ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

দিনভর পাটের ক্যানভাসে এক ঝাঁক শিল্পীর আঁকাআঁকি

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৬ মার্চ ২০১৭

দিনভর পাটের ক্যানভাসে এক ঝাঁক শিল্পীর আঁকাআঁকি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সকাল থেকে বিকেল অবধি চলল আঁকাআঁকি। পথের ধারে উন্মুক্ত আঙিনায় চিত্রিত হলো বিচিত্র বিষয়। আর সবগুলো চিত্রকর্মই চিত্রিত হলো পাটের ক্যানভাসে। ছবিগুলো আঁকলেন খ্যাতিমান থেকে শুরু করে নবীন-প্রবীণ শিল্পীরা। জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত হলো দিনভর এই আর্ট ক্যাম্প। জাতীয় পাট দিবস উপলক্ষে রবিবার এ ক্যাম্পের আয়োজন করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। তত্ত্বাবধানে ছিল ক্যানভাস বাংলাদেশ নামক সংঠন। সেই ক্যাম্পে সোনালি আঁশখ্যাত পাটের সেই স্বর্ণালি দিনের প্রত্যাশায় পাটের চিত্রপটেই আঁকা হয়েছে সবগুলো ছবি। ভরদুপুরে হাজির হলাম রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ের আর্ট ক্যাম্পে। তখন পাটের ক্যানভাসে চলছিল বরেণ্য শিল্পী হাশেম খানের তুলির আঁচড়। ইতোমধ্যে এ্যাক্রেলিক মাধ্যমে উদ্ভাসিত হয়েছে মূল বিষয়টি। কাস্তে হাতে এক চাষী সোনালি আঁশ ঘরে তোলার অপেক্ষায় কাটছে পাটগাছ। কথা হয় এই শিল্পীর সঙ্গে। বললেন, সরকারীভাবে যদি পাটের ক্যানভাস তৈরির উদ্যোগ নেয়া তাহলে আমরাও সেই ক্যানভাসে চিত্রকর্ম সৃজনে অভ্যস্ত হয়ে উঠব। এই শিল্পীর সঙ্গে কথা শেষে নজর পড়ে শামীম সুব্রানার ক্যানভাস। এই চিত্রকর ভিন্নভাবে মেলে ধরেছেন আপন চিত্রপট। বিমূর্ত আঙ্গিকে আঁকা ছবিতে চমৎকারভাবে ছড়িয়ে দিয়েছেন সোনালি রঙের আঁচড়। একইসঙ্গে যেন ছবির ভাষায় বলেছেন সোনালি আঁশ ও সোনার বাংলার কথা। পাটের ক্যানভাসে ছবি আঁকা প্রসঙ্গে এই শিল্পী বলেন, শুরুতে একটু সময় লাগছিল। তবে কিছুক্ষণ আঁকাআঁকির পর স্বচ্ছন্দ মনে হয়েছে। ক্যানভাস পিপারেশনটা ভাল হলে চটের এই চিত্রপটে ছবি আঁকতে কোন সমস্যাই হবে না। পথিকৃৎ শিল্পী এস এম সুলতানও বহু ছবি এঁকেছেন পাটের ক্যানভাসে। ক্যাম্পটি ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়ে আরেক শিল্পী আফরোজা জামিল কনকার ক্যানভাসটি। এই শিল্পী তার চিত্রপটে মেলে ধরেছেন সবুজ কচি পাতার পাটগাছের ভেতর বেরিয়ে আসা এক নারীর মুখ। খোঁপায় ফুল গোঁজা ওই নারীর কাঁধে বসে টিয়া পাখি। এই ক্যাম্পে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে ১০ ফুট বাই ২০০ ফুটের একটি পাটের ক্যানভাসে ছবি এঁকেছে প্রায় ৮০ জন চারুশিক্ষার্থী। খ- খ- ক্যানভাসের সমন্বয়ে গড়া হয়েছে এই বিশাল ক্যানভাসটি। বিষয় হিসেবে সেই ক্যানভাসে উঠে এসেছে ফসলের মাঠে কাজ শেষে কৃষক পরিবারের ঘরে ফেরার দৃশ্য, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, গাছের ডালে বিশ্রামরত দোয়েল পাখি, নদীতে চলমান পাটবোঝাই নৌকাসহ বহুবিধ বিষয়। ক্যাম্পের সমন্বয়কারী শিল্পী আনিসুজ্জামান জানান, নবীন-প্রবীণ ও খ্যাতিমান মিলিয়ে চটের চিত্রপটে ছবি আঁকার এ আয়োজনে অংশ নিয়েছে অর্ধশতাধিক শিল্পী। তাদের মধ্যে রয়েছেন সমরজিৎ রায় চৌধুরী, হাশেম খান, হামিদুজ্জামান খান, শেখ আফজাল, আলপ্তগীন তুষার, বিশ্বজিৎ গোস্বামী, সামসুদ্দোহা, তাজউদ্দীন আহমেদ, মোহাম্মদ ইকবাল, কামাল উদ্দীন, বিপাশা হায়াত, শামীম সুব্রানা প্রমুখ। ‘বইয়ের বন্ধু বঙ্গবন্ধু’ ॥ জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের আয়োজনে রবিবার সকালে গ্রন্থকেন্দ্র মিলনায়তনে ‘বইয়ের বন্ধু বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিষয়ভিত্তিক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চলচ্চিত্র গবেষক ও প্রাবন্ধিক অনুপম হায়াৎ। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর পাঠস্পৃহা ছিল অপরিমেয়। শিক্ষা জীবনের বাইরে ছাত্র রাজনীতি ও জাতীয় রাজনৈতিক জীবন, কারাবন্ধী জীবন, হুলিয়া জীবন, মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত থাকাকালীন জীবন, অন্যান্য সময় এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শহীদ হওয়ার আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ছিলেন বইবান্ধব ও বইপ্রেমী। প্রবন্ধে তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক কারণে ব্রিটিশ আমলে এবং স্বাধীন পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুকে প্রায় ১৬ বছর জেলে থাকতে হয়েছে। এই জেল জীবনে নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গী ছিল বই। অন্যদিকে হুলিয়ার কারণে গোপন জীবনেও ছিল বই। এ ব্যাপারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যায় তার লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও বিভিন্ন চিঠিপত্রের মাধ্যমে। পঠিত প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গণি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মোঃ আক্তানরুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ মসিউর রহমান। শহীদ মিনারে পথনাটক উৎসব ॥ ‘সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত শিক্ষা চাই, মুক্ত মানবিক দেশ চাই’ সেøাগানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলছে বাংলাদেশ পথনাটক উৎসব। বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী এ উৎসবের পঞ্চ দিন ছিল রবিবার। বিকেল শুরু হওয়া আয়োজনে ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ শীর্ষক পথনাটক পরিবেশন করে সিরাজগঞ্জের বিবর্তন নাট্যগোষ্ঠী। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন কাজী শওকত। নাসির আহমেদের রচনা ও আবিদ আহমেদের নির্দেশনায় বাঙলা নাট্যদল নাটক পরিবেশন করে ‘তুই চোর’। মৈত্রী থিয়েটার পরিবেশন করে পথনাটক ‘ঘাতক’। আব্দুল হালিমের রচনায় প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন নিয়াজ আহমেদ ও আসাদুজ্জামান আসাদ। সাজ্জাদ লিপনের রচনা ও গোলাম জিলানীর নির্দেশনা রঙ্গপীঠ পরিবেশন করে ‘খেয়াপাড়ের মাঝি’। আবদুল্লা হারুনের রচনা জাহিদুর রহমানের নির্দেশনায় লোকনাট্যদল (বনানী) পরিবেশন করে ‘পরগাছা’। সব শেষে নেত্রকোনার দিলু বয়াতি ও তাঁর দলের বিশেষ পরিবেশনা ‘মহুয়া সুন্দরী পালা’। আজ সোমবার উৎসবের ষষ্ঠ দিন পথনাটক পরিবেশন করবে ভিশন থিয়েটার, নাট্যযোদ্ধা, থিয়েটার আর্ট ইউনিট, চৌকস নাট্য সম্প্রদায় (কুমিল্লা) ও দৃষ্টিপাত নাট্যদল। বিশেষ পরিবেশনায় থাকবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাঁপাই গম্ভীরা দল।
×