ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

দুই মন্ত্রীকে তলব করা হলো কিন্তু ক্যাডম্যানের ক্ষেত্রে নীরব কেন?

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৯ মার্চ ২০১৬

দুই মন্ত্রীকে তলব করা হলো কিন্তু ক্যাডম্যানের ক্ষেত্রে নীরব কেন?

আরাফাত মুন্না ॥ খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে সুপ্রীমকোর্টে তলবের বিষয়ে আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি শামসুল হুদা বলেছেন, দুই মন্ত্রীকে তলবের ফলে সন্দেহ আরও উজ্জীবিত হবে। ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলেছেন, ওই অনুষ্ঠানে আমরা আদালতের মর্যাদা ক্ষুণœ করিনি বরং আদালতের ভাবমূর্তি রক্ষায় পর্যালোচনা করেছি। ঘাতক দালাল নির্র্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, দুই মন্ত্রীর বক্তব্যের চেয়ে টবি ক্যাডম্যানের বক্তব্য বেশি আদালত অবমাননাকর। দুই মন্ত্রীকে তলবের আগে জামায়াতের আইনজীবী ও লবিস্ট টবি ক্যাডম্যানের বক্তব্যের প্রতিবাদ করা উচিত ছিল। মঙ্গলবার দুই মন্ত্রীকে তলবের পর জনকণ্ঠের কাছে তারা এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। বিচারপতি শামসুল হুদা জনকণ্ঠকে বলেন, একজন বিচারক হিসেবে নয়, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বলি, দুই মন্ত্রীকে আদালত অবমাননার অভিযোগে তলব না করলেই ভাল হতো। আদালত অবমাননার অভিযোগে দুই মন্ত্রীকে তলব করায় সন্দেহ আরও উজ্জীবিত হবে। তিনি আরও বলেন, বিচারকগণ সব সময় উদার। আশা করব, প্রধান বিচারপতি ও তার সহকর্মীরা উদারতার পরিচয় দেবেন। ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, ঘাতক দালাল নির্র্মূল কমিটির শনিবারের গোলটেবিলে যারা বক্তব্য দিয়েছেন, কেউ আদালত অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছে বলে আমি মনে করি না। তিনি বলেন, আমরা আদালতের বিরুদ্ধে কোন কথা বলিনি। ব্যক্তিগত পর্যালোচনার ক্ষোভ প্রকাশ করেছি। আদালতের ভাবমূর্তি যাতে নষ্ট না হয়, সে বিষয়ে পর্যালোচনা করেছি। আমরা যে যাই বলি না কেন, আদালত আদালতের কাজ করবে, এটাই স্বাভাবিক। যুদ্ধাপরাধ বিচার এগিয়ে চলছে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে, কোন সংস্থা বা ব্যক্তির ইচ্ছায় নয়, এ্যাটর্নি জেনারেলের এমন মন্তব্যের বিষয়ে মুনতাসীর মামুন বলেন, কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে নয়, জনগণের ম্যান্ডেটেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে নির্বাচিতদের তাদের দায়িত্বও পালন করতে হবে। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এই বিচারে সহযোগিতা না করলে, তা পরিপূর্ণ হতো না বলেও মন্তব্য করেন মুনতাসীর মামুন। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির জনকণ্ঠকে বলেন, দুই মন্ত্রীকে তলব করার আগে টবি ক্যাডম্যানের বক্তব্যের প্রতিবাদ করা প্রয়োজন ছিল। জামায়াতের আইনজীবী ও টবি ক্যাডম্যান বাংলাদেশের বিচার বিভাগ নিয়ে যে মন্তব্য করছেন, তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছে। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর এই বিচার ব্যবস্থা নিয়েই মন্তব্য করে যাচ্ছেন, যার প্রতিবাদ সুপ্রীমকোর্ট বা এ্যাটর্নি জেনারেল অফিস কেউ করেনি। তিনি আরও বলেন, টবি ক্যাডম্যানের বক্তব্যের প্রতিবাদ না করার, তা সত্য বলেই ধরে নেবে বহির্বিশ্ব। সুপ্রীমকোর্ট বা এ্যাটর্নি জেনারেল অফিস তার প্রতিবাদ না করাতেই আমাদের প্রতিবাদ করতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, দুই মন্ত্রী যে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছেন ওই অনুষ্ঠানে সব বক্তা প্রায় একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন, সেখানে আমরা যারা আয়োজক ছিলাম; অনুষ্ঠানের ধারণাপত্র উপস্থাপন করেছি। সুপ্রীমকোর্টের এক সাবেক বিচারপতি বক্তব্য দিয়েছেন। আরেক জনের পক্ষে তার বক্তব্য পড়ে শোনানো হয়েছে। দুই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের শহীদ পরিবারের সদস্যরা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত পরিবারের সদস্যরা ছিলেন। এটা তাদের সকলেরই বক্তব্য। এ জন্য একা দুই মন্ত্রীকে দায়ী করা ঠিক হবে বলে আমি মনে করি না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। দুই মন্ত্রীকে তলব করার আগে টবি ক্যাডম্যান ও জামায়াতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে আদালতের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। উল্লেখ্য, মীর কাশেম আলীর আপীল মামলা শুনানিকালে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবং তদন্ত সংস্থা যে গাফিলতি করেছে এ জন্য তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত। তিনি বলেন, আমরা রাষ্ট্রপক্ষের মামলা পরিচালনায় খুবই মর্মাহত। মামলার এভিডেন্স দেখলে, এগুলো পড়লে আমাদের খুব কষ্ট লাগে। মামলাগুলো যখন আমরা পড়ি তখন আমাদের গা ঘিন ঘিন করে তাদের মামলা পরিচালনা দেখে। সব মামলায় এটা হয়ে আসছে। এর পর প্রধান বিচারপতি এ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন, এত হাফ হার্টেড হয়ে আপনারা মামলা চালান কেন? প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, প্রসিকিউশন, তদন্ত সংস্থার পেছনে রাষ্ট্রের লাখ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু তারা এসব কী মামলা পরিচালনা করছে? ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা শুধু ব্যস্ত টিভিতে চেহারা দেখানো নিয়ে। তারা দামী দামী গাড়ি চড়েন আর পুলিশের হুইসেল দিয়ে ঘুরে বেড়ান। এরপর যুদ্ধাপরাধীদের আন্তর্জাতিক লবিস্ট টবি ক্যাডম্যান এই বিচার ব্যবস্থা নিয়ে আবারও প্রশ্ন তোলেন। এর পর ঘাতক দালাল নির্মূল কিমিটির ওই গোলটেবিল অনুষ্ঠানে দুই মন্ত্রী প্রধান বিচারপতিকে এই বেঞ্চ থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানান।
×