ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

অভিজিত হত্যাকাণ্ড

৭ সিসিটিভি ভিডিও প্রকাশ করেছে পুলিশ ॥ চিহ্নিত ৫, শনাক্তে সহায়তা কামনা

প্রকাশিত: ০৮:২৩, ২২ আগস্ট ২০১৬

 ৭ সিসিটিভি ভিডিও প্রকাশ করেছে পুলিশ ॥ চিহ্নিত ৫, শনাক্তে সহায়তা কামনা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার অভিজিত রায় হত্যাকা-ের আগে একুশের বইমেলা এলাকার সাতটি সিসিটিভি ভিডিও প্রকাশ করেছে পুলিশ। সাতটি সিসিটিভির ফুটেজে অভিজিত হত্যাকারী পাঁচজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। চিহ্নিত এই পাঁচজনকে শনাক্ত করা জন্য নগরবাসীর সহায়তা চেয়েছে পুলিশ। ডিএমপির ফেসবুক পেজে ভিডিওগুলো প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, চিহ্নিত ব্যক্তিদের সম্পর্কে কোন তথ্য বা তাদের পরিচয় জানা থাকলে ফেসবুকে মেসেজ হিসেবে অথবা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এ্যাপে জানানো যাবে। পুলিশের প্রকাশ করা এই সাত ভিডিও ফুটেজের মধ্যে বইমেলার ফটকের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছিল গত ১৯ জুন। সেখানে অভিজিত ও তার স্ত্রী বন্যাকে অনুসরণকারী হিসেবে এক তরুণকে চিহ্নিত করা হয়। সে সময় বলা হয়, ওই যুবক আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের অপারেশন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য শরীফুল। যেদিন ওই ভিডিও প্রকাশ করা হয়, তার আগে ভোরে ঢাকার খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া বাঁশপট্টি এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে শরীফের নিহত হওয়ার খবর জানায় পুলিশ। ত্রিশ বছরের এই যুবক সাকিব, সালেহ, আরিফ ও হাদী নাম ব্যবহার করে পরিচয় গোপন করে আসছিল। তাকে ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা ছিল। একই ভিডিওতে এবার আরও দুজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ডিএমপির উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মাসুদুর রহমান বলেছেন, আমরা ছয়জনকে চিহ্নিত করেছি। এর একজন এনকাউন্টারে মারা গেছে। বাকিদের তথ্য জানতেই আমরা ভিডিও প্রকাশ করেছি। লেখালেখির কারণে জঙ্গীদের হুমকিতে থাকার মধ্যেও গত বছর বইমেলায় স্ত্রীকে নিয়ে দেশে এসেছিলেন অভিজিত। ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে বইমেলা থেকে বের হওয়ার পর টিএসসি এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় অভিজিতকে। বন্যাও হামলার শিকার হয়ে একটি আঙুল হারান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের ৬ সদসের একটি দল অভিজিত রায়ের ওপর হামলায় জড়িত ছিল। হত্যাকা-ের পরপর জানানো হয়, দুজন হামলাকারীকে অভিজিত ও বন্যাকে চাপাতি দিয়ে কোপাতে দেখা গেছে। হামলাকারীদের দুদিকে পালিয়ে যেতেও দেখা গিয়েছিল। গত জুনে প্রথম ভিডিও প্রকাশের পর শরীফ ছাড়া বাকি পাঁচজনের বিষয়েও গোয়েন্দারা তথ্য পাওয়ার বিষয়ে আশার কথা শোনান। পুলিশের তথ্যানুযায়ী, একজন মোটা লোক ছিল সেখানে, সে সম্ভবত পুরান ঢাকার বাসিন্দা। ওই যুবকটি প্রযুক্তি সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখে। বাকি চারজনের শারীরিক বর্ণনাসহ কিছু তথ্যও পাওয়ার কথা জানান কর্মকর্তারা। কর্মকর্তারা জানান, অভিজিত হত্যার পরপরই তারা একুশে বইমেলায় স্থাপিত সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেন। এসব ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্টরা খুনীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে তাদের নাম-পরিচয় জানতে পারেননি। খুনীদের নাম-পরিচয় জানতে সর্বসাধারণের সহযোগিতা চেয়েছে ডিএমপি। প্রথম ফুটেজে দেখা যায়, অভিজিত ও বন্যার পেছনে এক তরুণ মোবাইল টিপতে টিপতে অনুসরণ করছে। রাত তখন ৮টা ৪৪ মিনিট। পাশে ব্যাগ কাঁধে এক তরুণকে যেতে দেখা যায়। এছাড়া তার পাশে স্বাস্থ্যবান এক তরুণও ছিল। যার চোখে চশমা দেখা গেছে। দ্বিতীয় ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে অভিজিত ও বন্যা বইমেলার গেট দিয়ে বের হয়ে আসছেন। তাদের পেছনে পেছনে ওই তিনজনকেই দেখা যাচ্ছে। সন্দেহভাজন খুনীরা বাইরে বেরিয়ে আসার সময় মোবাইলে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করছিল। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, আরেক ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, সন্দেহভাজন এক তরুণ বইমেলার মূল ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সময় তখন বিকেল চারটা ১ মিনিট। তার হাতেও মোবাইল। গায়ে শর্ট পাঞ্জাবি। মুখে হালকা দাড়ি। এই তরুণকে মেলার ফটকের কংক্রিটের চেয়ারে বসে থাকতেও দেখা যায়। অন্য এক ফুটেজে দেখা যায়, আরেক তরুণের সঙ্গে সে মেলায় ঢুকছে। প্রায় একই সময়ে এক তরুণ সাইকেল নিয়ে মেলায় ঢোকে। বিকেল চারটা ২৪ মিনিটে ওই তরুণকে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাতটা ১৭ মিনিটে সাদা শার্ট গায়ে আরেক তরুণকে মেলা থেকে বের হতে দেখা যায়। এই যুবকের গালেও হালকা দাড়ি। সূত্র মতে, অভিজিত মেলায় ঢোকার আগে থেকেই সংঘবদ্ধ খুনী চক্র মেলার গেটে অবস্থান করছিল। অভিজিত মেলায় ঢোকার পর থেকেই তারা তাকে অনুসরণ করতে থাকে। মেলা থেকে বেরিয়ে আসার পর তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ভিডিওফুটেজে অন্তত ছয় তরুণকে দেখা গেছে। যারা সবাই অভিজিতকে অনুসরণ করছিল। হত্যায় অংশ নিয়েছিল দুই তরুণ। অন্যরা আশপাশেই অবস্থান করছিল ধারণা তদন্ত কর্মকর্তাদের। ভিডিওফুটেজে যার কাঁধে ব্যাগ ছিল সে হত্যাকা-ে সরাসরি অংশ নিয়েছিল। কারণ ব্যাগের ভেতর থেকেই চাপাতি বের করে অভিজিতের ওপর আক্রমণ করা হয়। এই ছয়জনের মধ্যে শরীফ নামে একজন পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।
×