ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২০ মে ২০১৬

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ ঢাকা নিয়ে জরিপের শেষ নেই। আজ এই জরিপ, কাল ওই জরিপ এবং প্রতিটি জরিপেই পিছিয়ে থাকা শহর। ইতিবাচক কিছু উঠে আসছে না। বিশেষ করে পৃথিবীর অন্যান্য শহরের সঙ্গে তুলনামূলক বিচারে সহস্রগুণ পিছিয়ে থাকে এ মেগাসিটি। সর্বশেষ প্রমাণ- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন। সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত মেগাসিটির তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে ঢাকা! ৬৭ দেশের ৭৯৫ শহরে পরিচালিত জরিপ এ সত্যটি সামনে এনেছে। জরিপের বিশ্লেষণে বলা হয়, ১৪ মিলিয়ন বা তারও বেশি জনসংখ্যার শহরের ক্ষেত্রে তৃতীয় অবস্থানে আছে ঢাকা। ঢাকার উপরে মাত্র দুটি শহর। মিসরের রাজধানী কায়রো ও ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লী। ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত চলা জরিপের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। বর্তমান ঢাকার অবস্থা ওই সময়ের চেয়ে ভাল- এ কথা জোর দিয়ে বলা যাবে না। তবে হ্যাঁ, আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু ঘটনা ঘটছে। প্রিয় শহরকে বসবাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে নতুন নতুন উদ্যোগ নিচ্ছেন দুই মেয়র। ইট-সিমেন্টের জঞ্জাল হিসেবে যে বদনাম, তার বিপরীতে সবুজায়নের চেষ্টা হচ্ছে। এরই কাজ শুরু হয়েছে ‘গ্রীন ঢাকা’ নিয়ে। বিশেষ করে ফুটওভারব্রিজে সবুজের ছোঁয়া মন ভরিয়ে দেয়। দৃশ্যটা নতুন বটে। বিভিন্ন স্থানে এমন ব্রিজ দেখা যাচ্ছে। কাওরান বাজারের ফুটওভারব্রিজটি ক’দিন আগেও ছিল বিবর্ণ। জং ধরা। ডিজিটাল ব্যানার আর ছেঁড়া পোস্টারে মুখ ঢাকা থাকত সারা বছর। অথচ এখন নতুন রং করা ফুটওভারব্রিজে প্রাণের স্পর্শ। মূল অবকাঠামোর বাইরের অংশে পকেটের মতো কয়েকটি জায়গা তৈরি করা হয়েছে। সেসব জায়গা থেকে উঁকি দিচ্ছে সবুজ। একই দৃশ্য শাহবাগের নতুন ওভারব্রিজে। অনেক দূর থেকে দেখা যায়, ঝুলন্ত বাগান। ফুল-পাতারা বাতাসে সুন্দর দুলছে। দেখে কী যে ভাল লাগে! অবশ্য সুন্দর ধ্বংস করার লোকের অভাব নেই। কিছু রাজনীতির লোক এরই মাঝে পোস্টার ব্যানার লাগানো শুরু করে দিয়েছে। নতুন রং করা ফুটওভারব্রিজ পুরোটা সুন্দর নিয়ে দৃশ্যমান হতে না হতেই, শুরু হয়ে গেছে নষ্ট করার তোড়জোড়। ফার্মগেট এলাকা দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন সরকারী কর্মকর্তা আদেল আহমেদ। বৃহস্পতিবার সকালে সচিবালয়ের নির্ধারিত গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিছুক্ষণ পরপরই ফুটওভারব্রিজের দিকে তাকাচ্ছিলেন তিনি। তারপর বললেন, শহরের কিছু লোকের সৌন্দর্যের বোধটাই হলো না। এরা কা-জ্ঞানহীন। তা না হলে নতুন রং করা ওভারব্রিজের গায়ে কেউ এভাবে ব্যানার লাগিয়ে নির্লজ্জ প্রচারে নামতে পারে? ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হককে নিয়ে অনেক আশা। তিনিও সৌন্দর্য ধ্বংসকারীদের কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বলেছেন, আমরা ঢাকা নগরী সুন্দর করতে অনেক কাজ হাতে নিয়েছি। শোভাবর্ধনের জন্য ফুটওভারব্রিজে গাছ লাগিয়েছি। অথচ তার ওপর ব্যানার লাগানো হয়েছে। দেয়াল পরিষ্কার করে রং করেছি, তার ওপর পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। এমনকি গাছের গায়ে, ফ্লাইওভারের পিলারে পোস্টার লাগানো হচ্ছে। এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া হবে না। শহরবাসী আছেন মেয়রের পাশে। তারা বলছেন, সকল শুভ উদ্যোগে তারা মেয়রের পাশে থাকবেন। ঢাকার ঘটনা নয়। এরপরও গত কয়েক দিন ঘটনার প্রতিবাদে মুখর ছিল বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকা। সারাদেশের মতোই প্রতিবাদে ফুঁসছিল। একের পর এক কর্মসূচী পালন করেছে সাধারণ মানুষ। নারায়ণগঞ্জে চরম নির্যাতনের শিকার শিক্ষকের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারা। সারাজীবন মানুষ গড়ার কাজে ব্যয় করা পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে গত শুক্রবার নির্মমভাবে আক্রমণ করে কিছু জঙ্গী মানসিকতার লোক। উদ্ভট অভিযোগটির নামÑ ধর্ম নিয়ে কটূক্তি। না, কোন প্রমাণ নেই। কিন্তু সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াতে সময় লাগেনি। মুহূর্তেই তৎপর হয়ে ওঠে ধর্ম ব্যবসায়ীরা! সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমান ঘটান ন্যক্কারজনক ঘটনাটি। অভিযোগÑ নিরীহ শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কানে ধরে ওঠবস করতে বাধ্য করান তিনি। দৃশ্যটি ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচুর শেয়ার হয়। একজন শিক্ষকের প্রতি এমন নজিরবিহীন আক্রমণে হতভম্ব হয়ে যায় বিবেকবান মানুষ। তারাও কানে ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যান। শিক্ষার্থীরা তো বটেই, বুধবার এ কর্মসূচী পালন করেন রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল ও কলেজের শিক্ষকরা। প্রতিবাদের মধ্যেই শিক্ষককে বরখাস্ত করে স্কুলের পরিচালনা পর্ষদ। আর তারপর ভাল খবরটি। বৃহস্পতিবার সকালে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্কুল পরিচালনা পর্ষদ বাতিল ও লাঞ্ছনার শিকার শিক্ষককে স্বপদে বহাল করেন। এ খবরে সারাদেশের মতো স্বস্তি নেমে আসে ঢাকার মানুষের মাঝেও।
×