ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজারে মাতৃত্ব ভাতার নামে ঘুষ বাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

কক্সবাজারে মাতৃত্ব ভাতার নামে ঘুষ বাণিজ্য

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ কক্সবাজার পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে অতিদরিদ্র গর্ভবতী নারীদের মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য নাম তালিকাভুক্তি করতে ঘুষ দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তালিকাভুক্ত হওয়া মায়ের মধ্যে শিশু নেই এমন নারী, স্থানীয় বাসিন্দা নয় এমন নারীসহ পরপর তিনবার মাতৃত্বকালীন ভাতা পাচ্ছে এমন বহু নারী রয়েছে। কক্সবাজার পৌরসভার চারটি ওয়ার্ডে দায়িত্বপ্রাপ্ত নারী কাউন্সিলর ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের কয়েকজন মিলে প্রতিজনের কাছ থেকে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করে এতে ২০ লাখ টাকার ঘুষ বাণিজ্য করা হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। কক্সবাজার জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার দরিদ্র গর্ভবতী নারীদের নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জনপ্রতি মাসে ৫ শ’ টাকা হারে ২ বছরে ১২ হাজার টাকা ভাতা দেয়ার কর্মসূচী চালু করেছে। ওই কর্মসূচীর আওতায় প্রতি ছয় মাস পর একজন নারী তিন হাজার টাকা পান। সুবিধাভোগীদের জন্য দুই বছর পর্যন্ত এই অর্থ সহায়তা পাওয়ার বিধান রয়েছে। কক্সবাজার পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে ৯৫০ জন দরিদ্র গর্ভবতী নারী ও শিশুর মা এ সুবিধা পাবেন। পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে অনুসন্ধান করে জানা যায়, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) সুব্রত বিশ্বাস এবং কক্সবাজার পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর চম্পা উদ্দীন, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর মঞ্জুমন্নাহার বেগম এবং ১০, ১১ ও ১২ সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর কোহিনূর আক্তারসহ গোপন বৈঠকের মাধ্যমে সরকারীভাবে বরাদ্দপ্রাপ্ত ৯৫০ জন পুষ্টি ভাতাভোগী সদস্য নির্বাচনের জন্য পৃথকভাবে দায়িত্ব নেয়। এছাড়া পুরুষ কাউন্সিলররাও কিছু কিছু গর্ভবতী নারীর তালিকা করার দায়িত্ব পান। মহিলা বিষয়ক অধিদফতর কক্সবাজারের পরিচালনায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ‘কর্মজীবী’ ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবিল কর্মসূচীর আওতায় নতুন ৯৫০ উপকারভোগী সদস্য নির্বাচনকল্পে চলতি বছর ১৬ জুন হতে কার্যক্রম শুরু করার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আনোয়রুল নাসেরের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ১৯ জুন হতে ২৭ জুন পর্যন্ত পৌরসভার ১২টি ভেন্যুতে সম্ভাব্য উপকারভোগী মহিলাদের যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে উপকারভোগী নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নির্বাচিত উপকারভোগীদের চূড়ান্ত তালিকা গত ৩১ মের মধ্যে ঢাকার সদর কার্যালয়ে প্রেরণ করার জন্য জেলা কমিটির সভায় একমত পোষণ করা হয়। সে অনুযায়ী তালিকাও প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যলয় থেকে এ পর্যন্ত ভাতাভোগীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রেরণ করা হয়নি। মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের নীতিমালা অনুযায়ী কক্সবাজার পৌরসভার স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে নাগরিকত্ব অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র, গর্ভধারণ সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারী প্রতিষ্ঠানের ডাক্তার কর্তৃক প্রদত্ত সনদপত্র, হেলথকার্ড, শিশু সন্তানের জন্ম নিবন্ধন, সদ্য তোলা ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি গেজেটেড কর্মকর্তা কর্তৃক সত্যায়িত সম্মিলিত কাগজপত্রাদি সংযুক্তপূর্বক আবেদন ও ফরম পূরণ করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা তা উপেক্ষা করে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে ৯৫০ জন নারীকে তালিকাভুক্ত করেছে। অভিযোগ রয়েছে, মাতৃকালীন ভাতাভোগীর চূড়ান্ত তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির নামে প্রত্যেক নারীর কাছ থেকে আড়াই টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা করে ঘুষ নেয়া হয়েছে। এ পর্যায়ে সংশ্লিষ্টরা পুষ্টি মাতৃকালীন ভাতাভোগীদের কাছ থেকে ২০ লক্ষ টাকারও বেশি ঘুষ আদায় করেছে বলে মাঠ পর্যায়ে জনশ্রুতি রয়েছে। ভুক্তভোগী নারীরা অভিযোগ করেন, পৌর এলাকায় ৯৫০ নারীর সবাইকে ভাতা পেতে কোন না কোনভাবে টাকা দিতে হয়েছে। এ লক্ষ্যে বেশকিছু দালালচক্রও সক্রিয় ছিল ওই সময়। কেউ টাকা দিতে না চাইলে তার নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়ার হুমকি দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত জনপ্রতিনিধিরা। এ ব্যাপারে নারী কাউন্সিলর চম্পাউদ্দিন, মঞ্জুমন্নাহার বেগম ও কোহিনূর আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা টাকা নেয়ার বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের কর্মকর্তার পদ ৪-৫ বছর ধরে শূন্য থাকায় সুব্রত বিশ্বাস জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ সুযোগে অবাধে দুর্নীতি আর অনিয়মের ঘটনা ঘটছে। কক্সবাজার জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) সুব্রত বিশ্বাস বলেন, সুবিধাভোগী নারীদের কাছ থেকে আমি কোন টাকা-পয়সা নেইনি। নারী কাউন্সিলরা অবৈধভাবে টাকা নিয়েছেন এমন কেউ আমার কাছে অভিযোগ করেনি। এর পরও বিষয়টি খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেব।
×