মাজহার মান্না, কিশোরগঞ্জ ॥ দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। ঈদের জামাতকে সামনে রেখে প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। পৌর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে মাঠ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নসহ সার্বিক সংস্কার কাজ শেষ করেছে। মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে নিশ্চিত করা হয়েছে ‘শোলাকিয়া স্পেশাল’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের। বিশাল মাঠে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মাঠ ও আশপাশের এলাকার মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। গতিবিধি পর্যবেক্ষণে স্থাপন কার হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। নামাজের উপযোগী করতে মাঠের বিভিন্ন জায়গায় ফেলা হয়েছে বালু। কাতারে নামাজের জন্য দাগ কাটা হয়েছে, বানানো হয়েছে পর্যাপ্ত অজুখানা। মাঠের মিম্বরে আলোকসজ্জা ও দৃষ্টিনন্দন সীমানা প্রাচীরে চুনকাম করা হয়েছে।
এবারও শোলাকিয়া মাঠ থেকে জামাত সরাসরি সম্প্রচার করবে বেশ কয়েকটি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল। এদিকে ঈদ-উল-ফিতরকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ইতোমধ্যে ঈদকে স্বাগত জানিয়ে বড় বড় তোরণ নির্মাণ, ব্যানারে সাজানো সড়ক দ্বীপ স্থাপন করা হয়েছে।
শোলাকিয়ার ঐতিহ্য অনুসারে ঈদের নামাজ শুরুর পাঁচ মিনিট আগে তিনটি, তিন মিনিট আগে দুইটি ও এক মিনিট আগে একটি শর্টগানের গুলি ফুটিয়ে জামাত আরম্ভের ঘোষণা দেয়া হয়। এ বছর ঈদ বর্ষাকালে হওয়ায় ময়দানের আশপাশে কোথাও যেন পানি না জমে সে জন্য পানি নির্গমনের দিকটিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
সকাল ১০টায় শোলাকিয়ায় ১৮৯তম ঈদ-উল-ফিতরের জামাতে ইমামতি করবেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলেম, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা ফরীদউদ্দীন মাসউদ।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান জানান, শোলাকিয়ায় বিশাল এবং ঐতিহ্যবাহী এ ঈদ জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চারস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়াসহ পুরো মাঠ ও আশপাশের এলাকাকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। অন্য বছরের মতো এ বছরও ঈদের দিন শহরের বিভিন্ন সড়ক ও মাঠের প্রবেশপথে কঠোর ট্রাফিক ব্যবস্থা থাকবে। মাঠের সার্বিক নিরাপত্তায় পোশাকী সিকিউরিটির পাশাপাশি র্যাব ও ছদ্মবেশে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন মাঠ ও মাঠের বাইরে দায়িত্ব পালন করবেন। কিশোরগঞ্জের প্রশাসক ও ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আজিমুদ্দিন বিশ্বাস জানান, দেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ শোলাকিয়ায় দেশ-বিদেশের মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করায় মাঠের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মুসল্লিরা যাতে দুর্ভোগে না পড়ে সেদিকে বিশেষ নজর রাখা হবে।
১৮২৮ সালে শোলাকিয়ায় ঈদের বড় জামাত অনুষ্ঠিত হলেও এর যাত্রা শুরু হয় ১৭৫০ সালে। মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ৬ষ্ঠ বংশদর দেওয়ান হযরত খানের উত্তরসূরি দেওয়ান মান্নান দাদ খান ১৯৫০ সালে চার দশমিক ৩৫ একর ভূমি শোলাকিয়া ঈদগাহে ওয়াকফ করে দেন। বর্তমানে এ জায়গার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাত একর। যা আগত মুসল্লিদের মাত্র অর্ধেকের বেশি ধারণ করতে পারে।
এ এলাকার পূর্বনাম ছিল রাজাবাড়িয়া। জনশ্রুতি আছে, ঈদগাহ মাঠে ১ম বড় জামাতে সোয়ালাখ লোক অংশ নিয়েছিলেন। যে কারণে এর নামকরণ করা হয় সোয়ালাকিয়া। ভিন্নমতে, মোঘল আমলে এখানকার পরগণার রাজস্বের পরিমাণ ছিল সোয়ালাখ টাকা। উচ্চারণগত কারণে এই ঈদগাহ মাঠ শোলাকিয়া নামে পরিচিতি লাভ করে।
মাঠের দৈর্ঘ্য পূর্ব পশ্চিমের দক্ষিণ পার্শ্ব ৯১৪ ফুট, উত্তর সীমারেখা ৭৮৮ ফুট। প্রস্থ উত্তর দক্ষিণে পশ্চিম সীমা রেখা ৩৩৫ ফুট ও পূর্ব সীমা রেখা ৩৬১ ফুট। মাঠের ভেতরে ২৬৫টি কাতার রয়েছে। মূল ঈদগাহে জায়গা সংকুলানের অভাবে মাঠের চারপাশের খালি জায়গা-জমি, ক্ষেত, বসতবাড়ির আঙ্গিনায় এবং রাস্তা-ঘাটে অগণিত মুসল্লিকে নামাজ আদায় করতে হয়। এতবড় জামাত চোখে না দেখলে বিশ্বাস করাই কঠিন। প্রতি বছরই এ জামাতের প্রতি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের আকর্ষণ বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় এর উন্নয়ন ও পরিধি বিস্তৃত হয়নি।