ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় হত্যা মূল হোতা পালিয়ে সৌদি

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৮ এপ্রিল ২০১৭

উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় হত্যা মূল হোতা  পালিয়ে সৌদি

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ ‘মোর অবুঝ মাইয়ায় জীবনে কোনদিন কেউরে বাবা কইয়া ডাক দিতে পারবে না, মোর মাইয়াগো কেমন কইরা বাঁচামু, এই দুঃখ মুই কার ধারে কমু। ও আল্লাহ এইয়ার চাইয়া তুমি ক্যান মোরে লইয়া গ্যালা না।’ বিলাপ করে কথাগুলো বলছিলেন স্বামীহারা দুই কন্যাসন্তানের জননী আইরিন আক্তার দিশা। সূত্রমতে, গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের পূর্ব শরিফাবাদ গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মরহুম হারুন-অর রশিদ ওরফে গেরিলা হারুনের একমাত্র ছেলে লালন হাওলাদারের স্ত্রী আইরিন আক্তার দিশাকে দীর্ঘদিন মোবাইল ফোনে উত্ত্যক্ত করছিল একই গ্রামের লাল মিয়া হাওলাদারের ছেলে সৌদি প্রবাসী জসিম হাওলাদার। লালনের প্রতিবেশী কালাই ফকিরের ছেলে ইউসুফের সহযোগিতায় জসিমের অব্যাহত যৌন হয়রানিতে অতিষ্ঠ হয়ে পরে গৃহবধূ আইরিন আক্তার উপায়ান্তর না পেয়ে বিষয়টি তার স্বামীর কাছে জানানোর পর ছুটিতে দেশে ফেরা জসিম ও প্রতিবেশী ইউসুফকে ডেকে লালন হাওলাদার শাসিয়ে দেয়। এ সময় উভয়ের মধ্যে বাগ্বিত-ার একপর্যায়ে ইউসুফকে মারধর করে লালন। গৃহবধূ আইরিন আক্তার দিশা অভিযোগ করেন, ওই ঘটনার জের ধরেই তার স্বামী লালন হাওলাদারকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। তিনি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে তার স্বামীর হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি করেন। নিহত লালনের বোন সুলতানা আক্তার জানান, তার ভাইয়ের সঙ্গে প্রতিবেশী রাধেশ্যাম বিশ্বাসের ছেলে তপনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। ঘটনার দিন গত ৫ মার্চ সন্ধ্যায় তপন তার ভাইকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর বাড়ির সামনে থেকে জসিম ও তপন মোটরসাইকেলযোগে লালনকে নিয়ে যায়। এ ঘটনার কিছু সময় পর থেকেই তার ভাইয়ের মোবাইল নম্বর বন্ধ পেয়ে তারা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। সুলতানা অভিযোগ করেন, তার ভাইয়ের নিখোঁজের পর তপন বিশ্বাসকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করে তা বন্ধ করে রাখেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর তাদের বাড়ির সামনে তপনের মাছের ঘেরের পাড়ে তপনকে দেখে তার কাছে তিনি নিখোঁজ লালনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তপন নানা টালবাহানা শুরু করে। একপর্যায়ে রাত সাড়ে আটটার দিকে ঘেরের পাড়ে খুঁজতে যেতে চাইলে তপন তাদের বাধা প্রদান করে। তার বাধা উপেক্ষা করে খুঁজতে গিয়ে ঘেরের পাড়ে অস্থায়ীভাবে নির্মিত ঝুপড়িঘরের সামনের ধানের জমি থেকে নিখোঁজ লালনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরিবারের লোকজনে তাৎক্ষণিক গৌরনদী হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সুলতানা জানান, তার ভাই লালনকে উদ্ধারের সময় তার গলায় গুনার (জিআই তার) ও বিদ্যুতের তার পেঁচানো ছিল। তবে ওই সময় বিদ্যুতের তারে কোন সংযোগ ছিল না। কিন্তু লালনের বুকের ওপর পরিকল্পিতভাবে বিদ্যুতের শক দিয়ে হত্যা করার ক্ষতচিহ্ন ছিল।
×