ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

দল ও সরকারের ভাবমূর্তি অক্ষুণœ রাখতে শুদ্ধি অভিযানে নামছে আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১২ নভেম্বর ২০১৬

দল ও সরকারের ভাবমূর্তি অক্ষুণœ রাখতে শুদ্ধি অভিযানে নামছে আওয়ামী লীগ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বড় ধরনের শুদ্ধি অভিযানে নামছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আর শুদ্ধি অভিযানের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দল ও সরকারের ইমেজ অক্ষুণœ রাখা। এ লক্ষ্যে অন্যায়-অনিয়ম, দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সঙ্গে জড়িত হলে তাৎক্ষণিকভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দলটির কঠোর অবস্থানের কথা জানান দিতে শুরু করেছে দলটি। একই সঙ্গে টানা দুইবার ক্ষমতায় থাকার সময় দলের ইমেজ ক্ষুণœকারী, অন্যায়-অনিয়মের সঙ্গে জড়িত দলীয় এমপিদেরও পৃথক তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে; যাদের আগামী নির্বাচনে কোনভাবেই দলীয় মনোনয়ন দেবে না দলটি। দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের দিয়ে শীঘ্রই সারাদেশে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। বিগত উপজেলা, পৌরসভা, ইউপিসহ স্থানীয় নির্বাচনের সময় দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারী এবং কেন্দ্র থেকে প্রান্ত পর্যন্ত যেসব সংসদীয় আসনগুলোতে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিবাদ রয়েছে তা চিহ্নিত করে প্রথমে কোন্দল মেটানোর চেষ্টা করা হবে। সমঝোতা না হলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল-দ্বন্দ্বের সঙ্গে জড়িত নেতাদের চিহ্নিত করে একটি পৃথক তালিকা প্রস্তুতেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে দলটির হাইকমান্ড থেকে। আর এ নির্দেশনা নিয়েই দেশব্যাপী কেন্দ্রীয় নেতাদের দিয়ে ঝটিকা সফরের চিন্তা-ভাবনা করছে দলটির হাইকমান্ড। এ প্রসঙ্গে শুক্রবারও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন দলটির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ঢাকার বাইরের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যেন আওয়ামী লীগের শত্রু না হয়। দলীয় কোন্দল দূর করতে হবে। দলের নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। নিয়মশৃঙ্খলা মানা না হলে দলের কাঠামোতে থাকার কারও অধিকার নেই। আর আমাদের হাতে বেশি সময় নেই। আগামী দুই বছর পরই আমাদের চ্যালেঞ্জ। তাই নেতাকর্মীদের গ্রামে গ্রামে গিয়ে উঠান বৈঠক ও গণসংযোগ করতে হবে। বসে থাকলে চলবে না। মাত্র কয়েক দিনে বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে দলের কঠোর অবস্থান জানান দেয়া শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। কোন নেতাকর্মী অন্যায়-অনিয়মের সঙ্গে জড়িত হলে তাৎক্ষণিক কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে দলটি। এখন থেকে কারও ব্যক্তিগত দায়ভার আর আওয়ামী লীগ গ্রহণ করবে না- কেন্দ্র থেকে এমন হুঁশিয়ারি বার্তা সংগঠনের সর্বস্তরে চিঠির মাধ্যমে শীঘ্রই পৌঁছে দেয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলটির নীতি-নির্ধারকরা। তারা বলেন, কোন অবস্থাতেই দলের ও সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্টকারীদের রেহাই দেয়া হবে না। তারা দলের কেউ হলেও মাফ করা হবে না। জানা গেছে, দলের দুই দিনব্যাপী কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভায়ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল সৃষ্টিকারী এবং অন্যায়-অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না, সে যত বড় নেতাই হোন না কেন। প্রধানমন্ত্রীর এমন কঠোর অবস্থান জেনেই দলে বড় ধরনের শুদ্ধি অভিযানের পথে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে দলটির একাধিক নেতা জানান, আওয়ামী লীগ দলের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা যেমন অক্ষুণœ রাখতে চায়, তেমনি সরকারের অর্জন ম্লান হয়Ñ এমন কোন কর্মকা-ের সঙ্গে দলের যত বড় নেতাই সম্পৃক্ত থাকুক, তাকে শাস্তি পেতেই হবেÑ এমন নীতি অনুসরণ করছে। অন্যায় করলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। আওয়ামী লীগ এখন কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সারাদেশের নেতাকর্মীদের কাছে এমন বার্তাই পৌঁছানো হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু শুদ্ধি অভিযানই নয়, এখন থেকেই আগামী নির্বাচনের জন্য দলের প্রার্থী বাছাইয়ের প্রাথমিক জরিপ চালানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। তৃণমূল পর্যায়ে জরিপ চালিয়ে বর্তমান এমপিদের জনপ্রিয়তা এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের অবস্থান যাচাইয়ের কাজ গুছিয়ে রাখতে চায় দলটি। কারণ গত নির্বাচনে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি অংশ না নিলেও আগামী নির্বাচনে যে অংশগ্রহণ করবেÑ এটি প্রায় নিশ্চিত আওয়ামী লীগ। এ কারণেই জরিপের মাধ্যমে অন্যায়-অনিয়ম, দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সঙ্গে জড়িত এবং জনবিচ্ছিন্ন দলীয় এমপিদের তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে। আভাস পাওয়া গেছে, অন্তত অর্ধশতাধিক এমপিকে আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেবে না আওয়ামী লীগ। ওই সব আসনে সম্ভাব্য জনপ্রিয় নতুন মুখ বাছাই করে আগে-ভাগেই নির্বাচনী মাঠে নামাতে চায় তারা। দলটির কয়েক নীতিনির্ধারক নেতা জনকণ্ঠকে জানান, বর্তমান এমপিদের অনেকেই আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন দৌড় থেকে ছিটকে পড়তে পারেন। যাদের বেশির ভাগই গত নির্বাচনে প্রথমবারের মতো বিজয়ী হয়েছেন। অনেক এমপির বিভিন্ন অনিয়ম-অপকর্মের কারণে সরকারকে বারবার বিব্রত অবস্থায় পড়তে হয়েছে, দলের সুনামকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এমন প্রায় অর্ধশতাধিক এমপির কপাল এবার পুড়তে পারে। বিএনপি নির্বাচনে আসার সম্ভাবনা থাকায় কোন বিতর্কিত কিংবা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া এমপিকে মনোনয়ন দিয়ে কোন ঝুঁকি নেবে না আওয়ামী লীগ। দলকে শক্তিশালী ও পরিচ্ছন্ন করে গড়ে তুলতেই এবার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সাইডলাইনে রেখে ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্রনেতাদেরও অধিক বেছে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব নির্ভার তরুণ নেতাদের সারাদেশের মাঠ-ঘাট চষে বেড়িয়ে দলীয় সমস্যা চিহ্নিত করে সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে চান দলটির সভানেত্রী। এ কারণেই দলে শুদ্ধি অভিযানের পাশাপাশি আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এলাকায় জনপ্রিয়, ত্যাগী এবং পরিচ্ছন্ন প্রার্থী খুঁজে বের করার মিশনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড।
×