ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আ’লীগের আলোচনা সভা

২১ আগস্ট হামলার দায় ও কলঙ্ক বিএনপি কোনদিন মুছতে পারবে না

প্রকাশিত: ০৮:১৯, ২৩ আগস্ট ২০১৬

২১ আগস্ট হামলার দায় ও কলঙ্ক বিএনপি কোনদিন মুছতে পারবে না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ‘২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ন্যক্কারজনক ঘটনা’ মর্মে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রতিক বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। তারা বলেন, ১৫ আগস্ট এবং ২১ আগস্ট একই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা। ২১ আগস্টের কলঙ্কের ঘটনার নায়ক ও সৃষ্টিকারী হচ্ছে বিএনপি, হাওয়া ভবন এবং তৎকালীন জোট সরকার। অথচ গ্রেনেড হামলা বিষয়ে ১২ বছর পর বিএনপির ঘুম ভেঙ্গেছে। তবে এ হামলার দায় ও কলঙ্ক বিএনপি কোনদিন মুছে ফেলতে পারবে না। সোমবার রাজধানীতে জাতীয় শোক দিবস এবং ২১ আগস্ট ভয়াল গ্রেনেড হামলার এক যুগপূর্তি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত পৃথক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে নেতারা এসব কথা বলেন। বিকেলে কলেজ অডিটরিয়ামে জাতির পিতার শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের যৌথ আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, গ্রেনেড হামলার বিষয়ে ১২ বছর পর বিএনপির ঘুম ভেঙ্গেছে। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা- এবং খুনীদের বিচারের বিষয়ে ৪২ বছরেও তাদের কাছ থেকে কোন প্রতিক্রিয়া পায়নি জাতি। আসলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বেনিফেসিয়ারি হলো বিএনপি। ‘২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ন্যক্কারজনক ঘটনা’ মর্মে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে ২৪ জন নিহত হন। এ হত্যাকা-ের বিচার যাতে না হয় সেজন্য জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়েছিল। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানী হানাদাররা হাতের কাছে পেয়েও হত্যার সাহস পায়নি। অথচ এদেশের কতিপয় বিশ্বাসঘাতক তাকে হত্যা করে। দেশের প্রচলিত আইনে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও বিচারের রায় কার্যকরে দেশবাসী স্বস্তি প্রকাশ করলেও বিএনপি এখনও পর্যন্ত কোন প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হলেন হিমালয়ের মতো উঁচু। হিমালয়ের নিচে বসে কোন অন্ধ যদি হিমালয়ের উচ্চতা পরিমাপ করতে না পারে তাহলে সেটা অন্ধের দোষ। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, পবিত্র ইসলাম শান্তির ধর্ম। অথচ এই ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে কিছু মানুষকে বিপথগামী করা হয়েছে। তাদের আশ্বাস দেয়া হয়েছে বেহেস্তের হুর-পরি পাওয়ার। কোন সভ্য দেশে এটা কোন বিশ্বাসযোগ্য কথা হতে পারে না। এসব বিপথগামীকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি বলেন, চক্রান্ত এখনও চলছে। ষড়যন্ত্রকারীরা চায় দেশের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে। আর এজন্য তারা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে ঠেকাতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ঐক্যবদ্ধ থেকে এসব অপশক্তি রুখতে হবে। শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ এবিএম মাকসুদুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেনÑ অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ডাঃ বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু, অধ্যাপক ডাঃ মাহমুদ হাসান, অধ্যাপক ডাঃ এম ইকবাল আর্সলান, অধ্যাপক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া প্রমুখ। ২১ আগস্টের কলঙ্ক বিএনপির সৃষ্টি- ও. কাদের ॥ ২১ আগস্ট ভয়াল গ্রেনেড হামলা নিয়ে বিএনপির মহাসচিবের বক্তব্যের সমালোচনা করে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এ কলঙ্ক বিএনপির সৃষ্টি। এ কলঙ্ক তৎকালীন জোট সরকারের। বিকেলে শিল্পকলা একাডেমিতে মহানগর যুবলীগ উত্তরের আলোচনা সভা ও সংবাদচিত্র প্রদর্শনীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ভয়াল গ্রেনেড হামলার যুগপূর্তি উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মাঈনুল হোসেন খান নিখিলের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেনÑ আহমদ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত বিশেষ সহকারী এ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শেখর, শহীদ সেরনিয়াবাত, মুজিবর রহমান চৌধুরী, মহিউদ্দীন আহমেদ মহি, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে ফাহিম প্রমুখ। যৌথভাবে সভা সঞ্চালনা করেন উত্তরের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন ও যুগ্মসাধারণ সম্পাদক তাসভিরুল হক অনু। ওবায়দুল কাদের বলেন, গ্রেনেড হামলার মূল টার্গেটই ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৫ আগস্ট এবং ২১ আগস্ট একই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা। ১৫ আগস্টে প্রাইম টার্গেট ছিলেন জাতির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু। আর ২১ আগস্টের প্রাইম টার্গেট ছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের সমালোচনা করে সেতুমন্ত্রী বলেন, মির্জা ফখরুল সাহেবরা এখন কলঙ্ক বলছেন। এ কলঙ্ক কাদের সৃষ্টি? এ কলঙ্ক বিএনপির সৃষ্টি। এ কলঙ্ক তৎকালীন জোট সরকারের। এ কলঙ্ক হাওয়া ভবনের। তিনি বলেন, বিএনপি বর্তমান ও ভবিষ্যত দুটোই কালিমালিপ্ত করেছে এ ২১ আগস্ট ঘটনার মাধ্যমে। এ কলঙ্ক বিএনপি কোনদিন মুছে ফেলতে পারবে কিনা, আমি জানি না। কারণ এ কলঙ্কিত ঘটনার জনক হলো বিএনপি। ওবায়দুল কাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাজনীতিতে অনেকের নামে সৌজন্য ব্যানার-পোস্টার দেখি। সৌজন্য বিলবোর্ড ও তোরণ দেখি। কিন্তু রাজনীতি থেকে সৌজন্যবোধ হারিয়ে যাচ্ছে। তাই প্রত্যেককে তার নিজ নিজ জায়গা থেকে সে জুনিয়র হলেও তার প্রাপ্য সম্মানটুকু তাকে দিতে হবে। কারণ এটা আমাদের শিখিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। শিখিয়েছেন তাঁরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটা শিখিয়েছেন যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনি। দলীয় নেতাকর্মীদের কর্মকা- ও উন্নয়নে ডিজিটাল হতে এবং সৌজন্য ও মূল্যবোধে এনালগ হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনাকে শুধু দলীয় ভিত্তিতে পালন না করে জাতীয় ভিত্তিতে ‘জঙ্গী ও সন্ত্রাসবিরোধী’ সমাবেশ হিসেবে পালনে পদক্ষেপ নিতে আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানান।
×