ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জে সাত খুন মামলা

সাক্ষীরা নিরাপদে সাক্ষ্য দিতে পারবে কিনা সন্দেহ পরিবারের

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সাক্ষীরা নিরাপদে সাক্ষ্য দিতে পারবে কিনা সন্দেহ পরিবারের

নিজস্ব সংবাদদাতা, নারায়ণগঞ্জ, ৯ ফেব্রুয়ারি ॥ নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সাত খুনে দায়ের করা দু’টি মামলায় প্রধান আসামি নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ আসামির বিরুদ্ধে সোমবার আদালতে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করায় নিহতের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনরা কিছুটা আশ্বস্ত হলেও এ মামলার সাক্ষীরা নিরাপদে সাক্ষ্য দিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে তারা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। সাত খুনে নিহতের পরিবার ও স্বজনরা জানান, যেহেতু এখন আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে। সেহেতু সাক্ষীরা যাতে নিরাপদে সাক্ষ্য দিতে পারেন সে ব্যবস্থা প্রশাসনকেই নিতে হবে। সাত খুনে নিহতদের স্বজনরা দ্রুত সকল আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করেন। জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে সোমবার প্রধান আসামি নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) তারেক সাঈদ, মেজর (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) এমএম রানাসহ ২৩ আসামির উপস্থিতি সর্বমোট ৩৫ আসামির বিরুদ্ধে সাত খুনে দায়ে করা দুটি মামলায় অভিযোগ গঠন করে। ১২ আসামি এখনও পলাতক। অভিযোগ গঠন হওয়ায় সাত খুনে নিহতের পরিবার ও তাদের আত্মীয়-স্বজনরা কিছুটা আশ্বস্ত হলেও এ মামলার সাক্ষীরা নিরাপদে সাক্ষ্য দিতে পারবেন কিনা এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। সাত খুন মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের জানান, এ মামলায় ১২৭ সাক্ষী রয়েছে। সাত খুনের দায়ের করা একটি মামলার বাদী ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নিহত নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি জানান, সাত খুন মামলার চার্জ গঠন হয়েছে। বিচার কার্য শুরু হচ্ছে। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে। সাক্ষীরা নিরাপদে সাক্ষ্য দিতে পারবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। তিনি প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, সাত খুন মামলার সাক্ষীরা যাতে নিরাপদে আদালতে সাক্ষ্য দিতে যেতে পারেন ও সাক্ষ্য দিয়ে তারা নির্ভয়ে বাড়িতে ফিরতে পারেন এ ব্যবস্থা তাদেরই নিতে হবে। কারণ সাক্ষ্যের ওপর নির্ভর করে এ মামলার রায় দেয়া হবে। আমরা ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা করছি। নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের জানান, আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্য দেয়ার দিন ধার্য করা হয়েছে। আসামিপক্ষরা টাকাওয়ালা লোক। তারা টাকা দিয়ে অনেক কিছুই করতে পারেন। তিনি আরও জানান, আমি আমার ছেলে তাজুলকে আর ফিরে পাব না। এখন আমাদের একটাই দাবি সেটা হচ্ছে সাত খুন মামলার ন্যায় বিচার পাওয়া। নিহত যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান স্বপনের ছোট ভাই মিজানুর রহমান রিপন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিহত পাঁচ পরিবারের উপস্থিতিতে আমাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, সাত খুন মামলার সুষ্ঠু বিচার হবে। তাই আমরা প্রধানমন্ত্রীর দিকেই তাকিয়ে আছি। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডের ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকা থেকে প্যানেল মেয়র ও ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার, নজরুলের বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন, যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান স্বপন, নজরুলের সহযোগী তাজুল ইসলাম, স্বপনের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক ইব্রাহিমকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল নজরুল ও চন্দন সরকারসহ ৬ জন ও ১ মে সিরাজুল ইসলাম লিটনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বাদী হয়ে একটি ও আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
×