ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

তাঁত বস্ত্রমেলা রাজধানীজুড়ে

পোশাকে দেশাত্মবোধ সুরুচি, স্বতন্ত্র আবেদনের মেলা

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২১ জুন ২০১৭

পোশাকে দেশাত্মবোধ সুরুচি, স্বতন্ত্র আবেদনের মেলা

মোরসালিন মিজান ॥ বাঙালীর উৎসব-পার্বণের সঙ্গে মেলার খুব নিবিড় সম্পর্ক। বিশেষ বিশেষ উপলক্ষ সামনে রেখে মেলার আয়োজন করা হয়। আর ঈদ তো মহোৎসব। এ উপলক্ষে অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে গেছে মেলা। রাজধানী শহরের বিভিন্ন মাঠে খোলা জায়গায় এ ধরনের অস্থায়ী আয়োজন দৃশ্যমান হচ্ছে। শাড়ি থ্রিপিস পাঞ্জাবি থেকে শুরু করে মেলায় পাওয়া যাচ্ছে বেড কাভার, পর্দা, কুশন কাভারসহ ঘর সাজানোর নানা পণ্যও। শহুরে আয়োজন হলেও, গ্রামীণ ঐতিহ্যের মেলা। বাঙালীর নিজস্ব রুচি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হচ্ছে। দামেও কম। ফলে ভিড় লেড়ে আছে সব সময়। গত কয়েকদিন শহর ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ এলাকায় মেলায় আয়োজন করা হয়েছে। সেগুন বাগিচা বেইলী রোড শ্যামলী উত্তরা মিরপুর মতিঝিল- কোথায় নেই মেলা! সবকটি মেলাতেই দেশীয় পোশাকের পসরা। সুতি কাপড়ের ওপর চমৎকার হাতের কাজ করা হয়েছে। সুই সুতোয় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে লোকজ মোটিফ। মেয়েদের জামা ফতুয়া শাড়ি আছে। ছেলেদের জন্য আছে পাঞ্জাবি। বেড কভার কুশন কভার থেকে শুরু করে গৃহসজ্জার নানা সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে। কোনটিতেই অতিরিক্ত চাকচিক্য নেই। নিজস্বতা আছে। দামও হাতের নাগালে। শৌখিন ক্রেতারা তাই মেলা ঘুরে ঈদের পোশাক কিনছেন। সেগুন বাগিচায় একেবারে রাস্তার ধারে জায়গা খুঁজে নিয়ে তাঁত বস্ত্র মেলার আয়োজন করা হয়েছে। গত কয়েকদিন আগে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। মঙ্গলবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পুরনো বাড়ি ঘরের ফাঁকে বেশ খানিকটা জায়গা। পুরোটাজুড়ে স্টল সাজানো হয়েছে। সংখ্যায় একশ’র মতো। এখানে তাঁতের শাড়ি আর জামদানীর বড় সংগ্রহ। মেলায় প্রবেশ করতেই সালমান জামদানীর স্টল। রূপগঞ্জের কারিগরদের তৈরি জামদানী দিয়ে সাজানো। এখানে ৩ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা দামের জামদানী প্রদর্শিত হচ্ছে। বিক্রেতা দিলীপ জানান, আরও বেশি দামের জামদানী আছে। তবে খুব শৌখিন ক্রেতা না পেলে বিক্রি করা যায় না। তাই স্টলে রাখি না। পাশেই আতঙ্কিত জামদানী উইভিং ফ্যাক্টরির স্টল। এখানে জামদানী ছাড়াও আছে আকর্ষণীয় কাতান শাড়ি। বিক্রেতা আসিফ জানান, কাতানের অনেকগুলো জাত। সাউথ কাতান চোষা কাতান সিল্ক কতান সফট কাতান। নামের অর্থ বোঝা না গেলেও, শাড়িগুলো খুব আকর্ষণ করছিল। সে তুলনায় দাম কমই। ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকায় কেনা যাচ্ছে। একটি স্টলে রাজশাহী সিল্ক। সফট সিল্ক এন্ডি সিল্ক তসর ওপর থেকে নিচের দিকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। বিক্রেতা সোহেল রানা জানান, ঢাকার বিভিন্ন শোরুমে সারা বছরই রাজশাহী সিল্ক বিক্রি করেন তারা। তবে ঈদে চাহিদা বেড়ে যায়। এ কারণেই মেলায় নিয়ে আসা। মেলায় আছে সিলেটের মনিপুরীদের তৈরি শাড়িও। বিক্রেতা জাহাঙ্গীর জানান, তাদের পোশাকগুলো সিলেটেই তৈরি। মনিপুরী তাঁতে বুনা। এখান থেকে একটি শাড়ি কিনেছিলেন জুঁই। বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া তরুণী বললেন, একটু ভিন্নতার খোঁজ করছিলাম। তাই মনিপুরী তাঁতে বুনা শাড়ি কিনেছি। এটা পরেই ঈদ করবেন বলে জানান তিনি। মেলা চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনের সামনে চলছে বস্ত্র ও পাটপণ্য মেলা। এখানে ৫০টির মতো স্টল। বেশি চোখে পড়লো আনস্টিচ থ্রিপিস। সেলাই বিহীন দেশী কাপড়ে সুন্দর হাতের কাজ। সুই সুতোয় ফুটিয়ে তোলা নক্সা। বেশ লাগে দেখতে। জুলেখা আক্তার নামের এক উদ্যোক্তা জানান, বাসায় বসেই বুটিকের কাজ করেন তিনি। ঈদ উপলক্ষে অনেকগুলো এক্সক্লুসিভ ডিজাইনের থ্রিপিস করেছেন। কিন্তু শোরুম নেয়ার মতো সামর্থ্য নেই। তাই এই মেলায় অংশ নিয়েছেন। হাতের কাজের জন্য যশোর ও জামালপুর বেশ বিখ্যাত। এসব এলাকার পোশাক পাওয়া গেল মিতার স্টলে। এই উদ্যোক্তা জানান, গ্রিনরোডে নিজের বাসা। ওখানেই কাজ করেন। ঈদ উপলক্ষে পোশাক তৈরি করে আনা হয়েছে ঢাকার বাইরে থেকেও। আফসানা খন্দকার নামের আরেক উদ্যোক্তার কণ্ঠে অনুযোগ। বললেন, আমরা দেশীয় কাপড় প্রমোট করার চেষ্টা করছি। আমাদের কথা কেউ প্রচার করতে চায় না। এ কারণে বিক্রি আশানুরূপ হচ্ছে না বলে জানান তিনি। গ্লোবাল মিডিয়া এ্যান্ড কমিউনিকেশনস আয়োজিত মেলা ঈদের আগ পর্যন্ত চলবে বলে জানান আয়োজকরা। শ্যামলীর মেলাটি বেশ বড়। রিংরোডের পাশে যে খেলার মাঠ, সেখানে দেশীয় পোশাকের পসরা সাজানো হয়েছে। শাড়ি জামা পাঞ্জাবি ছোটদের পোশাক পাট ও চামড়াজাতÑ সব পাওয়া যাচ্ছে এখানে। জামার সঙ্গে মিলিয়ে জুতো কানের দুল গলার মালা চাই? আছে। কেনা যাচ্ছে অল্প দামেই। দেশীয় পোশাকের ভাল সংগ্রহ নিয়ে মেলায় এসেছেন মোঃ আরিফ। বললেন, মেশিনের কোন কারবার নেই আমাদের। হাতে ধরে ধরে কাজ করি। যারা এই কাজের মূল্য বোঝেন তারা কিনছেন। মিরপুরের সেনপাড়া পর্বতা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত মেলায়ও একইরকম আয়োজন। ঢাকাইয়া জামদানী সুতি জামদানী হাফ সিল্ক টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে এখানে। আপন টেক্সটাইলের জুয়েল জানান, দেশীয় কাপড় নিয়ে কাজ করেন তারা। ভারত পাকিস্তান থাইল্যান্ডের কাপড়ের চাকচিক্য আছে। দেশীয় কাপড়ের আছে নিজস্বতা। উত্তরা মডেল টাউনের ১৩ নম্বর সেক্টরেও চলছে মেলা। সোনারগাঁও জনপথের পাশে আয়োজিত মেলায় উপচেপড়া ভিড়। নানা ধরনের পোশাক ও পণ্যের পসরা। তবে কোন কোন মেলায় ভারতীয় পোশাক উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। কাওরান বাজারে আয়োজিত তাঁত বস্ত্র মেলা এর ভাল উদাহরণ। মেলা ঘুরে দেখা যায়, কয়েকটি স্টলে দেশীয় শাড়ি লুঙ্গি। বাকি সবকটিতে পকিস্তানী পোশাক। এ ধরনের তৎপরতা দূর করা গেলে মেলাগুলো আরও আকর্ষণীয় হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
×