্ঠন স্বাভাবিক বিষয়। ষড়যন্ত্র হত্যা নৃশংসতাই তাদের রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য। এজন্যই ড. মোশাররফের ঘৃণ্য সন্ত্রাসের মদদদাতা রাজনীতিবিদরাই এ ধরনের মন্তব্য করতে পারেন। এ সময় যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মোঃ হারুনুর রশীদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী, সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, যুগ্ম সম্পাদক সুব্রত পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ বদিউল আলম, দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান, ড. সাজ্জাদ হায়দার লিটন, ঢাকা মহানগর উত্তর সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×