ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

২০ জানুয়ারি থেকে কারা সপ্তাহ শুরু, উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৭:৫৬, ১৭ জানুয়ারি ২০১৬

২০ জানুয়ারি থেকে কারা সপ্তাহ শুরু, উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘এবারের অঙ্গীকার, কারাগার হোক সংশোধনাগার’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে প্রতিবারের ন্যায় এবারও উদযাপিত হতে যাচ্ছে ‘কারা সপ্তাহ ২০১৬’। আগামী ২০ থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী দেশের ৬৮ কারাগারে পালন করা হবে এ সপ্তাহ। শুধু শাস্তির স্থানই নয় কারাগারকে অপরাধীর সংশোধনাগার হিসেবে প্রতিষ্ঠাই এবারের মূল লক্ষ্য। সারাদেশে একযোগে সপ্তাহটি পালনের জন্য গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার প্রাঙ্গণে আয়োজিত এ কারা সপ্তাহের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া কারা কর্তৃপক্ষ ও র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) যৌথভাবে কারাবন্দীদের তথ্য নিয়ে একটি অপরাধী ডাটাবেজ তৈরি করছে। শনিবার বেলা সাড়ে এগারোটায় কারা অধিদফতরের সভাকক্ষে কারা সপ্তাহ-২০১৬ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কারা মহাপরিদর্শকের পক্ষে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মোঃ ফজলুল কবীর এসব কথা বলেন। এ সময় ডিআইজি প্রিজন্স (হেডকোয়ার্টার) ফজলুল হক, এআইজি এডমিন ও ফিন্যান্স, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবিরসহ কারা অধিদফতরের সকল কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বজনদের সঙ্গে আটক কারাবন্দীরা মোবাইল ফোনে নির্দিষ্ট দুটি নাম্বারে কথা বলার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে কর্নেল কবীর বলেন, কারা সপ্তাহ উদযাপনের উদ্দেশ্য হিসেবে থাকছে কারাগারকে সংশোধানাগারে রূপান্তর করা, প্রথমবারের মতো কারারক্ষী থেকে শুরু করে সকল উর্ধতন কারা কর্মকর্তাকে নির্দিষ্ট পোশাক ও র‌্যাংক ব্যাজ প্রবর্তন করা, কারাভ্যন্তরে সেবার মান আগের চেয়ে অনেকাংশে বৃদ্ধি, কারাগার সম্পর্কে চলমান নেতিবাচক ধারণার পরিবর্তন, কারা কর্মকর্তা এবং কারাবন্দী ও তাদের আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে মতবিনিময়ের মাধ্যমে সেতুবন্ধ সৃষ্টি, কারা কর্মচারীদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন, কারা বিভাগে জনবল বৃদ্ধিসহ গত বছরের প্রধানমন্ত্রীর নিজের ও কারা বিভাগের পক্ষ থেকে গৃহীত সকল প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা। সারাদেশে ৬৮ কারাগারে থাকবে সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রম। এছাড়া জেল সুপার ও জেলারদের সঙ্গে বৈঠক, সকল কারাগারে সপ্তাহব্যাপী তথ্য ও সেবাকেন্দ্র পরিচালিত হবে। যেখান থেকে সকল বন্দীর আত্মীয়স্বজন ও সাধারণ নাগরিক কারাগার সম্পর্কে বিভিন্ন প্রকার জানা অজানা ও প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারবেন। এছাড়া স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী, কারারক্ষী ও কারাবন্দীদের বিশেষ দরবার অনুষ্ঠিত হবে, কারা কর্মচারীদের মাঝে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের পাশাপাশি কারারক্ষীদের বিশেষ প্যারেড অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া কারাবন্দীদের মাঝেও প্রতিযোগিতামূলক নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কারাবন্দীদের মাধ্যমে উৎপাদিত নানা পণ্যের মেলার আয়োজন, কারাবন্দীদের জন্য বিশেষ প্রীতিভোজের আয়োজন করা হবে। কারাগারকে সংশোধনাগার হিসেবে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে কর্নেল কবীর বলেন, বন্দীদের সাজা কার্যকরের পাশাপাশি তারা যেন কারাগার থেকে বেরিয়ে পুনরায় অপরাধে জড়িয়ে না পড়ে সেই উদ্দেশ্য সামনে রেখেই তাদের সংশোধনের মাধ্যমে স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে সমাজে পুনর্বাসনে ইতোমধ্যেই কারা প্রশাসন বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এছাড়া সমাজে কারাবন্দীদের সাজা শেষে প্রতিষ্ঠিত করতে কারাভ্যন্তরেই কর্মমুখী বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। বন্দীরা কারাগার থেকে বেরিয়ে এসব প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন। যা সংশোধনাগারের অংশ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, কারাবন্দীদের তথ্য সংরক্ষণের জন্য একটি ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। কারা অধিদফতর ও র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) যৌথভাবেই এই ডাটাবেজ তৈরির কাজ করছে। যার প্রধান তথ্য সার্ভার থাকবে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে। এর মাধ্যমে কোন বন্দী যে কোন অপরাধে এর আগে কারাগারে প্রবেশ করেছে কি না বা করে থাকলে কি অপরাধে তার সম্পূর্ণ তথ্য দেখা যাবে। যা অপরাধ কমাতে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া ডাটাবেজ তৈরির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কারা বন্দীদের তথ্য সংগ্রহ করা। এতে করে একজন বন্দী সম্পর্কে পরিপূর্ণ তথ্য জানা যাবে। কারাগারকে সংশোধনাগার হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ হিসেবে কারা বন্দীদের মানসিক উন্নয়নের জন্য মনোবিজ্ঞানী নিয়োগের বিষয়ে আবেদন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সারাদেশে মোট ১২ জন মনোবিজ্ঞানী পদের বিপরীতে লোক নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। মনোবিজ্ঞানীদের মাধ্যমে ট্রেনিং দিয়ে বন্দীদের মানসিক উন্নয়ন সাধন সম্ভব। এছাড়াও বন্দীদের মানসিক উন্নয়নে বিভিন্ন ট্রেনিং ও কর্মশালার ব্যবস্থা রয়েছে। যাতে কারাগার থেকে বের হওয়ার পর তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে কাজ করতে পারে। এই লক্ষ্যে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার-২ এ কারাবন্দীদের জন্য একটি মানসিক উন্নয়ন স্কুল তৈরি করা হয়েছে।
×