ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

নর্থ সাউথে জঙ্গী তৎপরতা নিয়ে আজ তদন্তে নামছে ইউজিসি

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৪ জুলাই ২০১৬

নর্থ সাউথে জঙ্গী তৎপরতা নিয়ে আজ তদন্তে নামছে ইউজিসি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জঙ্গীবাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নাম আসার প্রেক্ষাপটে আজ নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে সরেজমিন তদন্তে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগমের নেতৃত্বে চার সদস্যের তদন্ত দল প্রতিষ্ঠানটিতে তদন্ত করবে। এর আগে মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর নর্থ সাউথের বিষয়ে তদন্তের ঘোষণা দিয়েছিলেন ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান। এদিকে জঙ্গীবাদ দমনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা সরকারের অবস্থানের সঙ্গতি রেখে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান কর্তৃপক্ষ নজরদারি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কাজ শুরু করেছে। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা দেশের নামী দামী প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, নামী দামী প্রতিষ্ঠান, উচ্চবিত্ত ও শিক্ষিত ছেলেদের এ কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা উদ্বেগজনক। এটা কেন হচ্ছে তা নিয়ে সকলে মিলে ভাবতে হবে, সে অনুসারে পদক্ষেপও নিতে হবে। এ লক্ষ্যেই নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১০ দিনের বেশি অনুপস্থিত থাকা শিক্ষার্থীদের তথ্য দেয়ার বাইরেও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা বলেছেন, এখন থেকে ইউনিভার্সিটির কোন শিক্ষার্থী এক সেমিস্টার অনুপস্থিত থাকলেই তার ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে। কোন ছাত্র-ছাত্রী এক সেমিস্টারও অনুপস্থিত থাকতে পারবেন না। তাদের নিয়মিত হতে হবে। এর আগে পরপর দুই সেমিস্টার অনুপস্থিত থাকলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল হতো। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা বলছেন, আমাদের নেয়া পদেক্ষেপ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কোন অবকাশ নেই। কারণ আমরা কেবল ১০ দিন অনুপস্থিত থাকা শিক্ষার্থীদের তথ্য জানানোর মধ্যেই সীমাবন্ধ থাকতে চাই না। একই সঙ্গে অপরাধী হলে ছাত্রত্ব বাতিল ছাড়াও নজরদারির মধ্যে রেখে কাজ করা হচ্ছে। কেউ যাতে অনির্দিষ্টকাল অনুপস্থিত থাকতে না পারে সেজন্য শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত করতে কঠোর অবস্থান নেয়া হচ্ছে। এক সেমিস্টারকাল অর্থাৎ চার মাস অনুপস্থিত থাকলে শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি। এদিকে গত রবিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কোন শিক্ষার্থী ১০ দিনের বেশি অনুপস্থিত থাকলেই তার সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে হবে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সোমবার মন্ত্রিসভায়ও সাম্প্রতিক জঙ্গী হামলা নিয়ে আলোচনাকালে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি নিয়ে আপত্তি তোলেন মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য। উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বলেছেন, যেসব ঘটনায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আসছে, সেসব ক্ষেত্রে উগ্রবাদের একমাত্র উপাদান এই বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে না। শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনায় যে ছাত্রটির কথা বলা হচ্ছে, সে আমাদের ছাত্র। তাকে আমরা অস্বীকার করতে পারছি না। আমরা খোঁজ করছি, কীভাবে সে এই পথে গেল। অনিয়মিত ছাত্রের কোন তালিকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ করেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মাত্র খুলেছে। বিভিন্ন বিভাগের কাছে এ বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। শীঘ্রই সমন্বিত তথ্য পাওয়া যাবে। নানা কারণে ছাত্ররা অনিয়মিত হন। পারিবারিক ব্যবসা, অসুস্থতা বা অর্থসংকটের কারণে এমনটা হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ছাড়া কোন ছাত্র আর সেমিস্টার গ্যাপ দিতে পারবে না। এর আগে নর্থ সাউথের ছাত্রত্ব বাতিলের সিদ্ধান্তের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, এক সেমিস্টার চার মাস। এই দীর্ঘ সময়ে একজন শিক্ষার্থী বিদেশ গিয়ে ট্রেনিং শেষে দেশে ফিরে অপকর্ম করে আবার ক্লাসে যোগ দিতে পারে। এদিকে এবার জঙ্গী কর্মকা-ে একাধিক শিক্ষার্থী জড়িয়ে পড়ার তথ্য প্রকাশ হওয়ার পরেও এখন পর্যন্ত ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। যদিও আইএসের মতো সংগঠনেও ওই প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষার্থীর জড়িয়ে পড়ার প্রমাণ মিলেছে। রহস্যজনকভাবে নীরব আছে জামায়াতের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান রাজধানীর মানারাত ইউনিভার্সিটি ও বাংলাদেশ ইসলামিক ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষও। এ দুটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়েই নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীর ও জামায়াতের সংগঠন শিবিরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি সক্রিয় আছে। বাংলাদেশ ইসলামিক ইউনিভার্সিটির মালিকানা আমৃত্যুকারাদ-প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর। এছাড়া জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ছে একাধিক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থীরাও। এমন অবস্থায় এ ধরনের সকল প্রতিষ্ঠানের দিকেই নজরদারি বৃদ্ধি করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির প্রতি আহ্বান জানিয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলেছেন, একটি প্রতিষ্ঠানের দিকে নজর দিলে সঙ্কটের সমাধান হবে না। নজর দিতে হবে অভিযুক্ত অন্য প্রতিষ্ঠানের দিকেও। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রগুলো বলছে, একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে জঙ্গী প্রশিক্ষণের তথ্য পাচ্ছে তারা। ঢাকা শহরে ওই স্কুলটির তিনটি শাখা (মোহাম্মদপুর, গুলশান ও উত্তরায়) রয়েছে। স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরের নেতা। মালিককে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এছাড়া অন্তত চারটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক ছাত্র র্দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকার তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দো সংস্থা। গুলশান এবং শোলাকিয়ায় হামলার পর চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়। তাদের নিখোঁজ থাকার বিষয়টি আরও তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সূত্র।
×