ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ভিসা প্রক্রিয়া আরও কঠোর করছে

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ৫ আগস্ট ২০১৭

ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ভিসা প্রক্রিয়া আরও কঠোর করছে

তৌহিদুর রহমান ॥ ইউরোপ থেকে অবৈধ বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে না নেয়া হলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ভিসা প্রক্রিয়া আরও কঠোর করার উদ্যোগ নিয়েছে। এটা ভবিষ্যতে বাংলাদেশীদের জন্য একটি সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে। এছাড়া ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেয়া অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসীর যে সংখ্যা ইউরোপীয় ইউনিয়ন দাবি করছে সেটা যথাযথ নয়, এই সংখ্যা আরও কম হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে বসবাসরত বাংলাদেশীদের সংগঠন অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশনের (আয়েবা) মহাসচিব কাজী এনায়েত উল্লাহ জনকণ্ঠকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন। আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপে যাওয়া বাংলাদেশীদের মানবিক বিবেচনায় নিয়ে সেসব দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। আয়েবার মহাসচিব কাজী এনায়েত উল্লাহ শুক্রবার মোবাইলে প্যারিস থেকে জনকণ্ঠকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে দাবি করা হচ্ছে, এসব দেশগুলোতে ৯৩ হাজার বাংলাদেশী অবৈধভাবে অবস্থান করছেন। তবে তাদের এই দাবি যথাযথ নয় বলে আমরা মনে করি। আমরা বিভিন্ন দেশে খোঁজখবর নিয়ে দেখেছি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ৩৫-৪০ হাজার অবৈধ বাংলাদেশী হতে পারে। এক প্রশ্নের উত্তরে আয়েবার মহাসচিব বলেন, ইউরোপে এসব অবৈধ বাংলাদেশীদের দেশে ফিরিয়ে না আনলে বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া কঠোর করবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। ভিসা প্রক্রিয়া কঠোর করার জন্য অনেক দেশ উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষ করে ইতালি সরকার বলেছে, অবৈধ বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে না নেয়া হলে ভিসা প্রক্রিয়া কঠোর করবে। আরও বেশ কয়েকটি দেশ ভিসা প্রক্রিয়া কঠোর করার জন্য বিবেচনা করছে। যেটা করা হলে বাংলাদেশী নাগরিকদেরই সমস্যায় পড়তে হবে। ফ্রান্স-বাংলাদেশ ইকোনমিক চেম্বারের সভাপতি কাজী এনায়েত উল্লাহ বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আয়েবার পক্ষ থেকে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আমরা বলেছি, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আসা বাংলাদেশীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য। মানবিক বিবেচনায় বাংলাদেশীদের আশ্রয় দেয়া উচিত। অবৈধ বাংলাদেশীদের বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মনোভাব কেমনÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে অবৈধ বাংলাদেশীদের নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এখনও করছি। তবে তারা বলছে, ‘তোমাদের (বাংলাদেশীদের) ইউরোপে আসা অব্যাহত রয়েছে। তোমরা কি গ্যারান্টি দিতে পারবে, এখানে আসা সকলকে বৈধতা দেয়ার পরে আর কোন বাংলাদেশী এখানে আসবে না।’ তবে আমরা তাদের এ বিষয়ে কোন গ্যারান্টি দিতে পারি না। কেননা প্রয়োজনের তাগিদেই মানুষ আসে। অবৈধ অভিবাসী নিয়ে ফ্রান্স সরকারের মনোভাব জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে সকলেই যেন ইউরোপে আসতে না পারে সে জন্য কয়েকদিন আগে লিবিয়া সরকারের সঙ্গে ফ্রান্স একটি চুক্তি করেছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী, ফ্রান্সের সেনাবাহিনীর সদস্যরা লিবিয়া উপকূলে অবস্থান নেবে। যারা প্রকৃতপক্ষে ইউরোপে আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবে, তাদেরই ইউরোপে প্রবেশ করতে দেয়া হবে। আর যারা প্রকৃতপক্ষে আশ্রয় পাওয়ার যোগ্য নয়, তাদের ভূমধ্যসাগর পার হতে দেবে না। এই চুক্তির বাস্তবায়ন হলে, এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোর মানুষের অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ করা কঠিন হয়ে যাবে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানুষের জীবন অত্যন্ত মূল্যবান। তবে অনেক বাংলাদেশী লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইতালিতে প্রবেশ করেছেন। দালালের মাধ্যমে এই কাজটি করেছেন। ভূমধ্যসাগর পার হতে গিয়ে শত শত বাংলাদেশী সাগরে ডুবে মারা গেছেন। যারা মারা গেছেন, আমি তাদের গভীর সমবেদনা জানাই। তবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দেয়া কোনভাবেই উচিত নয়। এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। কেননা নিজের জীবন, নিচের প্রাণের চেয়ে আর বড় কিছু হতে পারে না। বিশ্বজুড়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের স্বার্থরক্ষায় গঠিত ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ অর্গানাইজেশনের (ডাব্লিউবিও) সভাপতি কাজী এনায়েত উল্লাহ এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ইউরোপে অবৈধ বাংলাদেশীদের আমরা আন ডকুমেন্ট পিপল হিসেবে দেখছি। এসব বাংলাদেশী আন ডকুমেন্ট পিপলদের সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখা। এবং একটি যৌক্তিক সমাধানে আসা। যেটা উভয় পক্ষের জন্যই যেন মঙ্গল হয়।
×