ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

খালে ব্যক্তিগত স্থাপনা ॥ যশোরে বাধাগ্রস্ত পানি নিষ্কাশন

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২২ জুলাই ২০১৭

খালে ব্যক্তিগত স্থাপনা ॥ যশোরে বাধাগ্রস্ত পানি নিষ্কাশন

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ শহরের বেশ কয়েকটি এলাকার পানি নিষ্কাশন হয় চাঁচড়া-খোলাডাঙ্গা খাল দিয়ে। গত একদশকে এ খালের পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে একের পর এক ব্যক্তিগত ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি খাল ভরাট করে সংযোগ সড়ক, গাড়ি পার্কিং, কাঠগোলা, দোকানপাট নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে। আর অব্যাহত দখলের ফলে খালটি দিন দিন সরু নালা হয়ে পড়ছে। যার কারণে খাল দিয়ে পানি বের হতে লাগে দীর্ঘ সময়। ফলে বৃষ্টি হলেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় যশোর শহরে। অথচ সড়ক ও জনপথ বিভাগ এসব অবৈধ ব্রিজ ও স্থাপনা অপসারণে কখনও কোন উদ্যোগ নেয়নি। জানা গেছে, চাঁচড়া চেকপোস্ট থেকে উত্তর দিকে খোলাডাঙ্গা রেলক্রসিং পর্যন্ত খালের দৈর্ঘ্য এক কিলোমিটার। যার প্রশস্ততা ৬০ ফুট। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ও সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন সময়ে খাল ভরাট করে সংযোগ সড়ক, ব্রিজ নির্মাণ, গাড়ি পার্কিং, দোকানপাট নির্মাণের ফলে প্রশস্ততা বহুগুণ কমে গেছে। এক সময়ের ৬০ ফুট প্রশস্ততা খাল কোথাও কোথাও ২০ ফুটে নেমে এসেছে। অনেক জায়গায় প্রশস্ততা আরও কম। ১০ ফুটে নেমে এসেছে। সূত্রমতে, খালের ওপর নির্মিত হয়েছে ৮টি ব্রিজ। আরও কয়েকটি ব্রিজ নির্মাণ চলছে। চেকপোস্ট এলাকায় কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সামনে একটি ছয়তলা ভবনের মালিক খালের খানিকটা অংশ ভরাট করে ব্যক্তিগত একটি ব্রিজ নির্মাণ করেছেন। ব্রিজটির নিচ দিয়ে পানি বের হওয়ার জন্য খুবই অপরিসর চ্যানেল রাখা হয়েছে। পাশাপাশি খাল ভরাট করে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য কংক্রিটের স্থাপনা গড়া হয়েছে। এখান থেকে খানিক এগোলে আকিজ ফুড এ্যান্ড বেভারেজের মোজো গোডাউনের মালামাল ওঠানো নামানোর জন্য খালের একপাশ ভরাট করে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা করা হয়েছে। এর খানিকটা দূরে এসিআই মোটর সার্ভিস লিমিটেড ও নিটল মোটর্সের বিক্রয়কেন্দ্র খালের অনেকখানি জায়গা ভরাট করে গাড়ি পার্কিংয়ের স্পট করেছে। সেখানে খালের প্রশস্ততা ৫ ফুটে নেমে এসেছে। এর পাশে খাইরুল আলম বাদশা গাজী নামে একজন ব্যক্তি খাল ভরাট করে কাঠগোলা নির্মাণ করছেন। এদিকে ইউনিক তেল পাম্পের সামনে রুরাল রিকন্সট্রাকশন ফাউন্ডেশন খাল ভরাট করে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করেছেন। এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির সামনে খালের জায়গায় কংক্রিটের রাস্তাও নির্মাণ করা হয়েছে। এর অদূরে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অফিসের সামনে কয়েকটি ভবনের মালিক পানি নিষ্কাশনের জন্য সামান্য জায়গা রেখে একাধিক ব্রিজ নির্মাণ করেছে। সূত্রমতে, সড়ক ও জনপথের জায়গার পাশে কারও ব্যক্তিগত জমি থাকলে সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য জায়গা পাবে। কিন্তু সংযোগ সড়কের জন্য পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত করে এমন ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ করা যাবে না। খালে অপ্রশস্ত পাইপ স্থাপনও করা যাবে না। কিন্তু রুরাল রিকন্স¿াকশন ফাউন্ডেশন অফিসের সামনে খালের মধ্যে পাইপ বসিয়ে তার ওপর মাটি ফেলে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এ এলাকার বাসিন্দা মাহাবুব হাসান সেলিম, মাসুদ পারভেজ, আশরাফুল কবিরসহ কয়েকজন জানান, প্রতিনিয়ত খাল ভরাট করে গাড়ি পার্কিং, দোকান নির্মাণ হচ্ছে। বিভিন্ন ভবনের মালিক ব্রিজ নির্মাণ করছে। এ কারণে খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশনে বাধা পড়ছে। এছাড়া খালে ময়লা ও কচুরিপানা জমে ইদানীং পানিপ্রবাহ বন্ধের উপক্রম। তাই এখন বর্ষা মৌসুমে শহরের পানি সরতে অন্য সময়ের চেয়ে দেরি হচ্ছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নিয়মের বাইরে কেউ ব্রিজ নির্মাণ করে থাকলে সেগুলো ভেঙ্গে ফেলার জন্য নির্দেশ দেয়া হবে। এ বছর যশোর-খুলনা মহাসড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের কাজ শুরু হবে। পালবাড়ি থেকে চাঁচড়া চেকপোস্ট হয়ে রাজঘাট পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ হবে।
×